হার, হার, হার এবং হারে ত্রিদেশীয় সিরিজ শেষ বাংলাদেশের
ত্রিদেশীয় সিরিজ জিততে নয়, ভালো ক্রিকেট খেলতে নিউজিল্যান্ডে গিয়েছিল বাংলাদেশ। মূলত সিরিজটাকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে নিয়েছিল তারা। কিন্তু পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি করে মোট চারটি ম্যাচ খেলা বাংলাদেশের ভালো ক্রিকেট খেলা হয়নি। শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে লিটন দাস ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ব্যাটে লড়াকু সংগ্রহ গড়লেও তা যথেষ্ট হলো না। ধারহীন বোলিং ও ফিল্ডিং মিসের মহড়ায় আরেকটি হার মেনে নিতে হলো। টানা চার হারে ত্রিদেশীয় সিরিজ শেষ হলো বাংলাদেশের।
বৃহস্পতিবার ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলে ওভালে নিজেদের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। এই ম্যাচে তবু শেষ ওভার পর্যন্ত লড়েছে বাংলাদেশ, আগের তিন ম্যাচেও সেটাও করতে পারেনি সাকিব আল হাসানের দল। সব মিলিয়ে টানা হারের বোঝা নিয়েই অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে যেতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। ত্রিদেশীয় সিরিজে ফাইনালে শুক্রবার মুখোমুখি হবে পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। শুরুটা চেরম অগোছালো হলেও সেই অবস্থা কাটিয়ে অসাধারণ ব্যাটিং করেন লিটন ও সাকিব। তাদের হাফ সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটে ১৭৩ রান তোলে বাংলাদেশ। যা টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। জবাবে বাবর আজম ও ম্যাচসেরা মোহাম্মদ রিজওয়ানের উদ্বোধনী জুটিতে জয়ের ভীত পেয়ে যায় পাকিস্তান। পরে মোহাম্মদ নওয়াজের ঝড়ো ইনিংসে এক বল বাকি থাকতে জয় নিশ্চিত হয় তাদের।
জয়ের লক্ষ্য ব্যাটিং করতে নেমে ধীর স্থির ব্যাটিং করতে থাকলেও দলকে জয়ের ভিত গড়ে দেন রিজওয়ান ও অধিনায়ক বাবর। উদ্বোধনী জুটিতে ১২.৩ ওভারে ১০১ রানের জুটি গড়েন তারা। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ২৯তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া বাবর ৪০ বলে ৯টি চারে ৫৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে হাসান মাহমুদের শিকারে পরিণত হন।
বাংলাদেশের কোনো বোলারই যখন কিছু করতে পারছিলেন না, তখনই কাণ্ডারীর ভূমিকায় দেখা দেন হাসান। ডানহাতি তরুণ এই পেসার বাবরকে ফেরানের ওভারেই হায়দার আলীর উইকেট তুলে নেন। বাবরের আগে ফিরে যেতে পারতেন রিজওয়ানও। কিন্তু ১১তম ওভারে ব্যক্তিগত ৩২ রানে পাকিস্তান সহজ ক্যাচ দিলেও মিস করেন সাইফউদ্দিন।
পরের ওভারে বল হাতেও দলকে বিপদে ফেলেন সাইফউদ্দিন। অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ১৯ রান খরচা করেন ডানহাতি এই পেসার। জীবন পাওয়া রিজওয়ান ক্রমেই হাত খুলে খেলতে শুরু করেন, তার সঙ্গে যোগ দেন তাণ্ডব চালানো নওয়াজ। ১৫তম ওভারে সাকিব ১৭ রান খরচা করলে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে যায় বাংলাদেশ। তবু সম্ভাবনা জেগেছিল, শেষ ওভারে ৮ রান দরকার পড়ে পাকিস্তান। এক বল হাতে রেখে যা তুলে নেন নওয়াজ ও আসিফ আলী। রিজওয়ান ৫৬ বলে ৪টি চারে ৬৯ রান করেন। নওয়াজ ২০ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ৪৫ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন। আসিফ ২ রানে অপরাজিত থাকেন।
ম্যাচটি আরও কঠিন হতে পারতো পাকিস্তানের জন্য। কিন্তু ধারহীন বোলিং, ক্যাচ মিসের পাশাপাশি গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়েও ভালো ছিলো না বাংলাদেশ। তৎপর থাকলে অনেকগুলো ২ রান হতো না। ৩.৫ ওভারে সবচেয়ে বেশি ১৩.৮২ ইকোনমিতে ৫৩ রান খরচায় উইকেটশূন্য থাকেন সাইফউদ্দিন। তাসকিন ৪ ওভারে ৩২ ও শরিফুল ৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি।
সাকিবও ছিলেন খরুচে, ৩ ওভারে ২৮ রান দিলেও পাকিস্তান শিবিরে আঘাত হানতে পারেননি তিনি। একমাত্র ব্যতিক্রম হাসান ৪ ওভারে ২৭ রানে ২ উইকেট নেন। অবশ্য সৌম্যও ১৯তম ওভারটি খারাপ করেননি। এই ওভারে ৬ রানে এক উইকেট নেন তিনি। শেষ ওভারটি করেন সাউফউদ্দিন। কিন্তু তার করা পাঁচ বলের কোনোটি খেলতে সমস্যা হয়নি নওয়াজ-আসিফদের।
এর আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশের চরম হতাশার শুরু হয়। পাকিস্তানের পেসার নাসিম শাহর করা প্রথম ওভার থেকে কোনো রান তুলতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। এক রান আসে ওয়াইড থেকে। দীর্ঘদিন পরে দলে ফেরা সৌম্য সরকার প্রথম বলেই ৩ রান নিলেও হতাশ করে সাজঘরে ফেরেন। ৪ বলে ৪ রান করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান বাজে শটে ক্যাচ তুলে আউট হন।
শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ সৌম্যকে হারিয়ে আরও বিপদে পড়ে। ৩ ওভারে মাত্র ১০ রান তোলে তারা। চতুর্থ ওভারে গিয়ে অবস্থার পরিবর্তন আসে। মোহাম্মদ ওয়াসিমের করা প্রথম বলেই চার মারেন লিটন। তবে এই শটটি খেলার সময়ে উরুতে টান পড়ে তার, মাঠে হাজির হন ফিজিও। অবশ্য চিকিৎসা নিয়ে আবার ব্যাটিং শুরু করেন লিটন। এই ওভারে আরও একটি চারসহ মোট ১০ রান তোলেন তিনি।
৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২০। একেবারেই ধীর শুরু করা শান্ত পঞ্চম ওভারে গিয়ে চড়াও হন। নবম বলে প্রথম রান নেওয়া বাংলাদেশ ওপেনার হাসনাইনকে চার মেরে শুরু করেন। পরের বলে এক রান নিয়ে লিটনকে স্ট্রাইক দিলে ঝড় তোলেন তিনি। টানা দুই চার মারেন লিটন। এই ওভারের শেষ বলে জীবন পান লিটন। ২২ রানে তিনি ক্যাচ তুললেও পয়েন্টে দাঁড়ানো শান মাসুদ তা তালুবন্দী করতে পারেননি।
পাওয়ার প্লের ৬ ওভার থেকে ৪১ রান পায় বাংলাদেশ। শান্তর বিদায়ের পর দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন লিটন ও সাকিব। অষ্টম ওভারে মোহাম্মদ নওয়াজের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে ১৭ রান তুলে নেন তারা। দারুণ ব্যাটিংয়ে তৃতীয় উইকেটে ৫৫ বলে ৮৮ রান যোগ করেন লিটন-সাকিব। তাদের দারুণ ব্যাটিংয়ে ১২.১ ওভারে ১০০ পূর্ণ হয় বাংলাদেশের। এর মধ্যে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন। ৩১ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ৫০ পূর্ণ করেন তিনি।
দলীয় ১২৯ রানে লিটন বিদায় নেন। ফেরার আগে ৪২ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৯ রানের চোখ ধাঁধানো এক ইনিংস খেলেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতে এটাই তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। লিটনের বিদায়ের পর সাকিবের ব্যাটেই এগিয়েছে বাংলাদেশ। দারুণ সব শটে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বাদশ হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ৪২ বলে ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬৮ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন।
আফিফ হোসেন ধ্রুব ১১ রান করেন। শেষ দিকে রানের ধারায় থাকতে পারেনি বাংলাদেশ। না হলে সংগ্রহটা আরও বড় হতে পারতো, তাতে ফলও হতে পারতো ভিন্ন। শেষ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৩ রান তোলে বাংলাধেশ। আগের দুই ওভার মনমতো না হলেও ৯ রান করে আসে। কিন্তু শেষ ওভারে শুধুই হতাশা মেলে। লিটন-সাকিবের ব্যাটে দারুণ ছন্দে এগোনো বাংলাদেশ শেষ ৩ ওভারে তোলে ২১ রান। পাকিস্তানের নাসিম শাহ ও মোহাম্মদ ওয়াসিম ২টি করে উইকেট নেন। একটি উইকেট পান মোহাম্মদ নওয়াজ।