টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা মাহমুদউল্লাহর
দল থেকে বাদ পড়া আবার দলে ফেরা। ২০২১ সালে টেস্ট দলে ফিরে সেঞ্চুরি করে এক প্রকার অভিমান থেকেই দীর্ঘতম ফরম্যাটকে বিদায় বলে দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। যদিও ধোঁয়াশা থেকে যায়, যা বেশ পরে পরিষ্কার করেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। তবে এবার আর কোনো অস্পষ্টতা নয়, সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়ে বিদায় বললেন আরেকটি ফরম্যাটকে। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী মাহমুদউল্লাহ।
কাল, ৯ অক্টোবর দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামের সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এই ম্যাচের আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে অবসরের ঘোষণা দেন মাহমুদউল্লাহ। আগামী ১২ অক্টোবর হায়দরাবাদে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি হবে এই ফরম্যাটে তার শেষ ম্যাচ। টেস্টের মতো টি-টোয়েন্টিতেও বিদেশের মাটি থেকে বিদায় নিলেন তিনি। সিরিজটা যেন বিদায়ের মঞ্চ হয়ে উঠেছে। পুনে টেস্টের আগে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ছাড়ার ঘোষণা দেন সাকিব আল হাসান।
মাহমুদউল্লাহর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সঙ্গী হিসেবে থেকে গেলো কেবল ওয়ানডে, এই ফরম্যাটে আরও কিছুদিন খেলা চালিয়ে যেতে চান তিনি। অবসর নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক বলেন, 'হ্যাঁ, আমি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি। এই সিরিজ শেষে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিচ্ছি আমি। এই সিরিজ খেলতে আসার আগেই আমি এটা ঠিক করে রেখেছিলাম।'
'পরিবারের সঙ্গে এটা নিয়ে আমার কথা হয়, এখানে আমি কথা বলি আমার কোচ ও অধিনায়কের সঙ্গে। নির্বাচক এবং বোর্ড সভাপতিকেও আমি আমার সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। আমি মনে করি, এটাই সঠিক সময় এই সংস্করণ থেকে সরে গিয়ে সামনে ওয়ানডে যা আছে, সেদিকে মনোযোগ দেওয়ার। আমার জন্য এবং পরের (টি-টোয়েন্টি) বিশ্বকাপের কথা যদি ভাবি, দলের জন্যও এটাই সঠিক সময়।' যোগ করেন তিনি।
২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু মাহমুদউল্লাহর। জুলাইয়ে কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে বাংলাদেশ দলে অভিষেক হয় তার। মাস খানেক পরই নাইরোবিতে কেনিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় হয় মাহমুদউল্লাহর। এই ফরম্যাটের দীর্ঘ সফরে ১৩৯টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি, যা বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।
টি-টোয়েন্টিতে ১২৮ ইনিংসে ব্যাটিং করে ৮টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ২৩.৪৮ গড় ও ১১৭.৭৪ স্ট্রাইক রেটে ২ হাজার ৩৯৫ রান করেছেন মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ৭৮ ইনিংসে বোলিং করেছেন তিনি, শিকার করেছেন ৪০ উইকেট। সংক্ষিপ্ততম এই ফরম্যাটে তার চেয়ে বেশি উইকেট আছে আটজন বোলারের।
দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টি-টোয়েন্টি খেলা মাহমুদউল্লাহ এই ফরম্যাটে অধিনায়কত্বও করেছেন সর্বোচ্চ ম্যাচে। ৪৩টি ম্যাচে নেতৃত্ব দেন তিনি, এর মধ্যে বাংলাদেশ জেতে ১৬টি ম্যাচে। অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের সমান ম্যাচে জয়ের হাসি হেসেছেন মাহমুদউল্লাহ, তবে সাকিব তার চেয়ে কম ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার টি-টোয়েন্টিতে ৩৯ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেন।
টি-টোয়েন্টিতে মাহমুদউল্লাহর সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, ২০১২ সালে মিরপুরে ৪৮ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৬৪ রানের ইনিংস খেলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ২০২১ সালে মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১ ওভারে ১০ রানে ৩ উইকেট নেন মাহমুদউল্লাহ, এটা তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। ব্যাট-বলের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও অবদান রেখেছেন মাহমুদউল্লাহ। ১৭ বছরের লম্বা ক্যারিয়ারে ৫০টি ক্যাচ নিয়েছেন তিনি, যা দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ।