অস্বস্তির সব রেকর্ডে বিশ্বকাপ মিশন শেষ কাতারের, শেষ ষোলোয় ডাচরা
পরাশক্তি না হলেও আয়োজক হিসেবে কাতারের ওপর প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি সেসবের কিছুই পূরণ করতে পারলো না। ঘরের মাঠের বিশ্ব আসরে হারে শুরু, হারেই বসবাস; হারই অমোঘ নিয়তি হয়ে থাকলো কাতারের জন্য। প্রথম দুই ম্যাচে বিশেষ সুবিধা করতে না পারা কাতার তৃতীয় ম্যাচেও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে লড়াই করতে পারলো না। দাপুটে জয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করলো ডাচরা।
মঙ্গলবার আল বাইত স্টেডিয়ামে 'এ' গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ২-০ গোলে হেরেছে কাতার। সাত পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের রাউন্ডে উঠলো কমলারা। অন্যদিকে তিন হার দিয়ে শেষ হলো কাতারের প্রথম বিশ্বকাপ মিশন। এই হারে আরও একটি বিব্রতকর রেকর্ডে নাম উঠেছে কাতারের। বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম আয়োজক দেশ হিসেবে গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচ হারলো তারা।
এর আগে আরও তিনটি অস্বস্তির রেকর্ডে নাম ওঠে কাতারের। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ইকুয়েডরের বিপক্ষে ২-০ গোলে হারে স্বাগতিকরা, যা ছিল বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম। কাতারের আগে কোনো স্বাগতিক দেশ তাদের প্রথম ম্যাচে হারেনি। দ্বিতীয় ম্যাচে সেনেগালের বিপক্ষে ৩-১ গোলে হেরে বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম আয়োজক দেশ হিসেবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদায় নেয় কাতার। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার পর দ্বিতীয় দল হিসেবে পরের রাউন্ডে যেতে ব্যর্থ হয় তারা।
ম্যাচের পুরোটা সময় দাপট জারি রেখে খেলে নেদারল্যান্ডস। বল দখল, আক্রমণ সাজনোয় অনেক এগিয়ে ছিল তারা। ৬৩ শতাংশ সময় বল নিজেদের পায়ে রাখে ডাচরা। টানা আক্রমণে গোলমুখে ১৩টি শট নেয় তারা, এর মধ্যে ৪টি ছিল লক্ষ্যে। কাতারের নেওয়া ৫টি শটের ৩টি ছিল লক্ষ্যে, কিন্তু কাঙ্খিত জালের টিকানা মেলেনি।
ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই আক্রমণে যায় নেদারল্যান্ডস। বাঁ পাশ দিয়ে আক্রমণে গিয়ে মেম্ফিস ডিপাইকে বল বাড়ান ডেভি ক্লাসেন। ডি-বক্সে শট নেওয়ার চেষ্ট করেন ডিপাই, কিন্তু জটলা বেধে যায়। এর মাঝে এগিয়ে দলকে বিপদমুক্ত করেন কাতারের গোলরক্ষক মিশাল বার্ষাম।।
১৫তম মিনিটে বা প্রান্ত থেকে বল পান ফ্রাঙ্কি ডি ইয়ং। কাতারের একজনকে কাটিয়ে গোলমুখে শট নেন বার্সা তারকা। তার নেওয়া শট নিজেদের খেলোয়াড়ের গায়ে লেগেই ফিরে আসে। ফিরতি বলে ডি-বক্স থেকে জোরালো শট নেন ডিপাই, কিন্তু তার নেওয়া শট বোরপোস্টের অনেক ওপর দিয়ে চলে যায়। ১৯তম মিনিটে ডিপাইয়ের কর্নারে ক্লাসের নেওয়া হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
দাপট জারি রেখে খেলতে থাকে নেদারল্যান্ডস, ২৬তম মিনিটে মেলে জালের ঠিকানা। বাঁ পাশ দিয়ে গোছালো আক্রমণে ক্লাসের বল বাড়ান কোডি গাকপোকে। বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডি-বক্সের মুখে থেকে ডান পায়ের জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন ডাচ তরুণ এই স্ট্রাইকার। চলতি বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের হয়ে টানা তিন ম্যাচেই গোল করলেন তিনি।
২৯তম মিনেটে পাল্টা আক্রমণে যায় কাতার। স্বাগতিক দেশটির রাইট উইঙ্গার ইসমাইল মোহামেদ ডি-বক্সের বাইরে থেকেই গোলমুখে শট নেন, কিন্তু তার দুর্বল শট এর শট সহজেই ধরে ফেলেন নেদারল্যান্ডসের গোলরক্ষক আনদ্রিয়েস নোপার্ট। গোল হজম করা কাতার আক্রমণের ধার বাড়ায়, কিন্তু ডাচদের রক্ষণে গিয়েই বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে তারা। পিছিয়ে থেকেই প্রথামার্থ শেষ করে কাতারে।
বিরতি থেকে ফিরে গোলশোধে মরিয়া হয়ে ওঠে কাতার, নেদারল্যান্ডসের রক্ষণে হানা দিতে থাকে তারা। কিন্তু স্বাগতিকদের আক্রমণ সামলে ৪৯তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে নেদারল্যান্ডস। ডান প্রান্ত থেকে ক্লাসেন ক্রস বাড়ান ডি-বক্সে। বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে শট নেন ডিপাই। কিন্তু তার শট শরীর দিয়ে ফেরান কাতার গোলরক্ষক। ফিরতি বলে শট নিয়ে অনায়াসে গোল করেন ডি ইয়ং।
৬৮তম মিনিটে তৃতীয়বারের মতো কাতারের জালে বল পাঠায় ডাচরা। কিন্তু কাগপোর হাতে বল লাগায় ভিএরআরের সাহায্য নিয়ে গোলটি বাতিল করেন রেফারি। ৭৪তম মিনিটে ডি-বক্সে ঢুকে ২২ এর নেওয়া শট কাতারের এক খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে জালে জড়িয়ে যাচ্ছিল, ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ফেরান গোলরক্ষক বার্ষাম। ৮০তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে ডি-বক্সে ঢুকে শট নেন আফিফ, প্রতিহত করেন নোপার্ট। যোগ করা সময়ে (৯০+২) ব্যবধান আরও বাড়াতে পারতো নেদারল্যান্ডস। কিন্তু স্টিফেন বারগুইসের শট বারে লেগে ফিরে আসে।