সাত বছর পর ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ হার বাংলাদেশের
যে লক্ষ্য ছিল, তা রীতিমতো রান পাহাড়। সেই পাহাড় টপকে জিততে হলে বাংলাদেশকে রেকর্ড গড়তে হতো। কিন্তু বিশাল লক্ষ্য পাড়ি দিতে নেমে ইংল্যান্ডের পেসার স্যাম কারানের বোলিং তোপে শুরুতেই দিশেহারা বাংলাদেশ। এরপর হতাশার গল্পের মাঝে তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা কিছুটা লড়াই করতে পারলেন। যদিও তা যথেষ্ট হলো না, লক্ষ্য থেকে গেল বহু দূরেই। গড়পড়তা বোলিংয়ের পর ব্যাট হাতে অসহায় আত্মসমর্পণে মেনে নিতে হলো বিশাল হার।
শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩২ রানে বড় ব্যবধানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। এই হারে এক ম্যাচ আগেই সিরিজ হয়ে গেল ইংল্যান্ডের। থামলো ঘরের মাঠে ওয়ানডে বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের রথও। ২০১৬ সালের পর, অর্থাৎ সাত বছর পর ঘরের মাঠে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ হারলো বাংলাদেশ।
সাত বছর আগের সেই সিরিজ হারও ছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এরপর টানা সাতটি ওয়ানডে সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। কিন্তু সেই ইংল্যান্ডেই আবার থামতে হলো তামিম-সাকিবদের। আরও একটি জায়গায় শাসন থামলো বাংলাদেশের। ২০১৪ সালের পর প্রথমবারের মতো সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ হারলো বাংলাদেশ।
ওয়ানডেতে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ ঘরের মাঠে আরও বেশি শক্তিশালী। কিন্তু কেবল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেই হারায় বাংলাদেশ। এই সিরিজের আগে ১৪টি সিরিজের মধ্যে ১৩টিতে জেতে বাংলাদেশ, একমাত্র সিরিজ হার এই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ২০১৬ সালে ঘরের মাঠে ইংলিশদের বিপক্ষে সিরিজ হারের আগে টানা ছয় সিরিজ জেতে বাংলাদেশ, পরে জেতে সাতটা। আবারও সেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই সিরিজ খোয়াতে হলো তামিমদের।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে ইংল্যান্ড। ম্যাচসেরা জেসন রয়ের সেঞ্চুরির পর অধিনায়ক জস বাটলার, মঈন আলী ও স্যাম কারানের ব্যাটে ৭ উইকেটে ৩২৬ রান তোলে ইংলিশরা। সর্বশেষ ২০১৬ সালে কোনো দল মিরপুরে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩০০'র বেশি রান করেছিল। সেই ইনিংসটিও ইংল্যান্ডের, ৮ উইকেটে ৩০৯ রান তুলেছিল তারা।
বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই কারানের আগুনে বোলিংয়ের মুখে পড়তে হয় বাংলাদেশকে, কিছু বুঝে ওঠার আগেই হারিয়ে বসতে হয় তিন উইকেট। এরপর সাকিব-তামিমের জুটি আশা দেখালেও তা হতাশায় পরিণত হতে সময় লাগেনি। এরপর মাহমুদউল্লাহ, আফিফ ও পেসার তাসকিনের ব্যাটে কিছুটা লড়াই করে বাংলাদশ, তাতে অবশ্য হারের ব্যবধান কমে মাত্র। ৪৪.৪ ওভারে ১৯৪ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশের শুরুটা হয় দুঃস্বপ্নের মতো। স্যাম কারানের আগুনে পুড়ে ছাড়খার হয়ে যায় বাংলাদেশের টপ অর্ডার। ইনিংসের প্রথম ওভারেই লিটন কুমার দাস ও নাজমুল হোসেন শান্তকে ফেরানো বাঁহাতি এই পেসার নিজের পরের ওভারে মুশফিকুর রহিমকে তৃতীয় শিকারে পরিণত করেন। ৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে অন্ধকারে পড়ে দলকে ঠিক পথে ফেরানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন তামিম ও সাকিব।
চাপ কাটিয়ে জুটি গড়ে তোলেন তারা, চতুর্থ উইকেটে ৭৯ রানের জুটি গড়েন অভিজ্ঞ এই দুই ক্রিকেটার। এ দুজনের দৃঢ়তায় অবস্থার উন্নতি হয়, স্কোরকার্ডে জমা হতে থাকে রান। কিন্তু তাদের ব্যাটে যখন স্বপ্ন উঁকি দিতে শুরু করে, তখনই আসে বিপদ। তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন তামিম। ফেরার আগে একেবারে ধীর গতিতে ৬৫ বলে ৪টি চারে ৩৫ রান করেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক।
তামিমের সঙ্গে ৭৯ রানের জুটি গড়ে ইনিংসের চেহারা অনেকটাই পাল্টে দেওয়া সাকিব এরপর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫১তম হাফ সেঞ্চুরি করে বিদায় নেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। ৬৯ বলে ৫টি চারে ৫৮ রান করে স্যাম কারানের চতুর্থ শিকারে পরিণত হন সাকিব। এরপর আফিফ হোসেন ধ্রুবকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি আফিফ। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ৩৩ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২৩ রান করে আউট হন।
সাকিব ও আফিফের সঙ্গে তিরোশোর্ধ জুটি গড়া মাহমুদউল্লাহও কিছুক্ষণ পর থামেন। ৪৯ বলে ৩টি চারে ৩২ রান করেন তিনি। এরপর পেসার তাসকিন আহমেদই যা রান করেন। প্রথম ওয়ানডের মতো এই ম্যাচেও ইনিংসের সর্বোচ্চ ১০০.০০ স্ট্রাইকট রেটে ২১ বলে ৪টি চারে ২১ রান করেন তিনি। বাংলাদেশের ইনিংস ধসিয়ে দেওয়া কারান ৬.৪ ওভারে ২৯ রানে ৪টি উইকেট নেন। ১০ ওভারে ৪৫ রানে ৪টি উইকেট লেগ স্পিনার আদিল রশিদও। একটি উইকেট পান মঈন আলী।
এর আগে ব্যাটিং করতে নামা ইংল্যান্ডের শুরুও ভালো ছিল না। শুরুতেই ফিল সল্টকে ফিরিয়ে দেন তাসকিন। যদিও তা খুব একটা কাজে আসেনি। জেসন রয় এক পাশ আগলে ব্যাট চালাতে থাকেন। ১০০ পেরোনোর আগে আরও দুটি উইকেট হারায় ইংল্যান্ড, তাতেও সমস্যা হয়নি। রয় তুলে নেন সেঞ্চুরি, জস বাটলার করেন হাফ সেঞ্চুরি। পরে মঈন আলীও দ্রুত রান তোলেন, শেষ দিকে ঝড় বইয়ে দেন কারান।
১২৪ বলে ১৮টি চার ও একটি ছক্কায় ১৩২ রানের ঝলমলে এক ইনিংস খেলেন ১২তম সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া রয়। ৬৪ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৬ রান করেন বাটলার। মঈন ৩৫ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪২ রান করেন। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ১৯ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩৩ রান করেন কারান। এ ছাড়া ফিল সল্ট ৭, ডেভিড মালান ১১, জেমস ভিন্স ৫, উইল জ্যাকস ১ ও আদিল রশিদ অপরাজিত ৬ রান করেন। তাসকিন ১০ ওভারে ৬৬ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন। মিরাজ ১০ ওভারে ৭৩ রানে পান ২টি উইকেট। একটি করে উইকেট পান সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলাম।