স্বাধীনতা দিবসে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের ভিডিও থেকেও বাদ ইমরান, সমালোচনার ঝড়
সোমবার (১৪ আগস্ট) ছিল পাকিস্তানের ৭৬তম স্বাধীনতা দিবস। এই দিনটি উপলক্ষে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) একটি ভিডিওতে ক্রিকেটে পাকিস্তানের অর্জন ও গৌরবের মুহূর্তগুলো তুলে ধরে। কিন্তু এই ভিডিও থেকে বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খানকে বাদ দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানিরা।
ইমরান খানের হাত ধরেই পাকিস্তান ১৯৯২ সালে তাদের প্রথম ও একমাত্র বিশ্বকাপটি জেতে। তিনি ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা খেলোয়াড়দের একজন বলে বিবেচিত। কিন্তু তবুও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ভিডিওটিতে কেন ইমরানের জায়গা হয়নি তা নিয়ে বয়ে যাচ্ছে সমালোচনার ঝড়।
টুইটারে ভিডিওটি পোস্ট করার সাথেসাথেই ইমরান খানকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি নজরে আসে ভক্তদের। ভক্তরা পিসিবিকে দেশের ক্ষমতাসীনদের 'রাজনৈতিক এজেন্ডা' মেনে নেওয়ার এবং ভিডিওতে ১৯৯২ সালে দলের বিশ্বকাপ জয়ের অংশ দেখানো হলেও তাতে ইমরান খানকে না রাখার তীব্র সমালোচনা করেছেন।
এই ভিডিওতে রয়েছে ১৯৫২ সালে পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। এরপর ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জয়। ২০০০ এবং ২০১২ এশিয়া কাপ জয়ের ভিডিও-ও রয়েছে। ভিডিওতে পাকিস্তান দলের ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জয় এবং ট্রফি নিয়ে উদযাপনের একাধিক চিত্র থাকলেও, ভিডিওতে একবারও ইমরান খানকে দেখা যায়নি।
পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের পর গত বছরের এপ্রিলে ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণ করা হয়। এরপর থেকে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ব্যাপক উত্থান-পতন ঘটেছে; চলতি মাসের শুরুতে ইমরানকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন তাকে পাঁচ বছরের জন্য রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করে।
গত মে মাসে পাকিস্তানের দাঙ্গার পর দেশটির মূলধারার গণমাধ্যম থেকেও এক প্রকার অদৃশ্য করে দেওয়া হয়েছে ইমরান খানকে। টেলিভিশনের পর্দায় তার নাম নেওয়া হচ্ছে না বা তার ছবিও দেখানো হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, গণমাধ্যমে ইমরান খানের বক্তৃতা ও প্রেস কনফারেন্স সম্প্রচারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পাকিস্তানের গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ।
২০ বছরেরও বেশি সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ইমরান খান। ১৯৯২ সালে পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ জেতানোর পরেই অবসরে যান তিনি।
পিসিবির বিতর্কিত ভিডিওর প্রসঙ্গে পাকিস্তান নারী ক্রিকেটে দলের সাবেক অধিনায়ক উরুজ মুমতাজ খান বলেন, "পাকিস্তান ক্রিকেটের ইতিহাসে স্মৃতিচারণ, ১৯৯২ বিশ্বকাপের ১১টি ছবি, অথচ ইমরান খানের একটা ছবিও নেই বা দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা খেলোয়াড়ের নামও উল্লেখ নেই!"
পাকিস্তানি ক্রিকেট ইতিহাসবিদ ও সাংবাদিক ওসমান সামিউদ্দিনের ভাষ্যে, পাকিস্তানের সবচেয়ে সেরা ক্রিকেটারকে বাদ দিয়ে এমন একটা ভিডিও বানাতে 'নিশ্চয়ই বেগ পেতে হয়েছে তাদের'।
ইমরান খানকে পাকিস্তানের ক্রিকেটের ইতিহাস থেকে 'মুছে দেওয়ার' এই প্রচেষ্টাকে 'স্তালিনিস্ট' বলে আখ্যা দিয়েছেন ব্রিটিশ ব্রডকাস্টার ও লেখক পিটার ওবর্ন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের একাধিক রেকর্ডের অধিকারী ইমরান খান ক্রিকেট থেকে অবসরের কিছুদিন পরেই রাজনীতিতে যুক্ত হন। তার সবচেয়ে বড় বিজয় আসে যখন ২০১৮ সালে তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে এবং ইমরান খান দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
তবে রাজনৈতিক মোড় পরিবর্তন, কারাগারে যাওয়া ও রাজনীতি থেকে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইমরান পাকিস্তানে একজন জনপ্রিয় নেতা হিসেবে রয়ে গেছেন এবং দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরের তরুণদের কাছ থেকেও তিনি সমর্থন পেয়ে থাকেন।