দক্ষিণ কোরিয়ার ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা বিশ্বকে দেখিয়েছিলেন যিনি
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/12/31/s._korea_plane_crush_0.jpg)
সেদিন সকালে দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু এয়ার ফ্লাইটটি যখন দক্ষিণ-পশ্চিমে তার গন্তব্যে দিকে যাচ্ছিল সেসময় বিমানবন্দরের কাছেই ছিলেন, লি গিন-ইয়ং নামে এক ব্যক্তি। সেসময় তিনি তার রেস্তোরাঁয় স্থানীয় সুস্বাদু খাবার অক্টোপাস রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
লি গিন-ইয়ংয়ের রেস্তোরাঁ থেকে মাত্র ৩৩০ গজ দূরে অবস্থিত মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি। রেস্তোরাঁ থেকেই দেখা যায় বিমানবন্দরের রানওয়ে। ৪৮ বছর বয়সী লি স্মরণ করেন, দিনটি খুবই সুন্দর রৌদ্রোজ্জ্বল একটি সকাল ছিল। তিনি কাছেই সমুদ্রসৈকতে পাখিদের উড়া দেখছিলেন।
এর আধাঘণ্টার মধ্যেই জেজু এয়ার ফ্লাইট ৭সি২২১৬ দুর্ঘটনার শিকার হয়। রানওয়ের শেষে একটি কংক্রিটের কাঠামোর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বিমানটিতে আগুন ধরে যায় এবং বিমানে থাকা ১৮১ জনের মধ্যে শুধু বেঁচে ছিলেন মাত্র দুজন। এটি এখন পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার মাটিতে ঘটা সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা।
নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লি সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করছিলেন। তিনি রান্না করার সময় কীভাবে জোরালো শব্দ শুনে বিমানের আগমনের সতর্ক বার্তা পান এবং কীভাবে বিমানটি একদম তার রেস্তোরাঁর একদম কাছ দিয়ে উড়ে গেছে সে বর্ণনা দেন তিনি। লি গিন-ইয়ংই সর্বপ্রথম সেই দুর্ঘটনার দৃশ্যটির ভিডিও ধারণ করেন। লি জানান, তিনি এ ভয়াবহ দৃশ্য দেখার ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
"বিমানটিতে অবশ্যই কোনো সমস্যা হয়েছে"
লি তার সাক্ষাৎকারে বলেন, "সকাল ৮:৫৭-এর দিকে, আমি একাধিক বিকট শব্দ শুনি। এগুলো মোটরবাইকের শব্দের মতো মনে হচ্ছিল। তবে এগুলো আরও জোরালো ও অপরিচিত মনে হচ্ছিল। আমি প্রায়ই পাখি তাড়ানোর জন্য গুলি চালানোর শব্দ শুনি, পাশাপাশি রানওয়ে সম্প্রসারণ, সড়ক সম্প্রসারণ, বুলেট ট্রেন নির্মাণসহ অন্যান্য নির্মাণকাজের আওয়াজ শুনি, যা সম্ভবত বিমানবন্দর সংলগ্ন একটি বিশেষ অঞ্চলের প্রকল্পের অংশ। কিন্তু এমন শব্দ আগে কখনো শুনিনি। বিষয়টি অদ্ভুত মনে হওয়ায়, আমি রান্নাঘর ছেড়ে রেস্টুরেন্টের পার্কিং এলাকায় গিয়ে আকাশের দিকে তাকাই।"
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2024/12/31/ezgif.com-webp-to-jpg-converter_0.jpg)
তখনই বিমানটিকে দেখতে পান লি। তিনি বলেন, "বিমানটি রানওয়ের ওপর না থেকে আমার রেস্টুরেন্টের ওপর দিয়ে উড়ছিল। বিমানটি ডানদিকে সামান্য হেলে ছিল। আমার মনে হচ্ছিল, বিমানটি রানওয়ের দিকে নয় বরং আমার রেস্টুরেন্টের দিকে অবতরণ করতে যাচ্ছে। আমি প্রায়ই রানওয়ের ওপর দিয়ে বিমান উড়তে দেখি, এমনকি প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত বিমানও এবং বিমানের অবতরণের সময় উচ্চতা সম্পর্কে ধারণা রাখতে পারি। কিন্তু এই প্রথমবার, আমি কোনো বিমানকে এত নীচু হয়ে এবং আমার রেস্টুরেন্টের ওপর দিয়ে উড়তে দেখলাম। এটি খুব নীচু মনে হচ্ছিল। বিষয়টি অদ্ভুত মনে হওয়ায়, আমি রেস্টুরেন্টের পেছনে গিয়ে বিমানের পেছনের অংশ দেখতে থাকি।"
প্রথমবার বিমানটি দেখে অনেক উপড়ে মনে হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয়বার দেখে মনে হচ্ছিল বিমানটি অনেক নিচে এবং স্বাভাবিক বিমানের চাইনে এটি খুব দ্রুত ডান দিকে ঘুরে ইউটার্ন নিচ্ছিল। "আমার মনে হচ্ছিল বিমানে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে" বলে জানান লি। তখনই তিনি ভিডিও ধারণ করার কথা ভাবেন। তাই তিনি রেস্তোরাঁর ছাদে উঠে যান এবং তিনিই প্রথম ভিডিওটি ধারণ করেন।
"আমার কি এখন এখান থেকে সরে যাওয়া উচিত?"
দুর্ঘটনার এক-দুই সেকেন্ড পরই আমি হঠাৎ মুখে একটি তীব্র তাপের ঝাপটা অনুভব করি তখনই আমি ভাবলাম, "আমার কি এখনই বের হয়ে যাওয়া উচিত?" বলে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন লি।
এসব ভাবতে ভাবতেই দুই-তিনটি বিস্ফোরণ দেখতে পান লি। ভিডিওটিতে প্রথম বিস্ফোরণের ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে বিমানের কিছু বড় টুকরো ছিটকে পড়তে থাকে।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2024/12/31/south_korea_plane_crash.jpg)
লি বলেন, "এরপর আমি আমার রেস্তোরাঁর ভবনের ছাদ থেকে নেমে, এয়ারপোর্টের কাছাকাছি আরেকটি ভবনের ছাদে চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে আমি আরেকটি ভিডিও ধারণ করলাম। তবে সেখানেও আমি তাপ অনুভব করতে থাকলাম।"
তিনি বলেন, "আমি ছাদ থেকে নামার পরও বিমানের ধোঁয়া এবং আগুন অব্যাহত ছিল। ফায়ারফাইটার ট্রাকগুলো ঘটনাস্থলের কাছে যেতে পারছিল না। তারা প্রায় ১০০ থেকে ১৩০ ফুট দূর থেকে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিল।"
"আমার দম বন্ধ লাগছিল"
আমি গত রাতে ঘুমাতে পারিনি। প্রতিবার যখন আমি চোখ বন্ধ করছিলাম, আমি ক্র্যাশের বিস্ফোরণের পরের চিত্রগুলো দেখতে পাচ্ছিলাম। আমি ফোনের স্ক্রিনে এবং সংবাদে তাকিয়ে ছিলাম কারণ আমি ঘুমাতে পারছিলাম না। আজ সকালে (সোমবার) ৬টা নাগাদ, আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এবং আমার রেস্টুরেন্টে গেলাম। আজ রাতে ঘুমানোর জন্য আমি মদ্যপান করলাম, আশা করেছিলাম এটি আমাকে ঘুমাতে সাহায্য করবে।
এখন আমি আসলে একা আছি, কারণ আমার স্ত্রী আমার শ্বশুরবাড়িতে। আমি ফোনে স্ত্রীর সাথে কথা বলার পর একটু ভাল লাগছিল, যে কেমন অনুভব করেছি সেই দিন। প্রতিবার যখন আমি ইন্টারনেটে গিয়ে প্লেন দুর্ঘটনার খবর বা সম্পর্কিত ফুটেজ দেখি, আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।