বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক জয়
উইকেট ভালোই পড়েছিলেন হাশমতউল্লাহ শহিদি। টসের সময় আফগানিস্তান অধিনায়ক জানান, ৩০০ ছাড়ানো সংগ্রহ গড়তে পারলে তা যথেষ্ট হবে। তিনজন দারুণ স্পিনার নিয়ে গড়া বোলিং বিভাগের ওপর আস্থার কথা জানান তিনি। ব্যাটসম্যানরা কাঙ্খিত সংগ্রহ এনে দিতে পারেননি, এরপরও রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইকরাম আলীখিলের ব্যাটে পাওয়া সংগ্রহকেই যথেষ্ট প্রমাণ করলেন আফগান স্পিনাররা। অসাধারণ বোলিংয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে পথ ভুলিয়ে দিয়ে বিশ্বকাপে ঐতিহাসিক জয় তুলে নিল আফগানিস্তান।
রোববার দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৬৯ রানে হারিয়েছে আফগানিস্তান। বিশ্বকাপ এবং ওয়ানডে ফরম্যাটে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এটাই আফগানদের প্রথম জয়। এর আগে কেবল বিশ্বকাপেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলে তারা, হার মানে দুই ম্যাচেই। ওয়ানডে ও বিশ্বকাপের তৃতীয় সাক্ষাতে হিসাবটা পাল্টে নিলেন রশিদ-নবীরা। এবারের আসরে তৃতীয় ম্যাচে এসে প্রথম জয়ের স্বাদ পেল আফগানিস্তান, তিনটি বিশ্বকাপ খেলে ১৮ ম্যাচে এটা তাদের দ্বিতীয় জয়। ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয়টি এতোদিন তাদের একমাত্র সাফল্য ছিল।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৪৯.৫ ওভারে সব ক'টি উইকেট হারিয়ে ২৮৪ রান তোলে আফগানিস্তান। বিশ্বকাপ ও এই ফরম্যাটে এটাই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আফগানদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। যদিও ১৩ ওভারেই ১০০ রান পূর্ণ হয় তাদের। কিন্তু হঠাৎ খেই হারানো দলটি পরের ৩৭ ওভারে রান তোলে ১৮৪। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দারুণ ইনিংস খেলা রহমানউল্লাহ গুরবাজকে হারিয়ে মূলত পিছিয়ে পড়ে আফগানরা। পরে ইকরাম আলীখিলের লড়াইয়ে তিনশ ছুঁইছুঁই সংগ্রহ পায় তারা।
জবাবে ম্যাচসেরা মুজিব-উর রহমান, রশিদ খান, মোহাম্মদ নবীদের বোলিংয়ের সামনে ডেভিড মালান ও হ্যারি ব্রুক ছাড়া ইংল্যান্ডের বাকিরা লড়াই করতে পারেননি। ৪০.৩ ওভারে ২১৫ রানে শেষ হয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের ইনিংস। টানা দ্বিতীয় শিরোপার খোঁজে ভারতে আসা ইংল্যান্ড তিন ম্যাচে দুটিতে হারলো। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বড় হারে শুরু করা ইংলিশরা দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে হারায়। দ্বিতীয় জয়ের লক্ষ্যে আজ মাঠে নামলেও আফগান চমকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা ডুবলো হতাশার সাগরে।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় ইংল্যান্ড। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে জনি বেয়ারস্টোকে বিদায় করেন আফগান পেসার ফজলহক ফারুকী। দ্বিতীয় উইকেট জুটিও দীর্ঘ হয়নি তাদের, এবার আঘাত হানেন আফগানিস্তানের স্পিনার মুজিব-উর-রহমান। দারুণ এক ডেলিভারিতে ১১ রান করা জো রুটের স্টাম্প উপড়ে নেন তিনি।
ডেভিড মালান এক পাশ আগলে খেলতে থাকেন, পরে তার সঙ্গে যোগ দেন হ্যারি ব্রুক। ৩৫ রান যোগ করা এই জুটিও ইংল্যান্ডকে স্বস্তিতে ফেরাতে পারেনি। ৩৯ বলে ৪টি চারে ৩২ রান করে মোহাম্মদ নবীর শিকারে পরিণত হন মালান। এরপর ব্রুক এক পাশ আগলে খেলতে থাকলেও অন্য প্রান্তে বাজতে থাকে ভাঙনের সুর। উইকেটে গিয়ে ভুগতে হয় ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলারকে, ১৮ বলে ৯ রান করে আফগান পেসার নাভিন-উল-হকের বলে বোল্ড হন তিনি।
লিয়াম লিভিংস্টোন ভালো শুরু করেও টিকতে পারেননি আফগানিস্তানের তারকা লেগ স্পিনার রশিদ খানের তোপের কারণে। ১৪ বলে ১০ রান করে রশিদের অসাধারণ এক ডেলিভারিকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পা দিয়ে আউট হন তিনি। ১১৭ রানে ৫ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড, স্যাম কারানকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন মালানের পর দায়িত্বশীল ব্যাটিং করা ব্রুক। খাদের কিনারে চলে যাওয়া দলকে উদ্ধার করতে ব্রুককে কেবল সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিল কারান, কিন্তু এই কাজটিও বেশি সময় করতে পারনেনি তিনি। ২৩ বলে ১০ রান করে নবীর দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন ইংলিশ এই অলরাউন্ডার।
এরপর ক্রিস ওকসের সঙ্গে জুটি গড়েন ব্রুক, এটাই ছিল ইংলিশদের শেষ আশা। কিন্তু এই জুটি ২২ রানে ভাঙে, ৯ রানের ব্যবধানে দুজনকেই ফেরান মুজিব। ৬১ বলে ৭টি চার ও একটি ছক্কায় সর্বোচ্চ ৬৬ রান করেন ব্রুক। শেষ দিকে আদিল রশিদের ১৩ বলে ২০, মার্ক উডের ২২২ বলে ১৮ ও রিস টপলির ৭ বলে ঝড়ো গতির ১৫ রান দলের হারের ব্যবধান কমিয়েছে কেবল। ম্যাচসেরা মুজিব ১০ ওভারে ৫১ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন। রশিদ আরও কৃপণ বোলিং করেন, ৯.৩ ওভারে ৩ উইকেট নিতে তার খরচা ৩৭ রান। নবী ২টি এবং ফজলহক ও নাভিন একটি করে উইকেট পান।
এর আগে ব্যাটিং করতে নামা আফগানরা উড়ন্ত সূচনা পায়। অসাধারণ সব শটে দলকে বড় জয়ের ভিত গড়ে দেন গুরবাজ। ইব্রাহিমকে সঙ্গে নিয়ে পাওয়ার প্লের ১০ ওভার থেকেই ৭৯ রান তোলেন তিনি। এর মধ্যে তার রানই ছিল ৪৬। গুরবাজ-ইব্রাহিমের জুটিতে ১৩তম ওভারেই একশ ছুঁয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল আফগানিস্তান। ১৭তম ওভারে গিয়ে আউট হন ইব্রাহিম, ভাঙে ১১৩ রানের উদ্বোধনী জুটি।
৪৮ বলে ৩টি চারে ২৮ রান বিদায় নেন ইব্রাহিম। প্রথম উইকেট হারানোর সঙ্গে সঙ্গে দিকও হারিয়ে বসে তারা। ১৯তম ওভারের চতুর্থ বলে রহমত শাহকে ফিরিয়ে দেন ইংলিশ লেগ স্পিনার আদিল রশিদ। পরের বলেই দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউটে কাটা পড়েন গুরবাজ। প্রথম বিশ্বকাপ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পথেধ থাকা ডানহাতি এই ওপেনার ৫৭ বলে ৮টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৮০ রান করেও হতাশা নিয়ে সাজঘরে ফেরেন।
হঠাৎ বিপর্যয় কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদি ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই। যদিও এ জুটি বড় হয়নি, চতুর্থ উইকেটে ৩০ রান যোগ করেন তারা। শহিদি ১৪ ও ওমরজাই ১৯ রান করেন ফিরে যান। মোহাম্মদ নবীও ভাঙন আটকাতে পারেননি, ৯ রান করে আউট হন তিনি। এরপর আফগানদের ইনিংস এগিয়ে নিয়েছেন ইব্রাহিম আলীখিল।
নাজিবুল্লাহ জাদরানের জায়গায় সুযোগ পেয়েই বিশ্বকাপের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান রশিদ খানের সঙ্গে ৪৩ ও মুজিব-উর-রহমানের সঙ্গে ৪৪ রানের জুটি গড়েন। ৪৮তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ৬৬টি বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫৮ রান ২৩ বছর বয়সী ইব্রাহিম। রশিদ ২২ বলে ২৩ ও মুজিক ১৬ বলে ২৮ রান করেন। ইংলিশ লেগ স্পিনার আদিল রশিদ ১০ ওভারে ৪২ রানে ৩টি উইকেট নেন। ২টি উইকেট পান মার্ক উড। একটি করে উইকেট নেন রিস টপলি, লিয়াম লিভিংস্টোন ও জো রুট।