পাকিস্তানকে উড়িয়ে স্বরূপে অস্ট্রেলিয়া
বিশ্বকাপ মানেই অস্ট্রেলিয়ার দাপট, রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন তারা। দুটি আসরের অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন অজিরা। সেই অস্ট্রেলিয়াই এবারের বিশ্বকাপে দিশা খুঁজে পাচ্ছিল না। নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচেই হার মানে অস্ট্রেলিয়া, কোনো ম্যাচে ২০০ ছাড়ানো রানও করতে পারেনি। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে জয়ে ফেরা অজিরা এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে শাসন করে খেললো। ব্যাট হাতে রান পাহাড় গড়ার পর দুর্দান্ত বোলিংয়ে পাকিস্তানকে সহজেই হারাল তারা।
শুক্রবার বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে ৬২ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। রানের ব্যবধানে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে এটা তাদের তৃতীয় বড় জয়, আগের দুটি বড় জয় ৭৩ ও ৮২ রানে। এ নিয়ে বিশ্বকাপে ১১ বারের সাক্ষাতে সাতবার পাকিস্তানকে হারালো অজিরা। এবারের বিশ্বকাপে চার ম্যাচে এটা অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় জয়। পাকিস্তান প্রথম দুই ম্যাচ জেতার পর টানা দুই ম্যাচ হারল।
টস হেরে আগে ব্যাটিং কতে নেমে ম্যাচসেরা ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শের সেঞ্চুরিতে ৯ উইকেটে ৩৬৭ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে এটাই তাদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। পাকিস্তানকে আরও বড় লক্ষ্য দেওয়ার পথে ছিল অজিরা। কিন্তু ৫ উইকেট নেওয়া শাহিন শাহ আফ্রিদির বাধায় সেটা সম্ভব হয়নি। জবাবে আবদুল্লাহ শফিক ও ইমাম-উল-হকের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পাওয়ার পর পাকিস্তানের প্রায় সবাই রানের দেখা পেয়েছেন, তবুও জয়ের জন্য তা যথেষ্ট হয়নি। অজি লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পার দারুণ বোলিংয়ে বাবর আজমের দলের ইনিংস শেষ হয় ৪৫.৩ ওভারে ৩০৫ রানে।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় উদ্বোধনী জুটিতে ২১.১ ওভারে ১২৪ রান যোগ করেন শফিক ও ইমাম। এ দুজনকেই ফিরিয়ে পাকিস্তানের ইনিংসে আঘাত হানেন মার্কাস স্টয়নিস। ৬১ বলে ৭টি চার ও ২টি চক্কায় ৬৪ রান করেন শফিক। ৭১ বলে ১০টি চারে ৭০ করেন ইমাম। এরপর বেশ কয়েকজন ব্যাটসম্যান উইকেটে থিতু হয়েও বড় ইনিংস খেলে তলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিতে পারেননি।
বিশ্বকাপে নিজের ছায়া হয়ে থাকা পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম ১৮, মোহাম্মদ রিজওয়ান ৪৬, সউদ শাকিল ৩০, ইফতিখার আহমেদ ২৬ ও মোহাম্মদ নওয়াজ ১৪ রান করেন। ১০ ওভারে ৫৩ রানে ৪টি উইকেট নেন জ্যাম্পা। দুটি করে উইকেট নেন স্টয়নিস ও অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। একটি করে উইকেট পান মিচেল স্টার্ক ও জশ হ্যাজেলউড।
এর আগে ব্যাটিং করা অস্ট্রেলিয়া দুর্বার শুরু করে। যদিও শুরুতেই উইকেট হারাতে পারতো তারা। ব্যক্তিগত ১০ রানেউ সাজঘরে ফিরতে পারতেন ওপেনার ওয়ার্ডার। কিন্তু তার তোলা ক্যাচ মাটিতে ফেলে দেন শাদাব খানের জায়গায় বিশ্বকাপে প্রথম সুযোগ পাওয়া উসামা মির। জীবন পেয়ে বিধ্বংসী হয়ে উঠেন ওয়ার্নার, পাকিস্তানের বোলারদের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দেন দেন।
আরেক ওপেনার মার্শও এদিন দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। আগের তিন ম্যাচে একটি হাফ সেঞ্চুরি করা ডানহাতি এই ওপেনার অবশেষে ছন্দময় ব্যাটিং করলেন। ওয়ার্নার-মার্শের চোখ ধাধানো ব্যাটিংয়ে উদ্বোধনী জুটিতে ৩৩.৫ ওভারে ২৫৯ রান করেন। যা বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার সেরা উদ্বোধনী জুটি, ওয়ানডেতে তৃতীয় সর্বোচ্চ। ওয়ার্নার ও মার্শের জুটিটি বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় সেরা উদ্বোধনী জুটি। বিশ্বকাপে সেরা উদ্বোধনী জুটি শ্রীলঙ্কার তিলকারত্নে দিলশান ও উপুল থারাঙ্গার, ২৮২ রানের।
পাকিস্তানকে বিশাল লক্ষ্য দেওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ওয়ার্নারের। ইনিংসে দুইবার জীবন পাওয়া বাঁহাতি এই অজি ওপেনার ঝড়ো গতিতে ১২৪ বলে ১৪টি চার ও ৯টি ছক্কা ১৬৩ রান করেন। ওয়ানডেতে এটা তার ২১তম সেঞ্চুরি, বিশ্বকাপের পঞ্চম। পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা চতুর্থ সেঞ্চুরি করলেন তিনি। দুর্বার এই ইনিংসে ১২ জনকে টপকে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকার সাত নম্বরে উঠে এসেছেন ওয়ার্নার।
সমান তালে এগিয়েছেন মার্শও। ওয়ার্নার সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পরের বলেই তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলেন তিনি। বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচে এই প্রথম সেঞ্চুরি করলেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার। ১০৮ বলে ১০ টি চার ও ৯টি ছক্কায় ১২১ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। বিশ্বকাপে এটা তার প্রথম সেঞ্চুরি, ওয়ানডেতে দ্বিতীয়। ওয়ার্নার ও মার্শকে হারানোর পর শাহিন আফ্রিদির তোপে অজিরা আর বেশি পথ এগোতে পারেনি। মার্কাস স্টয়নিস ২১ ও জশ ইংলিস ১৩ রান করেন। অজিদের বাকি ব্যাটসম্যানদের কেউ-ই দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি।
মার্শকে ফিরিয়ে অজিদের উদ্বোধনী জুটি ভাঙা শাহিন আফ্রিদি একটি কীর্তি গড়েছেন। পাকিস্তানের প্রথম পেসার হিসেবে বিশ্বকাপে একাধিকবার ৫ উইকেট নিলেন তিনি। তার সমান দুইবার পাঁচ উইকেটের কীর্তি আছে কেবল সাবেক লেগ স্পিনার শহীদ আফ্রিদির। ৫ উইকেট নিতে ১০ ওভারে শাহিন আফ্রিদির খরচা ৫৪ রান। খরুচে হারিস রউফ ৮ ওভারে ৮৩ রানে ৩টি উইকেট পান। ৯ ওভারে ৮২ রানে একটি উইকেট নেন উসামা মীর।