আরেকটি আফগান রূপকথা, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের পর এবার কুপোকাত পাকিস্তান
বাংলাদেশের বিপক্ষে হারে শুরু, পরের ম্যাচেও হার। হারে হারেই এগোচ্ছিল আফগানিস্তানের বিশ্বকাপ অভিযান। কিন্তু নিজেদের তৃতীয় ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লিখে ফেলে আফগানরা। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে অঘটনের জন্ম দেয় যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটি। এক ম্যাচ পর আবারও আফগান শাসন, এবার তাদের শিকার সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান। ব্যাটে-বলে রাজত্ব কায়েম করা আফগানিস্তান বাবর আজমের দলকে উড়িয়ে তুলে নিল ঐতিহাসিক জয়।
সোমবার চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছে আফগানিস্তান। উইকেটের হিসাবে বিশ্বকাপে এটাই তাদের সবচেয়ে বড় জয়। আগের দুই জয়ের একটিতে ১ উইকেটে জেতে আফগানরা, বাকিটি জেতে রানে। বিশ্বকাপ এবং ওয়ানডেতে পাকিস্তানের বিপক্ষে এটাই প্রথম জয় তাদের। ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে ২০টি ম্যাচ খেলা আফগানিস্তান তিন ম্যাচে জয়ের স্বাদ পেল। একই বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো জিতলো দুটি ম্যাচ। প্রথম দুই ম্যাচে জেতা পাকিস্তান টানা তিন ম্যাচে হেরে কোণঠাসা হয়ে পড়লো।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে আফগানিস্তানের তিন স্পিনার মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান ও নুর আহমেদের দারুণ বোলিংয়ের বিপক্ষে সুবিধা করতে পারছিল না পাকিস্তান। আবদুল্লাহ শফিক ও বাবর আজম হাফ সেঞ্চুরি করলেও বলার মতো রান রেট ছিল না তাদের। শেষ দিকে শাদাব খানের সঙ্গে জুটি বাধা ইফতিখার আহমেদের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৭ উইকেটে ২৮২ রান তোলে পাকিস্তান। ৪০ ওভার পর্যন্ত রান তুলতে ধুঁকতে থাকা পাকিস্তান শেষ ১০ ওভারে ৯১ রান করে।
জবাবে রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ম্যাচসেরা ইব্রাহিম জাদরানের জুটিতে স্বপ্নের শুরুর পর রহমত শাহ ও অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শদিহির দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে স্মরণীয় জয় তুলে নেয় আফগানিস্তান। এক ওভার হাতে রেখেই জিতে যায় আফগানরা, বড় এই লক্ষ্য তাড়া করতে কোনো বেগই পোহাতে হয়নি তাদের। পাকিস্তানের বিপক্ষে আগের সাত ওয়ানডেতেই হার মানা আফগানিস্তানের এটা সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। এর আগে সর্বোচ্চ ২৭৪ রান তাড়ায় সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারিয়েছিল দলটি।
উইকেট ও প্রতিপক্ষ বিবেচনায় আফগানিস্তানের জন্য ২৮৩ রান বড় লক্ষ্যই ছিল। তাতে অবশ্য ভড়কায়নি তারা, শুরু থেকেই দাপুটে ব্যাটিং করতে থাকেন আফগানদের দুই ওপেনার। পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে ৬০ রান যোগ করা গুরবাজ ও ইব্রাহিম ১৬ ওভারেই দলের স্কোরকার্ডে জমা করেন ১০০ রান। পাকিস্তান বোলারদের শাসন করে ব্যাটিং করা এই দুই ব্যাটসম্যান ২১.১ ওভারে ১৩০ রানের জুটি গড়েন। যা বিশ্বকাপে আফগানদের সেরা উদ্বোধনী জুটি এবং যেকোনো উইকেটে দ্বিতীয় সেরা।
গুরবাজের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি, তবে এই জুটিতেই জয়ের পথ পেয়ে যায় আফগানিস্তান। শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে আউট হওয়ার আগে ৫৩ বলে ৯টি চার ও একটি ছক্কায় ৬৫ রান করেন গুরবাজ। রহমত শাহর সঙ্গে আরও অনেকটা পথ পাড়ি দেন সেঞ্চুরির পথে থাকা ইব্রাহিম। যদিও তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছানো হয়নি অসাধারণ ব্যাটিং করা আফগান এই ওপেনারের। ১১৩ বলে ১০টি চারে ৮৭ রান করেন ইব্রাহিম।
গুরবাজ ও ইব্রাহিমকে হারানোর চাপ দলকে কখনই বুঝতে দেননি রহমত ও হাশমতউল্লাহ। চাপহীন ব্যাটিংয়ে তৃতীয় উইকেটে ৯৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান তারা। বিশ্বকাপে তৃতীয় উইকেটে এটা আফগানদের সেরা জুটি, যেকোনো উইকেটে পঞ্চম সেরা। রহমত ৮৪ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৭ রানে এবং ৪৫ বলে ৪টি চারে ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ। পাকিস্তানের শাহিন আফ্রিদি ও হাসান আলী একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাটিং করা পাকিস্তানের শুরুটা মন্দ ছিল না, উদ্বোধনী জুটিতে ১০.১ ওভারে ৫৬ রান যোগ করেন শফিক ও ইমাম-উল-হক। ১৭ রান করা ইমামের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। দ্বিতীয় উইকেটে দলকে ১১০ রান পর্যন্ত নিয়ে যান শফিক ও বাবর। ৭৫ বলে ৫টি চারে ও ২টি ছক্কায় ৫৮ রান করে শফিককে ফেরান আফগান চায়নাম্যান বোলার নুর। কিছুক্ষণ পর মোহাম্মদ রিজওয়ানকেও সাজঘর দেখিয়ে দেন তরুণ এই স্পিনার।
দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে রান তোলার গতি আরও কমে যায় পাকিস্তানের। সউদ শাকিলকে নিয়ে এগোতে থাকেন বাবর, চতুর্থ উইকেটে ৫৭ বলে ৪৩ রান যোগ করেন তারা। শাকিল ফেরার পর শাদাব খানের সঙ্গে ৪৭ বলে ৪৩ রানের জুটি গড়েন বাবর। ৪২তম আউট হওয়ার আগে ৯২ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৭৪ রান করেন বাবর। বিশ্বকাপে এটা তার পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরি, এবারের আসরে দ্বিতীয়।
এর পরের উইকেটে মূলত এগিয়ে যায় পাকিস্তান। ষষ্ঠ উইকেটে ৪৫ বলে ৭৩ রানের জুটি গড়েন শাদাব ও ইফতিখার। শাদাব দেখেশুনে খেললেও তাণ্ডব চালান ইফতিখার। ২৭ বলে ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৪০ রান করেন তিনি। ইনিংসের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ৩৮ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় শাদাবও ৪০ রান করেন। ১০ ওভারে ৪৯ রানে ৩টি উইকেট নেন নুর। নবী ১০ ওভারে মাত্র ৩১ রানে একটি উইকেট নেন। উইকেট না পেলেও রশিদ ১০ ওভারে ৪১ রান খরচা করে পাকিস্তানকে চাপে রাখেন। আফগান পেসার নাভিন-উল-হক ২টি এবং আজমতউল্লাহ ওমরজাই একটি উইকেট পান।