দেশে ফিরে রাব্বি বললেন, ‘দায়িত্ব বেড়ে গিয়েছে’
এভাবে কখনই তাদের ঘরে ফেরা হয়নি। স্টেডিয়ামে ঢুকতেই কতো কতো ক্যামেরা তাক করা তাদের দিকে, গোছানো মঞ্চে বাহারি ফুলের সাজ। বিমানবন্দর থেকে পাওয়া ফুলের মালা গলায় পরেই গাড়ি থেকে একে একে নেমে এলেন যুব এশিয়া কাপ জিতে দেশে ফেরা মাহফুজুর রহমান রাব্বি, আশিকুর রহমান শিবলি, রোহানাত দৌল্লাহ বর্ষণরা। পাশেই তখন সাউন্ডবক্সে বেজে যাচ্ছে, 'লাল সবুজের বিজয় নিশান, হাতে হাতে ছড়িয়ে দাও।'
সোমবার মিরপুর স্টেডিয়ামের একাডেমি ভবনের সামনে বিসিবি আয়োজিত সংবর্ধনা পর্ব শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি বাংলাদেশ অধিনায়ক রাব্বি ও টুর্নামেন্ট সেরা শিবলি। সেখানে মিষ্টিমুখ শেষে একাডেমি ভবনে ঢুকতেই অটোগ্রাফ শিকারির কবলে শিবলি। সাদা পোশাকে বেশ কয়েকজন খুদে ক্রিকেটার প্রস্তুত প্রিয় অগ্রজের সঙ্গে হাত মেলাতে, অটোগ্রাফ নিতে। তারা সবাই মিরপুর ট্যালেন্ট হান্ট ক্রিকেট একাডেমির ছাত্র।
বড় ভাইয়েরা শিরোপা জিতে এসেছেন, খুদে ক্রিকেটারদের চোখেমুখে আনন্দের ছাপ স্পষ্ট। শিবলি একাডেমি ভবনে ঢুকতেই একজন তার কাছে গিয়ে হাতে ধরিয়ে দেয় মার্কার, গা বাড়িয়ে দিলো জার্সিতে অটোগ্রাফ দেওয়ার জন্য। খুদে ক্রিকেটার হলেও শৃঙ্খলা বজায় রেখে এক এক করে এগিয়ে যাচ্ছিলো অটোগ্রাফ নিতে। শিবলি অটোগ্রাফ দিচ্ছেন, পাশেই বসা মিরপুর ট্যালেন্ট হান্ট ক্রিকেট একাডেমির ছাত্র শেখ মেহরাব হোসেন বলে উঠলো, 'ভাই বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে আসবেন।'
ছোট্ট মেহরাবের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন শিবলি, কিছু বললেন না। কিছু না বললেও শিবলিদের স্বপ্ন তো এমনই। আকবর, শরিফুল, জয়দের মতো তারাও উঁচিয়ে ধরতে চান স্বপ্নের বিশ্বকাপ শিরোপা। অভ্যর্থনা শেষে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে সেটা জানান অধিনায়ক রাব্বি। এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জেতায় আগামী বিশ্বকাপে দায়িত্ব বেড়ে গেল বলে মনে করেন বাংলাদেশের এই যুবা।
এবারের অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে দুর্বার গতিতে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারিয়ে মিশন শুরু করা বাংলাদেশ যুবারা তাদেরকেই পায় ফাইনালে। ১৯৫ রানের বিশাল জয়ে মাথায় পড়ে সেরার মুকুট। মাঝে একটি ম্যাচও হারেনি বাংলাদেশ, সেমি-ফাইনালে হারায় যুব এশিয়া কাপে রেকর্ড সাতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে। আগের আসরের চ্যাম্পিয়নদের ৪ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালের টিকেট কাটে তারা।
এশিয়া জয়ের পর বিশ্বকাপে দৃষ্টি বাংলাদেশের। আগামী জানুয়ারিতেই দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবে যুবাদের বিশ্ব আসর। এই আসরের লক্ষ্য নিয়ে করা পশ্নে দায়িত্ব বাড়ার কথা জানিয়ে রাব্বি বলেন, 'প্রথমত আলহামদুলিল্লাহ। প্রথমবার আমরা এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হলাম। এটা আমাদের জন্য বড় একটা প্রাপ্তি। আমাদের সামনে যে বিশ্বকাপ আছে, এটার জন্য আমাদের দায়িত্ব বেড়ে গিয়েছে। এশিয়া কাপ থেকে আমরা খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি বিশ্বকাপের জন্য।'
চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ শিরোপা উদযাপন করেছে ফুটবলের বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার মতো করে। লিওনেল মেসির মতো ট্রফি ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে দলের মাঝে গিয়ে পরে তা উচিঁয়ে ধরেন অধিনায়ক রাব্বি। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে করা উদযাপনই একাডেমি ভবনের সামনে করেছেন বাংলাদেশের যুবারা। মেসিভক্ত বলে এমন উদযাপন? রাব্বি জানালেন তিনি ব্রাজিলের সমর্থক। কিন্তু দলের সবাই এভাবে উদযাপন করতে পছন্দ করে।
মেসিকে অনুসরণ করে যে এমন উদযাপন করেননি, শুরুতেই তা পরিষ্কার করলেন রাব্বি, 'কাউকে অসুসরণ করা না। আমি নিজেও আসলে ব্রাজিল সমর্থন করি। আসলে মেসির সেলিব্রেশন করার কারণ হচ্ছে এই সেলিব্রেশনটা আমার দল খুব বেশি উপভোগ করে। এই জন্য এই সেলিব্রেশনটা করা। আর্জেন্টিনা সাপোর্টার না, দলের সবাই আসলে চাঙ্গা থাকে এই উদযাপনে।'