শামার বীরত্বে ২৭ বছর পর অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট জিতল ওয়েস্ট ইন্ডিজ
১৯৯৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি, পার্থে এদিন বিজয় নিশান গেড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দেশটির দুই পেস কিংবদন্তি কার্টলি অ্যামব্রোস ও কোর্টনি ওয়ালশের আগুনে বোলিংয়ে তিন দিনেই ১০ উইকেটের জয় তুলে নেয় সফরকারীরা। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ওটাই ছিল ক্যারিবীয়দের সর্বশেষ টেস্ট জয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই বীরত্বগাঁথা দেখা হয়নি শামার জোসেফের, তার জন্ম যে আরও দুই বছর পর। সেই শামারই ফিরিয়ে আনলেন ক্যারিবীয় পেস আগুনের হারোনো প্রতাপ, রূপকথার রাজকুমার হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এনে দিলেন ঐতিহাসিক এক জয়।
ব্রিসবেনে উত্তেজনায় ঠাসা দিবারাত্রির টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে ৮ রানে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দীর্ঘ ২৭ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাদেরকে হারালো ক্যারিবীয়রা। যে জয়ে একটি নাম বড় করে লেখা, শামার জোসেফ। ২৪ বছর বয়সী ডানহাতি তরুণ এই ফাস্ট বোলার একাই গুঁড়িয়ে দিলেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন আপ।
অজিদের দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১১.৫ ওভারে ৬৮ রান খরচায় ৭ উইকেট নিয়ে দুই হাত তুলে আকাশে পাখা মেলতে চাইলেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা শামার, দীর্ঘদিনের অপেক্ষা ফুরিয়ে জয়ের স্বাদ নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই ম্যাচের সিরিজ শেষ হলো ১-১ সমতায়।
শেষের দিকের ব্যাটসম্যানদের লড়াইয়ে ক্যারিবীয়দের প্রথম ইনিংস ৩০০ পেরোয়। জশুয়া ডি সিলভা, কেভিন সিনক্লেয়ার, আলজারি জোসেফদের ব্যাটে ৩১১ রান তোলে সফরকারীরা। জবাবে প্রথম ইনিংসেও সুবিধা করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। কেমার রোচ, আলজারি জোসেফের দাপুটে বোলিংয়ের সামনে উসমান খাজা, অ্যালেক্স ক্যারি, অধিনায়ক প্যাট কামিন্স লড়াই করলেও ৯ উইকেটে ২৮৯ রান তোলার পর ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিকরা।
প্রথম ইনিংসে ২২ রানের লিড পাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯৩ রান তুললে অজিদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২১৬ রান। লক্ষ্য তাড়ায় ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে শেষ পর্যন্ত টিকে থেকেও ম্যাচ বাঁচাতে পারেননি ৯০ পেরনো ইনিংস খেলা স্টিভ স্মিথ। অন্য প্রান্তে ছোবল বসিয়ে অজিদের পথ ভুলিয়ে দেন শামার। ৫০.৫ ওভারে ২০৭ রানে শেষ হয় অজিদের ইনিংস।
অথচ দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সময় চোট পাওয়ায় তার বোলিং করা নিয়েই ছিল শঙ্কা। কিন্তু ইতিহাস লেখার পর্বে কোনোকিছুই পিছুটান হলো না অ্যাডিলেডে আগের ম্যাচেই অভিষেক হওয়া শামারের, পেস আগুনে প্রতিপক্ষকে পুড়িয়ে দলকে তিনি ভাসালেন আনন্দের বন্যায়।
লক্ষ্য তাড়ায় দলীয় ২৪ রানেই খাজাকে হারায় অস্ট্রেলিয়া, অজি ওপেনারকে ফিরিয়ে শুরুটা করে দেন আলজারি জোসেফ। কিছুক্ষণ পর মার্নাস লাবুশেনকে ফেরান জাস্টিন গ্রিভস। এখান থেকে ক্যামেরুন গ্রিনের সঙ্গে জুটি গড়েন স্মিথ। তৃতীয় উইকেটে ৭১ রান যোগ করেন তারা। তখন মনে হচ্ছিল, অস্ট্রেলিয়ার জেতাটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু ৪২ রান করা গ্রিনকে ফিরিয়ে শামার যে উইকেট উদযাপন শুরু করেন, তাকে আর থামাতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া।
গ্রিনের পর একে একে ট্রাভিস হেড, মিচেল মার্শ, অ্যালেক্স ক্যারি, মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স ও জশ হ্যাজেলউডকে ফেরান মাত্র ৫টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট দলে ডাক পাওয়া শামার। মাঝে কেবল নাথান লায়নের উইকেট নেন আলজারি। ৬৮ রানে ৭ উইকেট, এটাই শামারের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।
দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচ ও সিরিজ সেরার পুরস্কার জিতেছেন তিনি। শামারের তোপের মাঝেই দারুণ ইনিংস খেলেন স্মিথ। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ১৪৬ বলে ৯টি চার ও একটি ছক্কায় ৯১ রানে অপরাজিত থাকেন। মিচেল মার্শ ১০ ও মিচেল স্টার্ক ২১ রান করেন। শামারময় ইনিংসে আলজারি ২টি ও গ্রিভস একটি উইকেট পান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: ৩১১
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস: ২৮৯/৯ ডিক্লেয়ার
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস: ১৯৩
অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংস: (লক্ষ্য ২১৬) ৫০.৫ ওভারে ২০৭ (স্মিথ ৯১*, গ্রিন ৪২, মার্শ ১১, স্টার্ক ২১, লায়ন ৯; আলজারি ২/৬২, গ্রিভস ১/৪৬, শামার ৭/৬৮)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮ রানে জয়ী
সিরিজ: ২ ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা
ম্যাচ ও সিরিজ সেরা: শামার জোসেফ