উইলিয়ামসনের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে ৯২ বছরের অপেক্ষা ফুরাল নিউজিল্যান্ড
ক্রিকেটে টেস্ট ক্রিকেটকে বলা হয় অভিজাত ফরম্যাট। গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটের এই ফরম্যাটে নিশ্চিত বলে কিছু নেই। বাঁকে বাঁকে লুকিয়ে থাকে রোমাঞ্চ আর রহস্য। ভালো অবস্থানে থেকেও অনেকে হেরে যায়, কেউ আবার খাদের কিনার থেকে জিতে নেয় ম্যাচ। প্রতিটা সেশন গুরুত্বপূর্ণ হলেও চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরি করে ম্যাচ জেতানো টেস্ট ম্যাচের অন্যতম কঠিন কাজ।
সেই কঠিন কাজটিই আরও একবার করে দেখালেন কেন উইলিয়ামসন। দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে রেকর্ড বইয়ে নাম তুললেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। তার অপরাজিত সেঞ্চুরিতে নিউজিল্যান্ড পেল ইতিহাস গড়া জয়। হ্যামিল্টন টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ উইকেটে হারিয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতলো স্বাগতিকরা।
এই সিরিজ জয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হলো কিউইদের, তারা পেল অনন্য এক সাফল্যের স্বাদ। প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জিতলো নিউজিল্যান্ড, বিজয় নিশান ওড়াতে ৯২ বছর লেগে গেল তাদের। সেই ১৯৩২ সাল থেকে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টেস্ট খেলা নিউজিল্যান্ড ১৮ বারের চেষ্টায় টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল। আগের ১৭টি সিরিজের ১৩টি জেতে দক্ষিণ আফ্রিকা, চারটি সিরিজ ড্র হয়।
এসএ টি-টোয়েন্টিতে মূল ক্রিকেটাররা ব্যস্ত থাকায় নিউজিল্যান্ডে এবার পূর্ণ শক্তির দল পাঠাতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। নেইল ব্রান্ডের নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় সারির দলটি সেভাবে লড়তে পারেনি কিউইদের বিপক্ষে। ২৮১ রানে প্রথম টেস্ট হারা সফরকারীরা দ্বিতীয় টেস্টে লড়াই করলেও তা যথেষ্ট হয়নি। প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার করা ২৪২ রানের জবাবে নিউজিল্যান্ড তোলের ২১১ রান।
প্রথম ইনিংসে ৩১ রানের লিড পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসও বড় করতে পারেনি। ডেভিড বেডিংহামের সেঞ্চুরির পরও ২৩৫ রানে গুটিয়ে যায় প্রোটিয়াদের ইনিংস, নিউজিল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৬৭ রান। টম ল্যাথাম ভালো শুরু করে ফেরার পর হাল ধরেন উইলিয়ামসন। ডেভন কনওয়ে ও রাচিন রবীন্দ্র ফিরলে উইল ইয়াংয়ের সঙ্গে জুটি বেধে দলের বড় জয় নিশ্চিত করেন তিনি।
হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে ব্যাটিং করা সহজ ছিল না। অসমান বাউন্স ছিল উইকেটে, বল কিছুটা থেমে এসেছে। স্পিনারদের জন্য টার্নও ছিল। কিন্তু কোনো কিছুই বাধা হয়নি উইলিয়ামসনের। প্রায় নিখুঁত ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া কিউই এই ব্যাটসম্যান ২৬০ বলে ১২টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন। এই সিরিজে চার ইনিংসের তিনটিতেই সেঞ্চুরি করেছেন তিনি, জিতেছেন সিরিজ সেরার পুরস্কার।
ব্যাট হাতে অসাধারণ ছন্দে থাকা উইলিয়ামসনের এটা ৩২তম টেস্ট সেঞ্চুরি। সর্বশেষ ৭ টেস্টে ৭টি সেঞ্চুরি করেছেন ৩৩ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। ১৩৩ রানের ইনিংসটি তার চতুর্থ ইনিংসের পঞ্চম সেঞ্চুরি। তার করা এই পাঁচ সেঞ্চুরির চারটিই দলের কাজে এসেছে, চারটি ম্যাচে জিতেছে তার দল। চতুর্থ ইনিংসে পঞ্চম সেঞ্চুরি করে পাকিস্তানি কিংবদন্তি ইউনিস খানের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন উইলিয়ামসন।
ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেও অবশ্য এই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতা হয়নি তার। পুরস্কারটি গেছে অভিষেকেই ইতিহাসে নাম লেখানো উইলিয়াম ও'রোক। অভিষেকে দেশের পক্ষে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড গড়া ডানহাতি এই পেসার ম্যাচে ৯ উইকেট নেন। লক্ষ্য তাড়ায় ল্যাথাম ৩০, কনওয়ে ১৭ ও রবীন্দ্র ২০ রান করেন। ইয়াং ৬০ রানে অপরাজিত থাকেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২৪২ ও ২৩৫
নিউজিল্যান্ড: ২১১ ও ২৬৯/৩ (লক্ষ্য ২৬৭), (ল্যাথাম ৩০, কনওয়ে ১৭, উইলিয়ামস ১৩৩*, ববীন্দ্র ২০, ইয়াং ৬০*; প্যাটারসন পাইট ৩/৯৩)।
ফল: নিউজিল্যান্ড ৭ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: দুই ম্যাচের সিরিজে নিউজিল্যান্ড ২-০ ব্যবধানে জয়ী
ম্যাচ সেরা: উইলিয়াম ও'রোক
সিরিজ সেরা: কেন উইলিয়ামসন