‘খেলা ছাড়ার পরও বিপিএলের ইতিহাসে আমার নাম থাকবে’
বলা হয় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটা ব্যাটসম্যানদের। এই তত্ত্বের সঙ্গে অবশ্য বৈপরীত্য আছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল)। ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টটির গত কয়েকটি আসরে রান খরা নিয়ে অনেক চর্চা হয়েছে। এবার অবশ্য চিত্র পাল্টেছে, প্রায় প্রতি ম্যাচেই রান হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দিনের ম্যাচে বড় রান তোলে ঢাকা ক্যাপিটালস। দলটির সংগ্রহে তাকালে মনে হবে তাদের ব্যাটসম্যানরাই দাপ দেখিয়েছে। কিন্তু এর মাঝেও উজ্জ্বল এক নাম তাসকিন আহমেদ। দুর্বার রাজশাহীর এই পেসার উইকেট বৃষ্টি নামিয়ে গড়ে ফেলেছেন ইতিহাস।
রাজশাহীর ৭ উইকেটের দাপুটে জয়ের ম্যাচে আগে ব্যাটিং করা ঢাকা ৯ উইকেটে রান তোলে ১৭৪। তবে এই সংগ্রহ ২০০'র বেশিও হতে পারতো। হয়নি তাসকিনের আগুনে বোলিংয়ের কারণে। প্রতিপক্ষের যাওয়া ৯ উইকেটের ৭টিই ওঠে তার ঝুলিতে। ৪ ওভারে খরচাও বেশি নয়, ১৯ রান। দুর্দান্ত বোলিংয়ে বিপিএলের রেকর্ড বইয়ে সবার উপরে নিজের নামটি বসিয়েছেন তাসকিন। আসরটির ইতিহাসের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড এখন তার দখলে। রেকর্ডটি সম্পর্কে জানার পর তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছেন বাংলাদেশ পেসার, উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বিপিএলের ইতিহাসে নামটি থেকে যাবে বলে।
বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ৭ উইকেট নেওয়া তাসকিন ম্যাচসেরা হয়ে আসেন সংবাদ সম্মেলনে। রানের খেলার ফরম্যাটে ৭ উইকেট নেওয়ার অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, '৫ উইকেট তো যেকোনো ফরম্যাটে অনেক স্পেশাল। কারণ, অনেকবার তিন উইকেট, চার উইকেট পেয়েছি, কিন্তু উইকেটের সঙ্গে ভাগ্যও লাগে পাঁচটি পেতে। আলহামদুল্লিলাহ, এটা আমার জন্য বড় পাওয়া। যেহেতু আমি বাংলাদেশের ছেলে, খেলা ছাড়ার পরও বিপিএলের ইতিহাসে আমার নাম থাকবে। এটা আমার জন্য একটা গর্বের মুহূর্ত।'
টি-টোয়েন্টিতেও ৭ উইকেট নেওয়া যায়, ভেবেছিলেন তাসকিন। চেষ্টাও ছিল অভিজ্ঞ এই পেসারের। ভাবনা না থাকলে এমন পারফরম্যান্স করা যায় না বলে মনে করেন রাজশাহীর এই পেসার। তার ভাষায়, 'ভেবেছি। আসলে না ভাবলে হতো না। হ্যাঁ, উইকেট পেতে একটু লাকেরও ফেভারও থাকতে হয়। কিন্তু আমি খুশি যে, বোলিংয়ে যেটা করতে চাচ্ছি, সেটা হচ্ছে। আসলে ভালো বোলিং করতে পারাটাই গুরুত্বপূর্ণ। উইকেট তো অনেক সময় দুটি কম-বেশি হয়। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।'
ম্যাচের আগে রাজশাহীর একজন স্টাফ তাসকিনকে ৪ উইকেট নেওয়ার কথা জানান। তাসকিন তখন জানান, চাইলে আরও বেশি চাওয়া উচিত। স্টাফের সঙ্গে হওয়া এই আলাপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আজ একটা মজার বিষয় ছিল, আমাদের টিমের স্টাফ আনোয়ার বলছিল যে, "ভাইয়া তুমি আজ তুমি চার উইকেট পাবে।" আমি বলেছি "চাচ্ছিস যেহেতু আল্লাহর কাছে, বেশিই চা , ৮ উইকেটও তো হতে পারে।" ৭ উইকেট পেয়ে গেছি আজ। এখন পর্যন্ত আমি আমার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি এবং জিতেছি। ভালো লাগছে।'
বিপিএলের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড দখলে নেওয়া তাসকিন বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে আরেকটি রেকর্ডে নিজের নাম তুলেছেন, ছাড়িয়ে গেছেন সাকিব আল হাসানকে। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সেরা বোলিং ছিল বাঁহাতি এই স্পিনারের। ২০১৩ ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) বার্বাডোস ট্রাইড্রেন্টসের হয়ে ৪ ওভারে ৬ রানে ৬ উইকেট নেন সাকিব। এতোদিন বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে এটাই ছিল সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড।
টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে সেরা বোলিংয়ের তালিকায় তাসকিনের অবস্থান এখন তিনে। শীর্ষে মালয়েশিয়ার সায়াজরুল ইদ্রুস, গত বছর চীনের বিপক্ষে ৪ ওভারে ৮ রানে ৭ উইকেট নেন তিনি। দুই নম্বরে থাকা নেদারল্যান্ডসের কলিন অ্যাকারম্যান ২০১৯ ভাইটালিটি ব্লাস্টে লেস্টারশায়ারের হয়ে বার্মিংহাম বিয়ার্সের বিপক্ষে ৪ ওভারে ১৮ রানে ৭ উইকেট নেন। এরপরই তাসকিন, তার বোলিং ফিগার ৪-০-১৯-৭। বিপিএলের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড তাসকিন পেছনে ফেলেছেন মোহাম্মদ আমিরকে। ২০২০ বিপিএলে খুলনা টাইগার্সের হয়ে রাজশাহী রয়্যালসের বিপক্ষে ১৭ রানে ৬ উইকেট নেন তিনি।
আরও কয়েকটি রেকর্ডে উঠেছে তানকিনের নাম। বিপিএলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি এখন তিনি, ছাড়িয়ে গেছেন রুবেল হোসেনকে। ৭৯ ইনিংসে তার উইকেট ১১২টি। সবার উপরে সাকিব, ১১৩ ইনিংসে বাঁহাতি স্পিনারের উইকেট ১৪৯টি। ৫ উইকেট নেওয়াতেও শীর্ষে থাকা থিসারা পেরেরাকে ছুঁয়েছেন তাসকিন। বিপিএলের ইতিহাসে এ দুজনই কেবল দুবার করে ৫ উইকেট নিয়েছেন। ৪ উইকেট নেওয়াতে অবশ্য সবার চেয়ে এগিয়ে তাসকিন, সর্বোচ্চ ৫বার ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি।