বুমরাহ জাদুতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের রোমাঞ্চকর জয়
প্রথম ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে হার বড় ধাক্কাই ছিল পাকিস্তানের জন্য। পরের ম্যাচেই প্রতিপক্ষ আবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত। আগের ম্যাচ হারের হতাশা আর পরের ম্যাচের চাপ; কঠিন অবস্থাতেই পড়ে গিয়েছিল বাবর আজমের দল। এই কঠিন অবস্থা থেকে বের হওয়া হলো না তাদের। যদিও প্রথমে বল হাতে নাসিম শাহ, মোহাম্মদ আমির, হারিস রউফদের দাপটে লক্ষ্য ছোটই থাকে। কিন্তু সেটাই পাকিস্তানের জন্য বড় করে তোলেন দুর্বার বোলিংয়ে ভারতের জয়ের জাসপ্রিত বুমরাহ। তোপ দাগেন হার্দিক পান্ডিয়া, অক্ষর প্যাটেলরাও। অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে অল্প পুঁজি নিয়েও পাকিস্তানকে হারিয়ে দিল ভারত।
রোববার রাতে নিউ ইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে 'এ' গ্রুপের ম্যাচে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রোহিত শর্মার দলের এটা টানা দ্বিতীয় জয়, আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে শুরু করে তারা। এই জয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নিল ভারত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮ ম্যাচে এটা তাদের সপ্তম জয়। যুক্তরাষ্ট্রের পর ভারতের বিপক্ষে হার, সুপার এইটের পথ কঠিন হয়ে উঠলো পাকিস্তানের জন্য।
দলটির পরের দুই প্রতিপক্ষ কানাডা ও আয়ারল্যান্ড। এই দুই ম্যাচে জিতলেও বাদ পড়তে হতে পারে বাবর-রিজওয়ানদের। দুই জয়ে 'এ' গ্রুপের শীর্ষে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রেরও দুই জয়, রান রেটে পিছিয়ে তারা দুই নম্বরে। বিশ্বকাপের সহ-আয়োজকদের পরের দুই ম্যাচ ভারত ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। ভারত কঠিন প্রতিপক্ষ, তবে আইরিশদের বিপক্ষে তাদের জেতার ভালো সম্ভাবনা আছে। জিতলেই ইতিহাস গড়ে সুপার এইটে উঠে যাবে যুক্তরাষ্ট্র। ভারতেরও তাই, একটি জয়েই মিলবে পরের রাউন্ডের টিকেট। যুক্তরাষ্ট্রের পর তাদের ম্যাচ কানাডার বিপক্ষে।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা ভারত প্রায় পুরো ইনিংসজুড়েই ধুঁকেছে। নাসিম, আমির, রউফদের বোলিং তোপের সামনে ১১৯ রানে অলআউট হয় তারা। যা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের চতুর্থ সর্বনিম্ন সংগ্রহ, আগে ব্যাটিং করার দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। ৩০ রানে শেষ ৭ উইকেট হারায় ভারত, তাদের কেবল তিনজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করেন। জবাবে জয়ের পথে থেকেও দিক হারায় পাকিস্তান। ম্যাচসেরা বুমরাহর অসাধারণ বোলিংয়ে ৬ রানের ব্যবধান থাকতেই ইনিংস শেষ হয় তাদের। ৭ উইকেটে ১১৩ রান তোলে পাকিস্তান।
ছোট লক্ষ্য তাড়ায় বলার মতো শুরু করতে পারেনি পাকিস্তান। পঞ্চম ওভারে দলীয় ২৬ রানে আউট হন বাবর আজম। ভারতের পেসার জাসপ্রিত বুমরাহর বাইরে করা বুক সমান ডেলিভারিতে খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন ১০ বলে ২টি চারে ১৩ রান করা পাকিস্তান অধিনায়ক। দ্বিতীয় জুটিও বড় হয়নি। ৩৩ বলে ৩১ রান যোগ করেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও উসমান খান, এটাই পাকিস্তানের ইনিংসের সেরা জুটি।
দলীয় ৫৭ রানে উসমানের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ১৫ বলে একটি চারে ১৩ রান করেন। গিয়েই চড়াও হওয়া ফকর জামান বেশি সময় টিকতে পারেননি। ৮ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৩ রান করে বিদায় নেন তিনি। এরপর ঠিক পথেই ছিল পাকিস্তান। কিন্তু তাদের সবচেয়ে বড় বিপদ আসে ১৫তম ওভারে। একপাশ আগলে খেলে যাওয়া রিজওয়ানকে ফিরিয়ে দেন বুমরাহ। ৪৪ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ইনিংস সেরা ৩১ রান করে সাজঘরে ফেরেন রিজওয়ান।
এরপর রান-বলের ব্যবধান বাড়তে থাকে, উইকেটও হারাতে থাকে পাকিস্তান। ইমাদ ওয়াসিম শেষ ওভার পর্যন্ত চেষ্টা করেও কিছু করতে পারেননি। ২৩ বলে ১৫ রান করেন তিনি। শেষ ২ ওভারে পাকিস্তানের দরকার ছিল ২১ রান। এই ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে ইফতিখারের উইকেট নেন বুমরাহ। ডানহাতি এই পেসার ৪ ওভারে ১৪ রানে নেন ৩টি উইকেট। ২৪ রান খরচায় হার্কিদের শিকার ২ উইকেট। একটি করে উইকেট নেন আর্শদীপ ও অক্ষর। ২ ওভারে ১১ রান দেন অক্ষর।
এর আগে ব্যাটিং করা ভারত দ্বিতীয় ওভারেই বিরাট কোহলিকে হারায়। পাকিস্তানের পেসার নাসিমকে চার মারার পরের বলেই কভার পয়েন্টে ধরা পড়েন ৩ বলে ৪ রান করা কোহলি। পরের ওভারে থামেন রোহিতও। শাহিন শাহ আফ্রিদিকে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে রউফের হাতে ধরা পড়েন ১২ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৩ রান করা ডানহাতি এই ওপেনার।
১৯ রানে ২ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন পন্ত ও অক্ষর। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৩৩ বলে ৩৯ রান করেন তারা। ভালোই ব্যাটিং করছিলেন এ দুজন। কিন্তু এই জুটি ভেঙে আবারও ভারতের চাপ বাড়ান নাসিম। কোহলিকে ফিরিয়ে প্রথম আঘাত হানা ডানহাতি এই পেসার ফিরিয়ে দেন ১৮ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২০ রান করা অক্ষরকে। পরের উইকেটেও জুটি হয়, ২২ বলে ৩১ রানের যোগ করেন পন্ত ও সূর্যকুমার যাদব।
এই জুটি ভাঙতেই ভারত দিক হারিয়ে বসে, পাকিস্তানের পেসারদের সামনে রীতমতো আত্মসমর্পণ করে বসে তারা। ৩১ বলে ৬টি চারে ইনিংস সেরা ৪২ রান করেন পন্ত। যা ভারতীয় উইকেটরক্ষক হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। সূর্যকুমার ৭, শিভম দুবে ৩ ও হার্দিক ৭ রান করেন।
ভারতকে সবচেয়ে বেশি ভোগানো নাসিম ৪ ওভারে ২১ রানে নেন ৩টি উইকেট। আমিরও চিলেন দুর্বার, ৪ ওভারে ২৩ রানে ২টি উইকেট নেন বাঁহাতি এই পেসার। প্রথম ওভারে ১৩ রান খরচা করলেও পরে পুষিয়ে নেন রউফ। ৩ ওভারে ২১ রান খরচায় তার শিকারও ৩ উইকেট। বাকি উইকেটটি নেন শাহিন আফ্রিদি, চ৪ ওভারে তার খরচা ২৯ রান।