‘ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হলে বরদাশত করা হবে না’
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাফল্যে উল্লাসে মাতেন ভক্ত-সমর্থকরা। দল খারাপ করলে তারাই আবার নাম লেখান সমালোচকদের তালিকায়। এটাকে অবশ্য খারাপ চোখে দেখেন না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নাজমুল হাসান পাপন। দলের খারাপ ফল বা ব্যর্থতায় সমালোচনা হলে সেটাকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিতে চান তিনি।
কিন্তু কখনও তা সীমা ছাড়িয়ে যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত আক্রমণও করা হয়। ভবিষ্যতে এমন হলে ছাড় দেওয়া হবে না বলে কড়া হুঁশিয়ারী দিয়েছেন পাপন। বিসিবি বস জানান, এমন হলে আর বরদাশত করা হবে, তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে ব্যবস্থা।
কদিন আগে শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সময়টা ভালো যায়নি বাংলাদেশের। সব মিলিয়ে সাত ম্যাচের ৩টিতে জিতলেও বাংলাদেশের খেলার মান ও মানসিকতা নিয়ে আছে প্রশ্ন। বিশ্বকাপ চলাকালীন থেকেই সমালোচনা হয়ে আসছে। বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সেমি-ফাইনাল খেলার সুযোগ পেয়েও সেটা কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ।
অন্যভাবে বললে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১২.১ ওভারে ১১৬ রান তুলে সেমি-ফাইনালে ওঠার চেষ্টাই করেনি তারা। ম্যাচের পর বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত জানান, প্রথম তিন উইকেট নিয়ে চড়াও হওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। তাতে কাজ না হওয়ায় পরে শুধু ম্যাচ জিততে চেয়েছেন তারা। যদিও আফগানদের বিপক্ষে শেষ পর্যন্ত হেরে যায় বাংলাদেশ।
শেষ চারের টিকেট মেলেনি, উল্টোপ হারতে হয়েছে; এরপর শান্তর এমন মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় ওঠে। তবে সেই সমালোচনায় লাগামহীন মন্তব্য করতেও দেখা গেছে অনেককে। গালিগালাজ থেকে শুরু করে ক্রিকেটারদের অপমান করা এবং ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এমন সমালোচনার নজির অবশ্য এবারই প্রথম নয়। আগেও ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত আক্রমণ করে হেয় করা হয়েছে।
অতীতে এদিকে সেভাবে দৃষ্টি না দিলেও ব্যাপারটি ক্রিকেটারদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করে বিসিবি। এ কারণেই কঠোর অবস্থান নেওয়া পরিকল্পনায় বিসিবি। পাপন বলেন, 'একটা জিনিস আপনাদেরকে বলে রাখি, আপনাদের সঙ্গে আমার বহু বছর হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। প্রশ্ন করতে চান, আমি প্রশ্ন করতে না করবো, উত্তর দেবো না, কখনও এ রকম ছিল না। ঠিক হোক, ভুল হোক, আমার যা মনে হয়, আপনাদেরকে বলে এসেছি। কখনও কিছু লুকানোর ব্যাপার ছিল না।'
'কিন্তু তার মানে এই না, এখন যে সমস্ত জিনিস সোশাল মিডিয়াতে চলছে। বিশেষ করে খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত যে অ্যাটাক, আর আক্রমণের একটা নমুনা আছে। দল হেরে গেলে, খারাপ খেললে মানুষজন রাগ করবে, খারাপ কথা বলবে, সেটারও তো একটা সীমা আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেটা সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আমরা এটা আর কোনোভাবেই গ্রহণ করবো না। এটা আপনাদের বলছি, কোনোভাবেই আর এটা বরদাশত করা হবে না। এই সিদ্ধান্ত আজ নেওয়া হয়েছে।'
সীমা রেখে সমালোচনা করার আহ্বান বিসিবি সভাপতির। তার ভাষায়, 'আপনারা অবশ্যই সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু ব্যক্তিগত আক্রমণ, বিশেষ করে বিশ্বকাপ চলাকালীন। এগুলোতে আমাদের কাছে মনে হয়েছে… এটার সংখ্যা খুবই কম, আমি যাদের কথা বলছি। এরা আসলেই ক্রিকেটকে ভালোবাসে কিনা, তারা ক্রিকেটকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে, এটা নিয়ে আমাদের মনে প্রশ্ন আছে।'
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবধার করেন না পাপন। তবে বিভিন্ন সময়ে নানা জনের কাছ থেকে ইনবক্সে খবর বা ভিডিওর লিঙ্ক পান তিনি। বেশিরভাগই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন দেশের ক্রিকেটের প্রধান। কিন্তু এর মধ্যে একজন ইউটিউবারের ভিডিও দেখেছন বিসিবি সভাপতি, যেখানে অধিনায়ক শান্তকে অকথ্য ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে।
যা দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছেন পাপন। এসবে লাগাম টানার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'সমালোচনা হবে, মানুষ রাগ করবে, আমরা তা মানি। কিন্তু যে সমস্ত কথা হয়… আমি সামাজিকমাধ্যমে নেই, আমার ফেসবুক, টু্ইটার কিছুই নেই… একটা দেখে আমার এমন রাগ উঠেছে যে কী বলব। আমাকে অন্যরা পাঠালে খুলিও না, বিশ্বাস করেন, খুলিও নাই। একটা (ভিডিও) দেখে মনে হয়েছে, "বলে কী এসব! একজন ক্রিকেটার দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে, তাকে নিয়ে এমন মন্তব্য!" ওই ক্রিকেটারের কথা চিন্তা করেন, ওর খেলা তো বহুদূর, দেশে ফিরবে কীভাবে, মা-বাবা পরিবারের কাছে মুখ দেখাবে কীভাবে! এটা কী ধরনের কথা!'