সালাউদ্দিন যুগের অবসান, বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথ আউয়াল
কাজী সালাউদ্দিনকে আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি পদে দেখা যাবে না- এটা নিশ্চিত হয়েছিল আগেই। গত ১৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন না করার ঘোষণা দেন সাবেক এই তারকা ফুটবলার। তার দীর্ঘ ১৬ বছরের 'শাসনামল'-এর অবসান নিশ্চিত হলেও নতুন সভাপতি কে হবেন, তা নিয়ে ছিল অনেক জল্পনা কল্পনা। সেসব আজ শেষ হলো। বাফুফেতে সালাউদ্দিন যুগের সমাপ্তি হলো, চার বছর মেয়াদে দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার নতুন সভাপতি নির্বাচিত হলেন তাবিথ আওয়াল।
আজ রাজধানীর একটি হোটেলে চার ঘণ্টাব্যাপী চলা ভোটে দিনাজপুরের তৃণমূল সংগঠক আ ফ ম মিজানুর রহমান চৌধুরীকে বিপুল ব্যবধানে হারিয়ে বাফুফের মসনদে বসলেন তাবিথ আউয়াল। সভাপতি পদে এ দুজনই লড়েছেন। দুই মেয়াদে সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করা তাবিথ ভোট পেয়েছেন ১২৩। মিজানুর রহমানের পক্ষে ভোট পড়ে মাত্র ৫টি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ।
বাফুফে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে তাবিথ বলেন, 'বিগত জুন, জুলাই এবং আগস্টে বিপ্লবী ছাত্র জনতার অবদানে মুক্ত বাংলাদেশে আজ আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। মিডিয়ার মাধ্যমে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমাদের সব ভক্তদের, বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের আমাদের আজ নতুনভাবে নির্বাচিত করার জন্য। আমি তাবিথ আউওয়াল ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং আজ আমার সাথে আছেন নতুন করে নির্বাচিত সিনিয়র সহ-সভাপতি মি. ইমরুল, আমাদের সহ-সভাপতি নাসের জায়েদী, ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী হ্যাপি, সাব্বির আরেফ এবং ফাহাদ করিম।'
'আপনারা সকলে জানেন প্রতিটা মুহূর্তে ফুটবল ফেডারেশনের দায়িত্ব হলো বাংলাদেশের ফুটবলকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া। তাই আমরা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বিগত কমিটিকে, তারা যে অবদানগুলো রেখেছেন। তবে আজ থেকে আমরা জনগণের যে প্রত্যাশা ছিল, সেই প্রত্যাশা পূরণের উদ্দেশ্য নিয়ে দায়িত্ব পালন করা শুরু করছি আমাদের বক্তব্যের মাধ্যমে। আমরা বিশেষ করে ধন্যবাদ জানাতে চাচ্ছি একজন তরুণ লিডার, ক্রীড়াপ্রেমী, আমাদের বর্তমান ক্রীড়া উপদেষ্টা জনাব আসিফ সাহেবকে। উনার দিক নির্দেশনায় এবং উনার সাহসে আমরা এ রকম একটা ভালো, মুক্ত পরিবেশে নির্বাচন করে আমরা আগামী দিনে ফুটবলকে আরও ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।' যোগ করেন তিনি।
বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির পদ মোট ২১টি, পদগুলোয় লড়েছেন ৪৬ জন প্রার্থী। সভাপতি পদে লড়েছেন দুজন। ইমরুল হাসান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে ভোট হয়নি। চারটি সহ-সভাপতি পদে লড়েছেন ছয়জন। এ ছাড়া নির্বাহী সদস্য ১৫টি পদে নির্বাচন করেছেন ৩৭ জন। ১৩৩ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১২৮ জন, ৫ জন ভোট দিতে আসেননি।
সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, তিনি পেয়েছেন ১১৫ ভোট। একই পদে নির্বাচিত হয়েছেন ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী হ্যাপি (১০৮ ভোট), সাব্বির আহমেদ আরেফ (৯০ ভোট) ও ফাহাদ মোহাম্মদ আহমেদ করিম (৮৭ ভোট)। সহ-সভাপতি পদে ভোটের লড়াই করা দুই সাবেক ফুটবলার সৈয়দ রুম্মান বিন ওয়ালি সাব্বির ও শফিকুল ইসলাম মানিক হেরে গেছেন। সাব্বির ৬৬ ভোট পেয়েছেন, মানিকের পক্ষে ভোট পড়েছে ৪২টি। সহ-সভাপতি পদেও ১২৮টি ভোট পড়েছে, একটি ভোট বাতিল হয়েছে।
১৫টি সদস্য পদে লড়া ৩৭ জনের মধ্যে নির্বাচিত ১৪ জন হলেন মো: ইকবাল হোসেন (৯৮ ভোট), আমীরুল ইসলাম (৯৬), মোঃ গোলাম গাউছ (৯২), মোঃ মাহি উদ্দিন আহমেদ (৮৮), টিপু সুলতান (৮৭), মোঃ মঞ্জুরুল করিম (৮৬), জাকির হোসেন চৌধুরী (৮২), মাহফুজা আক্তার কিরন (৮১), কামরুল হাসান হিলটন (৮০), সত্যজিৎ দাস রুপু (৭৬), ইমতিয়াজ হামিদ (৭২), মোঃ ছাইদ হাসান কানন (৬৭), সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া (৬৬) ও বিজন বড়ুয়া (৬২)।
১৫তম সদস্যের পদে সমান ৬১ ভোট পেয়েছেন মোঃ এখলাছ উদ্দিন ও মোঃ সাইফুর রহমান মনি। এই পদটিতে আবারও ভোট হবে। ভোটের দিনক্ষণ পরে জানাবে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া সমঝোতার পথও খোলা আছে দুজনের সামনে।
২০১২ ও ২০১৬ সালে বাফুফের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তাবিথ। ২০২০ সালের নির্বাচনে একই পদে মহি উদ্দিন মহির সঙ্গে ৬৫-৬৫ ভোটে ড্র করেন তিনি। এরপর পুনরায় ভোট হলে ৬৭-৬৩ ভোটে হেরে যান তাবিথ। এবার বাফুফে প্রধানের ভোটে প্রতিপক্ষকে পাত্তাই দিলেন না তিনি। বাফুফের ইতিহাসে এটা ছিল ষষ্ঠ পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন। এস এ সুলতান, কাজী সালাউদ্দিনের পর তৃতীয় নির্বাচিত সভাপতি হলেন তাবিথ।
বাফুফের বিদায়ী সভাপতি সালাউদ্দিন ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো বাফুফের সভাপতি নির্বাচিত হন। মেজর জেনারেল আমিন আহমেদকে হারিয়ে সেবার বাফুফে প্রধানের চেয়ার জেতেন দেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই খেলোয়াড়। পরের দফায়, ২০১২ সালে নির্বাচন করতে হয়নি সালাউদ্দিনকে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৬ সালে বাফুফে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কামরুল আশরাফকে হারিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সভাপতি হন সালাউদ্দিন। সর্বশেষ নির্বাচনে জাতীয় দলের দুই সাবেক ফুটবলার শফিকুল ইসলাম মানিক ও বাদল রায়কে হারিয়ে বাফুফের মসনদে বসেন কিংবদন্তি এই ফুটবলার।