নেপালকে হারিয়ে আবারও দক্ষিণ এশিয়ার রানী বাংলাদেশের মেয়েরা
গত আসরের গল্পটাই যেন এবার নতুন করে লিখে রেখেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। সেমি-ফাইনালে ভুটানকে গোল বন্যায় ভাসানো এবং পরে ফাইনালে নেপালকে হারিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জেতা। হ্যাঁ, গল্পটা আপনারও হয়তো চেনা। গত আসরে শেষের দুই ম্যাচে এই দুই দলকে হারিয়েই নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। এবারও পথটা একইরকম হলো, সেই নেপালকে হারিয়েই টানা দ্বিতীয়বারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার রানীর খেতাব জিতলেন সাবিনা-ঋতুপর্ণারা।
বুধবার কাঠমাণ্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। টানা দ্বিতীয়বার আসরটির শিরোপা জিতলো তারা। গত আসরে প্রথমবারের মতো শিরোপার স্বাদ পায় বাংলাদেশ। গোলাম রাব্বানী ছোটনের তত্ত্বাবধানে প্রথম শিরোপা জেতা বাংলাদেশ এবার চ্যাম্পিয়নের মুকুট জিতলো ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারের কোচিংয়ে। বাংলাদেশ বাধায় টানা দ্বিতীয়বার নিশ্বাস দূরত্বে গিয়েও শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হলো না নেপালের।
গত আসরের সেমি-ফাইনালে ভুটানের জালে গোল উৎসব করে বাংলাদেশের মেয়েরা, হারায় ৮-০ ব্যবধানে। এবারও প্রায় একইভাবে দাপট দেখায় তারা, তুলে নেয় ৭-১ গোলের বড় জয়। এরপর আবারও সামনে হাজির সেই নেপাল। যাদের বিপক্ষে আগের আসরের ফাইনালে ৩-১ ব্যবধানে জেতে বাংলাদেশ। এবার লড়াইটা হলো সমানে সমান, বরং আক্রমণে কিছুটা এগিয়ে থাকলো নেপালই। কিন্তু শেষ হাসি উঠলো তহুরা-মনিকাদের মুখেই।
এবারের আসরে শুরুটা ভালো ছিল না বাংলাদেশের। নিশ্চিত জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নেমে প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করে বাটলারের শিষ্যরা। নিশ্চিতভাবেই আত্মবিশ্বাসে টান পড়ে দলের। যদিও দ্বিতীয় ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়ানোর দারুণ গল্প লিখে ভারতকে ৩-১ গোলে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ফাইনাল নিশ্চিতের ম্যাচে ভুটানকে নিয়ে ছেলেখেলা করেন তহুরা, সাবিনা, ঋতুপর্ণারা। এবার ফাইনালেও জারি থাকলো বাংলাদেশের দাপট, আরও একবার উড়লো লাল-সবুজের বিজয় নিশান।
শিরোপার লড়াইয়ে বল দখলের লড়াইয়ে নেপাল কিছুটা এগিয়ে ছিল। কিন্তু বাকি সবকিছুতেই শাসন করেছে বাংলাদেশ। প্রথমার্ধের মাঝ পেরিয়ে ছন্দ খুঁজে নেওয়া দলটি গোলমুখে শট নিয়েছে ১২টি, লক্ষ্যে ছিল ৮টি শট। এর মধ্যে দুটি খুঁজে নেয় জাল। নেপালের নেওয়া ৮ শটের ৫টি ছিল লক্ষ্যে। বাংলাদেশ ৪টি কর্নার আদায় করে, নেপাল পায়নি একটিও। বাংলাদেশকে এগিয়ে নেন মনিকা চাকমা। কিছুক্ষণ পরই নেপালকে সমতায় ফেরান আমিশা। শেষ দিকে বাঁ পায়ে বাঁকানো দুর্দান্ত শটে বল জালে জড়িয়ে বাংলাদেশকে উল্লাসে মাতান ঋতুপর্ণা চাকমা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ৫২তম মিনিটে সাবিনার পাস পরিষ্কার করতে পারেননি নেপালের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা। গোলমুখের জটলার ভেতর থেকে নিখুঁত টোকায় বল জালে জড়ান মনিকা। বাংলাদেশের এই আনন্দ অবশ্য বেশি সময় টেকেনি। কিছুক্ষণ পরই সতীর্থের থ্রু পাস থেকে বল পেয়ে গোল আদায় করে নেন আমিশা, সমতায় ফেরে নেপাল। ৮১তম মিনিটে বাঁ পায়ের দারুণ বাঁকানো শটে গোল করে বাংলাদেশকে উল্লাসে মাতান আসরের 'মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার'- এর পুরস্কার জেতা ঋতুপর্ণা।