শেষ মুহূর্তের গোলে বাংলাদেশের রোমাঞ্চকর জয়
রেফারির শেষ বাঁশি বেজে উঠতেই বাবন সিংকে কাঁধে তুলে নিলেন এক সতীর্থ। যার গোলে সবার মুখে হাসি ফুটলো, তাকে তো এভাবেই মাথায় তুলে রাখাই যায়। এরপর বাংলাদেশের বাকি ফুটবলাররা জড়ো হয়ে গোল হয়ে দাঁড়ালেন, লাফিয়ে-গলা ফাটিয়ে চললো তাদের উদযাপন। উচ্ছ্বাসের রেশ মাঠে থাকলো আরও কিছুক্ষণ। না, কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতেনি বাংলাদেশ। তবে মালদ্বীপের বিপক্ষে পাওয়া এই জয়টি স্বস্তির, এই জয়টি বিশ্বাস হারিয়ে যেতে না দেওয়ার আনন্দের।
আগের ম্যাচে দাপুটে ফুটবল খেলে অনেক সুযোগ তৈরি করলেও গোল করতে না পারার আক্ষেপ ছিল বাংলাদেশের। হারের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় হাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যরা। দ্বিতীয় ম্যাচে জয় পেতে মরিয়া পাওয়া দলটি আজও পিছিয়ে পড়ে। সেখান থেকে সমতায় ফিরে শেষ পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়ানোর দারুণ গল্প লিখলো বাংলাদেশ, রোমাঞ্চকর জয়ে শেষ করলো বছর। চলতি বছর এটাই বাংলাদেশের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এ বছর ৮ ম্যাচে ৬টিতে হেরেছে বাংলাদেশ, জিতেছে দুটি ম্যাচ। আজকের জয়ের আগে তারা গত সেপ্টেম্বরে হারায় ভুটানকে।
শনিবার বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে পারফরম্যান্সে অনেক এগিয়ে থাকলেও বাংলাদেশ ম্যাচ হেরেছিল ১-০ গোলে। আজ আর একই ভুল করলো না ঘরের মাঠের দলটি। পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে দৃষ্টিনন্দন এক গোলে বাংলাদেশকে সমতায় ফেরান মজিবুর রহমান জনি। শেষ দিকে প্রতিপক্ষের জাল খুঁজে নিয়ে দলকে আনন্দে ভাসান পাপন। মালদ্বীপের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন আলী ফাসির। দলটির বিপক্ষে টানা তিন ম্যাচে অপরাজিত থাকার পর হেরে যাওয়া বাংলাদেশ আবারও জয়ে ফিরলো।
আজকের ম্যাচে একাদশে একটি পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ, কাজেম শাহ কিরমানির বদলে মাঝমাঠে খেলানো হয় মজিবুর রহমান জনিকে। সুযোগ পেয়েই আস্থার প্রতিদান দিলেন তিনি। ২-১ ব্যবধানে শেষ হওয়া ম্যাচের শুরুটা আকর্ষণীয় ছিল না, শুরুতে দুই দলই সাদামাটা ফুটবল খেলেছে। ২৪তম মিনিটে বড় ভুল করে বসেন তপু বর্মণ। তার পাস প্রতিপক্ষের কাছে গিয়ে পৌঁছায়, যা থেকে ইব্রাহিম মাহাদির থ্রু পাস ধরে নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন ফাসির।
সমতায় ফিরতে অবিরত চেষ্টা করে যাওয়া বাংলাদেশ ৪০তম মিনিটে প্রথমবারের মতো গোছালো আক্রমণ সাজায়। কিন্তু বাঁ প্রান্ত থেকে রাকিব হোসেনের ক্রসে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের শট মালদ্বীপের গোলরক্ষক ফিরিয়ে দেন। ফিরতি বলে ফাঁকা পোস্ট লক্ষ্য করে শেখ মোরসালিন শট নিলেও তা ক্রসবারের ওপর দিয়ে চলে যায়। তিন মিনিট পরে সমতা টানে বাংলাদেশ। সতীর্থের পাস ধরে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডান পায়ের দারুণ শটে গোল করেন জনি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পায় বাংলাদেশ। মালদ্বীপের কয়েকজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে শট নেন রাকিব, কিন্তু দারুণ দক্ষতায় ক্রসবারের দিয়ে সেই শট বের করে দেন মালদ্বীপের গোলরক্ষক। আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণে এগোচ্ছিল খেলা কিন্তু কোনো দলই জালের ঠিকানা খুঁতে নিতে পারছিল না। যোগ করা সময়ে আসে সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। ইমনের ক্রস থেকে প্লেসিং শটে বল জালে জড়ান শেষ মুহূর্তে বদলি হিসেবে নামা পাপন।