শেষ বলে ছক্কা মেরে ঢাকাকে জেতালেন শুভাগত, বিফলে জিসানের ঝড়ো সেঞ্চুরি
জয়ের জন্য শেষ ওভারে ঢাকা বিভাগের দরকার ছিল ১২ রান, শেষমেশ হিসাবটা দাঁড়ায় ১ বলে ৬ রান। সিলেট বিভাগের পেসার তোফায়েল আহমেদ অফ স্টাম্পের বাইরে ইয়র্কার করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু পড়ে গেল ফুলটস। কিছুটা হাঁটু গেড়ে বসে দুর্দান্ত শটে কভারের ওপর দিয়ে ছক্কা মেরে ঢাকাকে উল্লাসে মাতালেন শুভাগত হোম। রোমাঞ্চকর জয়ে জাতীয় ক্রিকেট লিগ টি-টোয়েন্টি শুরু করলো ঢাকা।
শুভাগতর এই শটটি খেলার আগ পর্যন্তও ছিল সিলেটের ওপেনার জিসান আলমের খেলা ঝড়ো ইনিংসের রেশ। আগে ব্যাটিং করতে নেমে ব্যাট হাতে ঝড় তোলা তরুণ এই ব্যাটসম্যান মাত্র ৫২ বলে সেঞ্চুরি করেন। যা স্বীকৃতি টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে পঞ্চম দ্রুততম। তার ব্যাটে বড় সংগ্রহও পায় সিলেট। কিন্তু জিসানের খুনে ব্যাটিংয়ের কীর্তি ম্লাণ করে ঢাকাকে জয়ের বন্দরে নিয়ে গেলেন ৩৮ বছর বয়সী শুভাগত।
সিলেটে আজ মাঠে গড়িয়েছে আট দলের অংশগ্রহণের এনসিএল টি-টোয়েন্টি। উদ্বোধনী দিনের প্রথম দুই ম্যাচেই সত্যিকারের টি-টোয়েন্টি প্রদর্শনী দেখা গেছে। দুই ম্যাচেই বড় রান হয়েছে, দেখা গেছে দুর্বার কয়েকটি ইনিংস। বুধবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মূল মাঠে রান পাহাড় টপকে সিলেটকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে ঢাকা। মূল মাঠের পাশেই একাডেমি মাঠে বরিশাল বিভাগকে ৩১ রানে হারিয়েছে ঢাকা মেট্রো।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা সিলেট রান পাহাড়ে চড়ে জিশানের ব্যাটে। তার ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির সাথে তৌফিক খান তুষার ও অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান রাব্বির ছোট কিন্তু কার্যকরী ইনিংসে ২০৫ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে ঢাকা। জবাবে আরিফুল ইসলামের ৯০ পেরনো ইনিংসের পর মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ও শুভাগত ব্যাটে শেষ বলে জয় তুলে নেয় ঢাকা।
লক্ষ্য তাড়ায় ঢাকার পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন ম্যাচসেরা আরিফুল। ২০ বছর বয়সী ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৪৬ বলে ৪টি চার ও ৮টি ছক্কায় ৯৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন। বাকি পথ সামলেছেন ৬৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়া অঙ্কন ও শুভাগত। ২৩ বলে ৪টি চারে হার না মানা ৩০ রান করেন অঙ্কন। শেষ বলে দলকে জেতানো শুভাগত ১৮ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় অপরাজিত ৩১ রান করেন। সিলেটের তিন পেসার খালেদ, আবু জায়েদ ও রেজাউর একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে সিলেটকে বড় সংগ্রহ এনে দেওয়া জিসান শুরুতে নিজেকে কিছুটা গুটিয়েই রাখেন। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে তার রান তোলার গতি, একটা সময়ে তা পরিণত হয় ঝড়ে। ৩৯ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করা জিসান পরের পঞ্চাশ রান তোলেন মাত্র ১৩ বলে, এক ওভারে মারেন ৫ ছক্কা। ৫৩ বলে ৪টি চার ও ১০টি ছক্কায় ১০০ রানের খুনে ইনিংস খেলেন তিনি। তুষার ১৭ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৯ রান করেন। রাব্বি ১৭ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় অপরাজিত ৩০ রান করেন। ঢাকার নাজমুল অপু ২টি এবং এনামুল হক ও তৈবুর রহমান একটি করে উইকেট নেন।
একই সময়ে অন্য মাঠে চলা ম্যাচে টস হেরে আগে ব্যাটিং করা ঢাকা মেট্রো ৪ উইকেটে ১৯২ রান তোলেন। ইমরানুজ্জামান ৩৩ বলে ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৫৩ রান করেন। ম্যাচসেরা ইনিংস খেলা মেট্রোর অধিনায়ক নাঈম শেখও হাফ সেঞ্চুরি করেন, ৩৫ বলে ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় তার ব্যাট থেকে আসে ৬৫ রান। তাহজিবুল ইসলাম করেন ৩৬ রান। বরিশালের মেহেদী হাসান ২টি উইকেট নেন।
জবাবে ৮ উইকেটে বরিশালের ইনিংস থামে ১৬১ রানে। ফজলে মাহমুদ রাব্বি ৫২ বলে ৪টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৭৭ রান করেন। অধিনায়ক সোহাগ গাজী ৩২ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪০ রানে অপরাজিত থাকেন। মেট্রোর রাকিবুল হাসান ৩টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান আবু হায়দার রনি, আলিস আল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম ও আনিসুল ইসলাম।