‘আন্তর্জাতিক অধ্যায় শেষ’- জানিয়ে দিলেন তামিম
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর ফিরবেন না, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়াই ছিল তামিম ইকবালের। তবুও গত কদিনের ঘটনার ধারাবাহিকতায় তার ফেরা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু সেটা আলোচনাই রয়ে গেল, তামিম জানিয়ে দিলেন তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা। অভিজ্ঞ বাঁহাতি এই ওপেনার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে জানিয়েছেন, তার আন্তর্জাতিক অধ্যায় শেষ। অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নিলেন তিনি।
আগামী মাসে শুরু হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তামিমকে দলে চেয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। অধিনায়কের চাওয়া পূরণ হোক, সেটা চেয়েছে বিসিবিও। তাই তামিমের সঙ্গে বৈঠক করতে বুধবার সিলেটে আসেন বিসিবির প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। আগে থেকেই সিলেটে ছিলেন বাকি দুই নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক ও হান্নান সরকার। সেদিন তামিমের সঙ্গে ফরচুন বরিশালের টিম হোটেলে দুই দফায় বৈঠক হয় নির্বাচকদের।
প্রথম দফার বৈঠকে জাতীয় দলে না ফেরার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানান তামিম। এর কিছুক্ষণ পর আবারও তার সঙ্গে বৈঠকে বসেন নির্বাচকরা। এ সময় শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও ছিলেন। দলে ফেরাতে তামিমকে অনুরোধ করেন নির্বাচকরা। নিয়মিত অধিনায়ক শান্ত ও মাহমুদউল্লাহও একই ভূমিকা পালন করেছেন। এই বৈঠকে দলে ফেরার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে নির্বাচকদের কাছে কয়েক দিনের সময় চান তামিম। পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান তিনি।
সেই অপেক্ষা দীর্ঘ করলেন না ১৭ বছর ধরে বাংলাদেশের জার্সিতে খেলা এই ব্যাটসম্যান। সিলেট পর্ব শেষে আজই দলের সঙ্গে ঢাকায় ফেরেন ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক। ঢাকা ফিরেই নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন তামিম। নিজের ফেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া তার আবেগী পোস্টটি হুবুহু তুলে ধরা হলো-
"আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে আছি অনেক দিন ধরেই। সেই দূরত্ব আর ঘুচবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার অধ্যায় শেষ। অনেক দিন ধরেই এটা নিয়ে ভাবছিলাম। এখন যেহেতু সামনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় একটি আসর সামনে, আমি চাই না আমাকে ঘিরে আবার অলোচনা হোক এবং দলের মনোযোগ ব্যাহত হোক।
এটা অবশ্য আগেও চাইনি। চাইনি বলেই অনেক আগে নিজেকে বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে সরিয়ে নিয়েছি। যদিও অনেকেই বলেছেন, অনেক সময় মিডিয়ায় এসেছে, আমিই নাকি ব্যাপারটি ঝুলিয়ে রেখেছি। কিন্তু বিসিবির কোনো ধরনের চুক্তিতে যে নেই, এক বছরের বেশি সময় আগে যে নিজ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে, তাকে পরিকল্পনায় রাখা বা তাকে নিয়ে আলোচনারও তো কিছু নেই। তার পরও অযথা আলোচনা হয়েছে। অবসর নেওয়া বা খেলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত একজন ক্রিকেটার বা যে কোনো পেশাদার ক্রীড়াবিদের নিজের অধিকার। আমি নিজেকে সময় দিয়েছি। এখন মনে হয়েছে, সময়টা এসে গেছে।
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত আন্তরিকভাবেই আমাকে ফেরার জন্য বলেছে। নির্বাচক কমিটির সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। আমাকে এখনও উপযুক্ত মনে করার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। তবে আমি নিজের মনের কথা শুনেছি।
২০২৩ বিশ্বকাপের আগে যা হয়েছে, আমার জন্য তা বড় ধাক্কা ছিল, যেহেতু ক্রিকেটীয় কারণে আমি দলের বাইরে যাইনি। তার পরও আমি যেখানেই গিয়েছি, ক্রিকেট ভক্তদের অনেকে বলেছেন, আমাকে আবার জাতীয় দলে দেখতে চান। তাদের ভালোবাসার কথা ভেবেছি আমি। আমার ঘরেও একজন অনুরাগী আছে। আমার ছেলে কখনও আমাকে সরাসরি বলেনি, কিন্তু তার মাকে বারবার বলেছে, বাবাকে আবার দেশের জার্সিতে খেলতে দেখতে চায়।
ভক্তদের হতাশ করার জন্য আমি দুঃখিত। ছেলেকে বলছি, 'তুমি যেদিন বড় হবে, সেদিন বাবাকে বুঝতে পারবে।"
বাংলাদেশের জার্সিতে তামিম সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছেন ২০২৩ সালের সেপেম্বরে, ওই সিরিজে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলেন তিনি। সর্বশেষ টেস্ট খেলেন একই বছরের এপ্রিলে। সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাট টি-টোয়েন্টিতে অভিজ্ঞ এই ওপেনার ম্যাচ খেলেন ২০২০ সালের মার্চে। এরপর দীর্ঘদিন না খেলে ২০২২ সালের জুলাইয়ে এই ফরম্যাট থেকে অবসর নেন তামিম। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন তিনি, সেই থেকে চুক্তির বাইরে দেশসেরা এই ব্যাটসম্যান।
২০২৩ সালের জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে একদিনের ব্যবধানে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন তামিম। ফিরলেও তার পথচলা আগের মতো ছিল না। অবসর ভেঙে ফেরার পর দেড় বছরে মাত্র দুটি ওয়ানডে খেলেন অভিজ্ঞ এই ওপেনার। এরপর বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়াসহ নানা বাস্তবতায় থমকে যায় তামিমের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। অনেক আগে থেকেই প্রশ্ন, তামিম কি ফিরবেন, খেলবেন আবার বাংলাদেশের জার্সিতে? সম্ভাবনা জেগেও তা আর হলো না। বাংলাদেশ দলে নিজেকে অতীত অধ্যায় বানিয়ে দিলেন তামিম।