‘বাংলাদেশের সবাই আঁচ করতে পেরেছিল, আমি বাদ পড়তে পারি’
ব্যাটে রান নেই অনেক দিন, শতচেষ্টা করেও ব্যর্থতাকে পেছনে ফেলতে পারছিলেন না লিটন কুমার দাস। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল ঘোষণার সময় ঘনিয়ে আসছিল, নিশ্চয়ই তাড়া অনুভব করছিলেন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান। কিন্তু চলমান বিপিএলে ঢাকা ক্যাপিটালসের হয়েও সফলতা মিলছিল না। তার ব্যাট যখন হাসলো, ততোক্ষণে দেরি হয়ে গেছে বেশ। ষষ্ঠ ম্যাচে ৭৩ রানের ইনিংস খেলার পর আজ দেখা পেলেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির। কিন্তু ঝলমলে ব্যাটিংয়ে ফেরার পর্ব রাঙানোর কয়েক ঘণ্টা আগে লিটন খরবটি পেয়ে যান, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে জায়গা হয়নি তার।
মনে হতে পারে, বাদ পড়ার খবরটিই হয়তো তাতিয়ে দিয়েছিল তাকে। কিন্তু লিটন জানালেন, নির্বাচকদের পক্ষ থেকে পরিষ্কার বার্তা দেওয়া হয়েছিল তাকে। ফর্ম বিবেচনায় ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের নিজের কাছেও মনে হয়েছিল, তিনি বাদ পড়তে পারেন। কেবল নিজের কাছেই নয়, বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানের ধারণা; দেশের সবাই আঁচ করতে পেরেছিলেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে তার জায়গা হবে না। সেটা যে কেবলই পারফরম্যান্সের কারণে, তা অকপটেই স্বীকার করে নেন লিটন।
মন খারাপের দিনে লিটনের ব্যাট হেসেছে, ঝরে পড়েছে মনি-মুক্তা। দুর্বার রাজশাহীর বোলারদের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দিয়ে ৫৫ বলে ১০টি চার ও ৯টি ছক্কায় ১২৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিনি। উদযাপনে থেকেছেন সাদামাটা, সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন মলিন চেহারায়। আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছেন কিনা, এমন প্রশ্নে লিটন বলেন, 'আমি আগে বললামই, আমার মনে হয় বাংলাদেশের সবাই আঁচ করতে পেরেছিল আমি বাদ পড়তে পারি, খবরের বদৌলতে। তো এটা স্বাভাবিক।'
দিনটা ভালো ছিল, সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই বলেন লিটন। তবে ঝলমলে ইনিংসটি খেলার আগে যে অনুভূতি ছিল, পরেও সেটাই আছে বলে জানান ঢাকা ক্যাপিটালসের এই ওপেনার। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে থাকা, না থাকা নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে তিনি বলেন, 'খুব ভালো (দিন কেমন ছিল প্রশ্নে)। ভাবনা একই আছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বিষয়টা যদি বলেন, এটা আমার হাতে নেই। এটা সমর্পূর্ণ নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত। শুধু আমার নয়, কাকে খেলাবে, কাকে খেলাবে না, এটা সম্পূর্ণ তাদের সিদ্ধান্ত।'
'আমার কাজ হচ্ছে এখানে পারফর্ম করা, যেটা করতে পারছিলাম না এতোদিন। ওটার জন্য হতাশ ছিলাম। আর ম্যাচের আগে যে মাইন্ড সেটআপ ছিল, ম্যাচের পরও একই মাইন্ড সেটআপ আছে। আমি সব সময় একটা কথা বলি, আজকের দিনটা ইতোমধ্যে অতীত। হ্যাঁ, আমি হয়তো আমার ক্যারিয়ারের জন্য ভালো একটা ইনিংস খেলেছি। কিন্তু পরের ম্যাচে গেলে আমাকে আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। ব্যাক অব দ্য মাইন্ডে থাকবে আমাকে আবার নতুন করে ইনিংস গোছাতে হবে। পরিশ্রম করবো, দেখা যাক কী হয়।' যোগ করেন লিটন।
বাংলাদেশের বাস্তবতায় অনেক সময়ই দেখা যায়, কোনো ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়া হলেও তাকে পরিষ্কার বার্তা দেওয়া হয় না। জানানো হয় না বাদ পড়ার কারণ। তবে লিটনের ক্ষেত্রে তেমন হয়নি, তাকে জানানো হয়েছে কেন তিনি দলে থাকছেন না। তার ভাষায়, 'জ্বি, পরিষ্কার বার্তা দেওয়া হয়েছে। আর নির্বাচকদের তরফ থেকে নয় শুধু, মিডিয়া ঘাটলেই পাওয়া যে, কী কারণে রাখা হয়নি। আপনি যদি দেখেন কী কারণে আমি বাদ পড়েছি, আমার পারফরম্যান্স ছিল না। আপনারা নিউজ করেছেন, এটা ওপেন। এটা না জানানোর কিছু নয়, এটা বেসিক জিনিস।'
অবশেষে রানে ফিরেছেন লিটন। হতে পারতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গিয়েও রানের দেখা পেতে পারতেন তিনি। এটা নিয়ে লিটনের কী ভাবনা? বাংলাদেশ ব্যাটসম্যান বলেন, 'এটা এখন বলা খুবই কঠিন। আমি এটার উত্তর দিয়েছি, সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত নির্বাচকদের। উনারা মনে করেছেন আমি এই মুহূর্তে দলে ফিট হচ্ছি না, তো আমি দলে নেই। যদি আমার খেলা দেখে তারা আবার মনে করে আমি ফিট হওয়ার মতো, তাহলে তারা ফেরাতে পারে। কিন্তু সম্পূর্ণ তাদের সিদ্ধান্ত। আমার ম্যাচ ফোকাস এখন সম্পূর্ণ বিপিএল নিয়ে, আমি চেষ্টা করব এখান থেকে কীভাবে আরও ভালো পারফর্ম করা যায়, এটুকুই।'
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল থেকে বাদ, নতুন করে প্রমাণ করে ফিরে আসতে হবে লিটনকে। অর্থাৎ, পারফর্ম করেই আবার দলে জায়গা করে নিতে হবে। যদিও প্রমাণ করার কিছু দেখেন না লিটন, 'না, প্রমাণ করার আসলে কিছুই নেই। কাউকে (কারও কাছে) প্রমাণ করতে চাই না। একটা জিনিসই সব সময় ব্যাক অব দ্য মাইন্ডে থাকে যে, নিজের ক্রিকেট কীভাবে উন্নতি করা যায়। শেষ কিছু দিন আমার ক্রিকেট খুব একটা ভালো যাচ্ছিল না। চেষ্টা করব যে, আমি আজ যে পারফর্ম করেছি, বলব না পরের দিন গেলেই একই পারফরম্যান্স হবে, কিন্তু চেষ্টা থাকবে ধারাবাহিকতা ধরে রাখার।'
টানা খেলে আসার পর বাদ পড়লে যেকোনো ক্রিকেটারেরই মন খারাপ হয়। লিটনের ক্ষেত্রেও হয়তো তাই। ফিরে আসা ও ভক্তদের উদ্দেশ্যে কোনো বার্তা আছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ভক্ত-সমর্থক থাকবে সবারই। যেমন মানুষ ভালোবাসবে, তেমন মানুষ ঘৃণাও করবে। আমি খেলছি, ফ্যান থাকবেই। কিন্তু নিজের কাছে বড় প্রশ্ন থাকে, আমি ভালো ক্রিকেট খেলছি কিনা। আমার কাছে মনে হয়েছে যে, আমার ক্রিকেট উন্নতি করা দরকার। আমি যদি আমার ক্রিকেট উন্নতি করতে পারি, ভালো পারফর্ম করলে অবশ্যই মানুষ আমাকে ভালোবাসবে।'
'চেষ্টা করব, আমি বলছ না যে রাতারাতি পরিবর্তন হয়ে যাবে। কিছু গাফিলতি হয়তো ছিল, যে কারণে আমি পারফর্ম করতে পারিনি। ওসব অনুশীলন করে ওভারকাম করার চেষ্টা করব। আর চেষ্টা করা ছাড়া আমার হাতে কিছু নেই। এটা আমার কথা না, এটার সবারই, যারা বিশ্বাস করে; আপনার আল্লাহ আমার ভগবান, একই জিনিস। দেওয়ার সময় হলে উনিই দেবেন, আমরা চেষ্টাই করতে পারব। এর থেকে বেশি কিছু করতে পারব না। আমি হয়তো টানা দুই মাস অনুশীলন করে প্রথম বলে আউট হয়ে যেতে পারি। আবার অনেক সময় স্বাভাবিক অনুশীলন করেও রান করতে পারি। দেওয়ার যদি থাকে, নসিবে যদি থাকে যে এটা আমি পাব, সেটা হবে।' বলেন তিনি।