বিফলে বিজয়ের সেঞ্চুরি, রোমাঞ্চকর জয়ে স্বস্তিতে খুলনা
জিততে দুর্বার রাজশাহীকে রান পাহাড় পাড়ি দিতে হতো। বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় দায়িত্বটা কাঁধে তুলে নেন অধিনায়ক এনামুল হক বিজয়। তিনে নেমে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান, দারুণ সব শটে ছুঁলেন সেঞ্চুরির সীমানাও। এরপরও রাজশাহীর জন্য তা যথেষ্ট হলো না, কাজে এলো না বিজয়ের সেঞ্চুরিও। ম্যাচসেরা হাসান মাহমুদের শেষ ওভারের দুর্বার বোলিংয়ে স্নায়ুর চাপ সামলে রোমাঞ্চকর জয় তুলে নিলো খুলনা টাইগার্স।
রোববার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচে দুর্বার রাজশাহীকে ৭ রানে হারিয়েছে খুলনা টাইগার্স। টানা চার হারের পর জয়ের স্বাদ পেল মেহেদী হাসান মিরাজের দল। সাত ম্যাচে তিন জয়ে ছয় পয়েন্ট নিয়ে তালিকার চার নম্বরে আছে খুলনা। আট ম্যাচের তিনটিতে জেতা রাজশাহী তালিকার পাঁচ নম্বর দল।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে খুলনা। দলটির হয়ে ব্যাটিং করা একজন ছাড়া সবাই রানের দেখো পেয়েছেন। যে উইকেটে গেছেন, তার ব্যাটেই উঠেছে ঝড়। আফিফ হোসেন ধ্রুব ও উইলিয়াম বসিস্তো হাফে সেঞ্চুরি করেন। দাপুটে ব্যাটিং করেন নাঈম শেখ, মিরাজ ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনও। এ কজনের ব্যাটে ৪ উইকেটে ২০৯ রান তোলে খুলনা। জবাবে বিজয়ের সেঞ্চুরি ছাড়া লড়েন জিসান আলম, রায়ান বার্লরা। কিন্তু ৭ রানের ব্যবধান থেকেই যায়। ৪ উইকেটে ২০২ রানে থামেন রাজশাহীর ইনিংস।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় দাপুটে শুরুই করে রাজশাহী। উদ্বোধনী জুটিতে ৪ ওভারে ৪৭ রান যোগ করেন মোহাম্মদ হারিস ও জিসান। জুটিতে জিসানের অবদানই ছিল বেশি। পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে আউট হওয়ার আগে ১৫ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩০ রান করেন ডানহাতি এই তরুণ ওপেনার। সপ্তম ওভারে সাজঘরে ফেরা হারিস ১৫ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় করেন ১৫ রান।
তৃতীয় উইকেটে ইয়াসির আলী রাব্বির সঙ্গে ৫৮ রানের জুটি গড়েন বিজয়, উইকেটে গিয়েই ঝড় তোলেন রাজশাহী অধিনায়ক। ইয়াসির ২০ রান করে আউট হওয়ার পর বার্লকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন বিজয়। এই জুটিতেও তার অবদান বেশি ছিল। চোখ ধাঁধানো সব শটে দলকে জয়ের পথেই রাখেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। এই জুটিতে ৩৭ বলে ৭৩ রান পায় রাজশাহী।
১৯তম ওভারের শেষ বলে আউট হন বার্ল, ১৬ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় ২৫ রান করেন তিনি। মেষ ওভারে জয়ের জন্য রাজশাহীর প্রয়োজন দাঁড়ায় ১৭ রান। কিন্তু সারা পাথ শাসন করা বিজয়কে এই ওভারে সেভাবে রান তুলতে দেননি দুর্দান্ত বোলিং করা খুলনার পেসার হাসান মাহমুদ। তার ওভার থেকে ৯ রান তুলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন বিজয়, তবে দল হেরে যায়।
শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করা বিজয় ৫৭ বলে ৯টি চার ও ৫টি ছক্কায় ১০০ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন। টি-টোয়েন্টিতে এটা তার তৃতীয় সেঞ্চুরি, তবে বিপিএলে প্রথম। বাংলাদেশের পক্ষে দুইয়ের বেশি সেঞ্চুরি করা মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান বিজয়। চারটি সেঞ্চুরি করে সবার উপরে তামিম ইকবাল। সেঞ্চুরি করে বিজয়ের হতাশায় ডোবার ম্যাচে খুলনার জয়ের নায়ক হাসান। শেষ ওভারে অসাধারণ বোলিং করা এই পেসার ৪ ওভারে ২৫ রানে ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট নেন আবু হায়দার রনি ও সালমান ইরশাদ।
এর আগে ব্যাটিং করা খুলনার পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন আফিফ। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ৪২ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৫৬ রান করেন। হাফ সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া বসিস্তো আরও দ্রুত রান তোলেন অস্ট্রেলিয়ান এই ব্যাটসম্যান ৩৭ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় করেন অপরাজিত ৫৫ রান। ১৪ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ২৭ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার নাঈম শেখ।
ব্যাটিং অর্ডার পাল্টে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামা মিরাজ ঝড় তুলে ১৩ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় করেন ২৬ রান। শেষ দিকে চলে মাহিদুল অঙ্কনের তাণ্ডব। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ১২ বলে ৪টি ছক্কায় করেন হার না মানা ৩০ রান। আসরজুড়ে দারুণ বোলিং করে চলা রাজশাহীর তারকা পেসার তাসকিন আহমেদ ৪ ওভারে ৩৬ রানে নেন ২টি উইকেট। ৪ ওভারে ৩৩ রানে একটি উইকেট পান জিসান।