১২ বছর পর চিটাগং কিংস নাকি পাঁচ বছর পর খুলনা টাইগার্স
খুলনা টাইগার্সের জন্য স্মৃতিটা খুব বেশি পুরনো নয়। ২০২০ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ফাইনালে ওঠেছিল তারা। তবে চিটাগং কিংসের বেলায় অপেক্ষাটা বেশ দীর্ঘ। এক যুগ আগে (২০১৩ সালে) ফাইনালে ওঠার অনুভূতি পেয়েছিল তারা। অবশ্য এরপর লম্বা সময় ধরে আসরটিতে অংশই নেয়নি দলটি। ফিরেই আবার সম্ভাবনা জেগেছে শিরোপার লড়াইয়ের শেষ ধাপে ওঠার। তবে দুই দলের অপেক্ষার সীমা যেমনই হোক, একটি ব্যাপারে এক বিন্দুতে তারা। একবার করে ফাইনাল খেললেও কখনও শিরোপার স্বাদ পায়নি তারা।
হৃদয় ভাঙার সেই অভিজ্ঞতা অবশ্য স্মৃতিতে আনতে চায় না চিটাগং-খুলনার কেউ-ই। আপাতত মিশনটা ফাইনালের টিকেট কাটার, দুই দলের সামনেই দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠার হাতছানি। এই লক্ষ্যে আজ মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হচ্ছে দল দুটি। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচটি মাঠে গড়াবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। এই ম্যাচের জয়ী দল আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ফাইনাল খেলবে।
নক আউট পর্ব, হারলেই বাদ। মেহেদী হাসান মিরাজের দল খুলনা টাইগার্স অবশ্য আরও আগে থেকেই নক আউটের চাপ বুঝেছে। ১০ ম্যাচে চার জয়ে আট পয়েন্ট নিয়ে প্লে-অফের রেসে টিকে থাকা দলটির জন্য লিগ পর্বের শেষ দুই ম্যাচও ছিল বাঁচা-মরার লড়াই। প্লে-অফ খেলতে দুটি ম্যাচই জিততে হতো তাদের, হারলেই নিতে হতো বিদায়। ওই দুই ম্যাচে রংপুর রাইডার্সকে ও ঢাকা ক্যাপিটালসকে হারিয়ে প্লে-অফে খুলনা। এলিমিনেটরে তাদের শিকার আবারও রংপুর, এবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার জিতে ফাইনালের মঞ্চেও জায়গা করে নিতে চায় তারা।
তিন ম্যাচ ধরে নক আউট পর্বের চাপ সামলে টিকে থাকা খুলনা আরেকটি বাধা পেরোনোর অপেক্ষায়। এই বাধাও টপকাতে পারবেন বলে বিশ্বাস দলটির স্পিনার নাসুম আহমেদের। রংপুরকে বিদায় করার দিনে তিনি বলেন, 'দুই ম্যাচ আগে থেকে আমরা নক আউট খেলছি। আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল সেরা চারে আসা। আজ যেহেতু এলিমিনেটর জিতেছি, পরের ম্যাচটাও জেতার জন্য চেষ্টা করবো। সবাই ফাইনালে উঠতে চায়, আমাদেরও স্বপ্ন আছে। এই বিশ্বাসটা নিয়েই আমরা গত তিন ম্যাচ খেলেছি।'
চিটাগংকে অবশ্য লিগ পর্বে নক আউটের চাপে পড়তে হয়নি। হার দিয়ে আসর শুরু করা চিটাগং এরপর টানা চার ম্যাচ জেতে। ৯ ম্যাচের পাঁচটিতে জিতে প্লে-অফের রেসে ভালোভাবেই টিকে থাকে তারা। একটি জয়-ই যেখানে যথেষ্ট হতো, সেখানে লিগ পর্বের শেষ তিন ম্যাচে জিতে সেরা দুইয়ে জায়গা করে নেয় এক যুগ পর বিপিএল ফেলা দলটি। কিন্তু প্রথম কোয়ালিফায়ারে ব্যাটিং ব্যর্থতায় বরিশালের বিপক্ষে লড়তে পারেনি তারা, হারতে হয় ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে। সেরা দুইয়ে থাকায় আরও একটি সুযোগ পাচ্ছে মোহাম্মদ মিঠুনের দল।
১২ ম্যাচে ছয় জয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ দল হিসেবে প্লে-অফে ওঠে খুলনা টাইগার্স। চিটাগং কিংস ১২ ম্যাচের আটটিতে জিতে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে সেরা চারে পা রাখে। এলিমিনেটর থেকে বিদায় নেওয়া রংপুর রাইডার্সের পয়েন্টও ছিল ১৬। তবে রান রেটে এগিয়ে থাকায় তাদের টপকে দ্বিতীয় স্থান দখলে নেয় চিটাগং। লিগ পর্বে প্রথম দেখায় খুলনার বিপক্ষে হারে তারা, দ্বিতীয় সাক্ষাতে পায় জয়ের দেখা।
প্লে-অফে ওঠার যাত্রায় খুলনার হয়ে দেশি ক্রিকেটাররাই বেশি অবদান রেখেছেন। ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ওপেনার নাঈম শেখ। ১৩ ইনিংসে একটি সেঞ্চুরি ও তিন হাফ সেঞ্চুরিসহ ৪৪.৭২ গড়ে ৪৯২ রান করেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান, যা এখন পর্যন্ত আসরের সর্বোচ্চ। রান তোলার গতির কারণে সব সময় সমালোচিত হওয়া নাঈম এবার ব্যাটিং করেছেন প্রায় ১৪৮ স্ট্রাইক রেটে। প্রয়োজনের সময় অবদান রেখেছেন উইলিয়াম বসিস্তো, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনরাও।
বোলিংয়ে খুলনাকে পথ দেখিয়েছেন আবু হায়দার রনি, ১০ ম্যাচে খুলনার পক্ষে সর্বোচ্চ ১৭ উইকেট নিয়েছেন বাঁহাতি এই পেসার। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে হাসান মাহমুদ, নাসুম আহমেদরাও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কাজের কাজ করেছেন অধিনায়ক মিরাজও, ব্যাটে-বলে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ১৩ ইনিংসে দুই হাফ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৩৫৩, উইকেট নিয়েছেন ১৩টি। টুর্নামেন্টের মাঝামাঝি সময় থেকে ওপেনার হিসেবে খেলা মিরাজ ইনিংসে করেছেন ২২০ রান।
শুরুর দিকে চট্টগ্রামের ব্যাটিং ভরসা ছিলেন উসমান খান ও গ্রাহাম ক্লার্ক; দুজনই পান সেঞ্চুরির দেখা। তবে সেই ধারাবাহিকতা তারা ধরে রাখতে পারেননি। ৮ ম্যাচে ২৮৫ রান করে জাতীয় দলের দলে ডাকে দেশে ফেরেন পাকিস্তানি ওপেনার উসমান। ইংলিশ ব্যাটসম্যান ক্লার্ক এখনও চিটাগংয়ের ভরসার জায়গা। ১২ ইনিংসে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৮৩ রান করেছেন তিনি। শেষ দিকে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দারুণভাবে দায়িত্ব পালন করা শামীম হোসেন পাটোয়ারী ১৩ ইনিংসে দুই হাফ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৩৪৫ রান।
প্রথম দিকে ব্যাটকে কথা বলাতে না পারলেও শেষ দিকে রানে ফিরেছেন ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে বরিশালের বিপক্ষে ৭৫ রানের দুর্বার এক ইনিংস খেলেন তিনি। ব্যাট হাতে অধিনায়ক মিঠুন, হায়দার আলীরাও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বোলিংয়ে চিটাগংয়ের কাণ্ডারী খালেদ আহমেদ। ডানহাতি এই পেসার ১২ ম্যাচের দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৯ উইকেট নিয়েছেন। স্পিনার আলিস আল ইসলাম ১২ ম্যাচে ১৪ উইকেট নিয়ে দলের দ্বিতীয় সেরা। শরিফুল ইসলাম, আরাফাত সানিদের ভূমিকাও উল্লেখ করার মতো।
লম্বা পথচলায় ফাইনালের আগে আরেকটি বাধা। নক আউট পর্বের চাপ সামলানো শিখে ফেলা খুলনা টাইগার্সের মুখে শেষ হাসি উঠবে, নাকি বিপিএলে ফিরেই ফাইনালে ওঠার উল্লাসে মাতবে চিটাগং কিংস; তা দেখতে আরও কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে সবাইকে।