‘নেই’ ধরে পরিকল্পনা সাজিয়েও সাকিবের অপেক্ষায় বাংলাদেশ
বড় ধাক্কাই ছিল বাংলাদেশের জন্য, মাত্র চারদিন আগে করোনা পজিটিভ হন দলের সেরা অস্ত্র সাকিব আল হাসান। শুরু হয়ে যায় হাহাকার। কিন্তু দুই দিনের মাথায়ই সুখবর মিলছে, কয়েক দফায় করোনা পরীক্ষা করিয়ে শুক্রবার জানা গেছে, করোনা নেগেটিভ সাকিব। এতে অবশ্য পুরোপুরি খুশি হওয়ার সুযোগও নেই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ১৫ মে শুরু হতে যাওয়া প্রথম টেস্টে অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারের খেলার ব্যাপারটি এখনও চূড়ান্ত নয়।
করোনা নেগেটিভ হওয়ায় খেলার সম্ভাবনা জেগেছে সাকিবের। যদিও 'সাকিব নেই' ধরেই নিয়েই প্রথম টেস্ট খেলার পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। আবার তার জন্য অপেক্ষাও করা হচ্ছে। সাকিবের খেলার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ১৪ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করবে বাংলাদেশ। এর আগে সাকিবের সুস্থতার ব্যাপারটি নিশ্চিত হবে টিম ম্যানেজমেন্ট। এরপর বিসিবির মেডিকেল দলের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
করোনা নেগেটিভ হওয়ায় আজই চট্টগ্রাম আসছেন সাকিব। সন্ধ্যার ফ্লাইটে চট্টগ্রাম এসে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন বাংলাদেশ প্রাণ ভোমরা। শনিবার থেকে দলের সঙ্গে অনুশীলন শুরু করবেন তিনি। লম্বা সময় ধরে ম্যাচ না খেলায় এবং করোনা আক্রান্ত হওয়ায় এদিন তার ফিটনেস যাচাই করে দেখবে দল। সব কিছু ঠিক মনে হলেই কেবল সাকিবকে খেলানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিসিবি সভাপতি অবশ্য সাকিবের ওপরই সিদ্ধান্ত ছেড়ে দিতে রাজি। সাকিব চাইলে খেলতে পারেন, সেই স্বাধীনতা তাকে দেওয়া আছে বলে জানিয়েছেন নাজমুল হাসান। চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, 'হয়তো সে খেলতে পারে আবার নাও খেলতে পারে। সাকিব, দল ও মেডিকেল দলের উপর নির্ভর করছে। এখানে আবেগী হওয়ার কিছু নেই। করোনা নেগেটিভ হয়ে খেলা, এটা যদি ওয়ানডে হতো; আমরা বলতাম খেলো। এটা পাঁচ দিনের খেলা, আমরা চাইব না ওর জন্য বাড়তি চাপ হোক বা ক্ষতির ইস্যু হোক। ওকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া আছে। ও যদি খেলতে চায়, ও খেলবে। ওকে তো না করার কোনো সুযোগ নেই।'
করোনা আক্রান্ত হওয়ায় পাঁচ দিনের টেস্ট খেলার জন্য সাকিব যথেষ্ট ফিট আছে কিনা, সেটা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে জানিয়ে নাজমুল হাসান বলেন, 'ওর ফিনসেটা নিশ্চিতভাবে দেখবে, ও অনুশীলন করুক, তারপর যদি মনে করে খেলবে। আমাদের বলবে এবং ফিটনেস ট্রেনার যদি সবুজ সঙ্কেত দিয়ে দেয়, তাহলে নিশ্চিতভাবে খেলবে।'
বাংলাদেশের প্রধান কোজ রাসেল ডমিঙ্গোও পুরো ফিট সাকিবকে দলে চান। তিনি বলেছেন, 'নিশ্চিতভাবেই তার ফিটনেস পরীক্ষা করতে হবে। কোভিড থেকে সেরে উঠেছে মাত্র এবং খুব বেশি ক্রিকেট কিন্তু খেলেনি। ও অবশ্যই আমাদের জন্য বড় খেলোয়াড়, যে দলের ভারসাম্য নিয়ে আসে। তাকে আগামীকাল আমরা দেখব। দুই তিন-সপ্তাহেরও বেশি সময় হয়ে গেছে ও ব্যাটিং বা বোলিং কিছু করেনি। হঠাৎ করে এসে পাঁচদিনের টেস্ট ম্যাচ খেলা কঠিন এবং পারিপার্শ্বিক অনেক কিছু চিন্তা করতে হবে। আমরা তাকে আগামীকাল পরীক্ষা করে দেখব।'
'যেকোনো দিনে যে কেউ পুরো ফিট সাকিবকে তার দলে পেতে চাইবে। ৫০ বা ৬০ ভাগ ফিট একজন খেলোয়াড়কে টেস্ট ম্যাচ খেলানো কঠিন। পারফর্ম করার সুযোগ দেওয়ার জন্য একজন খেলোয়াড়কে পুরোপুরি ফিট হতে হবে। টেস্ট ক্রিকেট কঠিন। খেলা এবং অনুশীলনের মধ্যে না থেকে হুট করে এসে খেলা আরও কঠিন। এর ওপর কোভিড থেকে সেরে উঠেছে। আমারও কোভিড হয়েছে, আমি জানি কতটা খারাপ অভিজ্ঞতা হয় এবং শরীরে শক্তি পাওয়া যায় না।' বলেন বাংলাদেশের কোচ।
শেষ পর্যন্ত সাকিব না খেললে তার পরিবর্তে কাকে খেলানো হবে, সেটা এখনও চূড়ান্ত নয়। তবে দীর্ঘদিন পর ডাক পাওয়া মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত বিবেচনায় আছেন বলে জানান ডমিঙ্গো। প্রোটিয়া এই কোচ বলেন, 'বোলিং করতে পারে এমন কাউকে আমাদের বিবেচনা করতে হবে। এটা আমাদের জন্যও চ্যালেঞ্জিং। যেমন আমাদের ইয়াসির আলী রাব্বী আছে। যে কিনা দুর্দান্ত পারফর্ম করছে। কিন্তু আমাদের এমন কাউকে প্রয়োজন যে কিনা ১৫-২০ ওভার বোলিং করতে পারে।'
'আমি নিশ্চিত না যে মুমিনুল ১০-১৫ ওভার বোলিং করতে পারে। শান্তও বোলিং করে, কিন্তু ৬-৭ ওভারের বেশি নয়। ৬-৭ নম্বরে ব্যাটিং এবং ১০-১৫ ওভার বোলিং করতে পারে, শেষ দুই বছর এমন কাউকে খুঁজছি আমরা। সাকিবের অনুপস্থিতিতে আমরা এখনও এমন কাউকে খুঁজছি। সাকিব থাকলে কাজটা সহজ। কিন্তু সাকিবকে খুব বেশি সময় পাওয়া যায় না। সে (মোসাদ্দেক) আমাদের নির্বাচনের ভাবনায় আছে। সে বোলিং করতে পারে। সাকিব খেলতে না পারলে মোসাদ্দেক খেলার জন্য বিবেচনায় আছে।' যোগ করেন ডমিঙ্গো।