নিষ্প্রাণ ড্রয়ে শেষ চট্টগ্রাম টেস্ট, পয়েন্ট ভাগাভাগি
প্লে ফর ইউর হান্ড্রেড'- সেঞ্চুরির তাড়া দিয়ে নিরোশান ডিকলেভাকে বলা দিনেশ চান্দিমালের এই কথাটি ধরা পড়ে স্টাম্প মাইকে। আরও কিছুক্ষণ বোলিং করতে হবে, বাংলাদেশ নিশ্চয়ই এটা ধরে নিয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো বল হাতে নেওয়া মাহমুদুল হাসান জয় দ্বিতীয় বলটি করার সুযোগ পেলেন না। শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসের ৯১তম ওভারের প্রথম বল পরই সিদ্ধান্ত হয়ে গেল, দুই দলের সম্মতিতে ম্যাচ ড্র।
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার মধ্যকার প্রথম টেস্ট ম্যাচটি নিষ্প্রাণ ড্রয়ে শেষ হলো। পঞ্চম দিনের খেলা ৪৯ মিনিট বাকি থাকতেই ড্র মেনে নেয় দুই দল। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করা শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে ৩৯৭ রান করে। জবাবে ৪৬৫ রান করা বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৬৮ রানের লিড পায়। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ২৬০ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। ১৯২ রানের লিড পায় সফরকারীরা। কিন্তু সময় না থাকায় দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করা হয়নি বাংলাদেশের।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হওয়ায় এই ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়েছে। ৪ পয়েন্ট করে পেয়েছে দুই দল। বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ১৬, অবস্থান ৮ নম্বরে। চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের দফায় ইতোমধ্যে ৭টি ম্যাচ খেলেছে মুমিনুল হকের দল। এর মধ্যে একটি ম্যাচে জয় বাংলাদেশের, হেরেছে ৫টিতে। আর একটি ম্যাচে ড্র করলো তারা।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৩তম টেস্ট খেললো বাংলাদেশ। অনেকগুলো ম্যাচ খেলা হয়ে গেলেও লঙ্কানদের বিপক্ষে বলার মতো কিছু নেই বাংলাদেশের ঝুলিতে। ১৭ ম্যাচেই হারতে হয়েছে, বাংলাদেশের জয় মাত্র একটিতে। বাকি পাঁচ ম্যাচ ড্র হয়। তবে জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামের এই ড্রয়ে আছে অনেক প্রাপ্তি। এবার দারুণ লড়াই করে মাথা উঁচু করে ড্র করেছে মুমিনুল হকের দল। ম্যাচে একবারের জন্য মনে হয়নি বাংলাদেশকে শাসন করে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা।
শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংস থামে ৩৯৭ রানে। ম্যাচসেরা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস খেলেন ১৯৯ রানের মহাকার্যকর এক ইনিংস। এ ছাড়া ওশাদা ফার্নান্দো ৩৬, কুশল মেন্ডিস ৫৪ ও দিনেশ চান্দিমাল ৬৬ রান করেন। এই ইনিংসে বল হাতে স্পিন ঘুর্ণি দেখান নাঈম হাসান। ১৫ মাস পরে টেস্টে ফিরে ৬ উইকেট নেন তিনি, যা তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। ধ্রুপদী বোলিং করেন পাঁচ মাস পর টেস্টে ফেরা সাকিব আল হাসান। ৩৯ ওভারে ৬০ রানে তার শিকার ৩ উইকেট। বাকি উইকেটটি নেন তাইজুল ইসলাম। তবে হতাশা ছিল পেসারদের জন্য। দুই পেসার খালেদ আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম কোনো উইকেট পাননি, ১০ উইকেটই নেন স্পিনাররা।
জবাবে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৪৬৫ রান তোলে, মেলে ৬৮ রানের লিড। দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল হাসান জয়। উদ্বোধনী জুটিতে ১৬২ রান যোগ করেন তারা। পাঁচ বছর ও ৬১ ইনিংস পর উদ্বোধনী জুটি থেকে ১০০ বা তার চেয়ে বেশি রানের জুটি ছিল এটা বাংলাদেশের জন্য। সর্বশেষ ২০১৭ সালে উদ্বোধনী জুটি থেকে শতরানের জুটি পেয়েছিল বাংলাদেশ।
জয় ৫৮ রান করে ফিরলেও তামিম তুলে নেন টেস্ট ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি। দেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এগিয়ে যেতে থাকেন টেস্টে ৫ হাজার রানের মাইলফলকের দিকে। কিন্তু প্রথমে পায়ে টান লাগা ও পরে হাতে চোট পাওয়ায় স্বেচ্ছায় মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। ১৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। এটা যেন মুশফিকুর রহিমের জন্য সুযোগ হয়ে আসে। লিটন কুমার দাসের সঙ্গে জুটি বেধে দরকে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি পৌঁছে যেতে থাকেন ৫ হাজার রানের দিকে।
চতুর্থ দিনে লক্ষ্য পূরণ হয়ে যায়, ৬৮ রান করে দেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে পূর্ণ করেন ৫ হাজার টেস্ট রান। এরপর তুলে নেন সেঞ্চুরিও। ২৭০ বলে ৪টি চারে পৌঁছান সেঞ্চুরিতে, যা তার ক্যারিয়ারের ধীরতম। শেষ পর্যন্ত ১০৫ রান করে আউট হন মুশফিক। সেঞ্চুরির পথে ছিলেন লিটন দাসও। কিন্তু তিন অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি তিনি। ১৮৯ বলে ১০টি চারে ৮৮ রান করেন তিনি। এ ছাড়া সাকিব ২৬ ও তাইজুল ২০ রান করেন। বিশ্ব ফার্নান্দোর কনকাশন সাব হয়ে নামা কাসুন রাজিথা ৪টি ও আসিথা ফার্নান্দো ৩টি উইকেট নেন।
দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কা খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। ২ উইকেটে ৩৯ রান তুলে চতুর্থ দিনের খেলা শেষ করে সফরকারীরা। আগের দিন ভোগানো তাইজুল পঞ্চম দিনেও লঙ্কানদের পরীক্ষা নেন, দ্রুত ৩ উইকেট তুলে নেন তিনি। ধনঞ্জয়া ডি সিলভাবে ফেরান সাকিব। ১৬১ রানেই ৬ উইকেট পড়ায় আশা জাগে। কিন্তু দিনেশ চান্দিমাল ও নিরোশান ডিকভেলার কারণে সব আশায় গুড়েবালি। ৯৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন তারা। চান্দিমাল ৩৯ ও ডিকভেলা ৬১ রানে অপরাজিত থাকেন। তাইজুল ৪টি ও সাকিব একটি উইকেট পান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস: ৩৯৭
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৪৬৫
শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংস: ৯০.১ ওভারে ২৬০/৬ (করুনারত্নে ৫২, মেন্ডিস ৪৮, ম্যাথুস ০, ধনঞ্জয়া ৩৩, চান্দিমাল ৩৯*, ডিকভেলা ৬১*; নাঈম সাকিব ১/৫৮, তাইজুল ৪/৮২)।
ফল: ম্যাচ ড্র
ম্যাচ সেরা: অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস (শ্রীলঙ্কা)