চাকরীর বয়স ৩৫ না করার পক্ষে যুক্তি দেখালেন প্রধানমন্ত্রী
সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ না করার পেছনে যুক্তি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর নিয়ে সোমবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের এক সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে এ যুক্তি দেখান দেশের প্রধান নির্বাহী।
তিনি বলেন, "দেশের শিক্ষার্থীরা ১৬ বছরে এসএসসি এবং ১৮ বছরে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে। চার বছর অনার্স এবং এক বছর মাস্টার্স হলে একজন শিক্ষার্থী ২৩ বছরে মাস্টার্স শেষ করে। ২৩ এর পরই পিএসসির জন্য পরীক্ষা দিতে পারে। কারো যদি এক দুই বছর দেরীও হয় সেটা ২৪ বা ২৫ পর্যন্ত হতে পারে। আপনারা জবাবটা নিজেরাই দেন যে এটা দেয়া (চাকরীর বয়স ৩৫) সঠিক কিনা।"
চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ না করার কথা সরাসরি না বললেও প্রধানমন্ত্রী ৩৫তম, ৩৬তম ও ৩৭ তম বিসিএস পরীক্ষায় বয়সভিত্তিক পাশের হার তুলে ধরে দেশবাসীকে এই দাবির যৌক্তিকতা বিচারের দায়িত্ব দেন।
প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এই পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেয়া তুলনামূলক কম বয়সী প্রার্থীদেরই পাশের হার বেশী। ২৯ বছর বা তার উর্ধ্বের প্রার্থীদের পাশের হার খুবই কম।
পরিসংখ্যান দেখাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “৩৫ তম বিসিএস এর ক্ষেত্রে ২৩ থেকে ২৫ বয়সী যারা বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে তাদের পাশের হার হলো ৪০ দশমিক ৭ ভাগ, ২৫ থেকে ২৭ বছর যাদের বয়স তাদের পাশের হার ৩০ দশমিক ২৯ ভাগ, ২৭ থেকে ২৯ যাদের বয়স তাদের পাশের হার ১৩ দশমিক ১৭ শতাংশ আর ২৯ বয়সের উর্ধ্বে যারা তাদের পাশের হার ৩ দশমিক ৪৫ ভাগ।”
৩৬তম ও ৩৭তম বিসিএস এর পরিসংখ্যান নিয়ে তিনি বলেন, “এই বিসিএস এ ২৩ থেকে ২৫ পর্যন্ত যাদের বয়স তারা পাশ করেছে ৩৭ দশমিক ৪৫ ভাগ, ২৫ থেকে ২৭ বছর যাদের তারা পাশ করেছে ৩৪ দশমিক ৭৮ ভাগ, ২৭ থেকে ২৯ যাদের বয়স তাদের পাশের হার ১৪ দশমিক ৮৯ ভাগ আর ২৯ এর উর্ধ্বে যাদের বয়স তাদের পাশের হার ৩ দশমিক ২৩ ভাগ।”
“৩৭ তম বিসিএস এ যারা পরীক্ষা দিয়েছে তাদের মধ্যে ২৩ থেকে ২৫ বছর বয়সীরা পাশ করেছে ৪৩ দশমিক ৬৫ ভাগ, ২৫ থেকে ২৭ যাদের বয়স তারা পাশ করেছে ২৩ দশমিক ৩৫ ভাগ, আর ২৭ থেকে ২৯ যাদের বয়স তারা পাশ করেছে ৭ দশমিক ২০ ভাগ এবং ২৯ এর উর্ধ্বে যাদের বয়স তারা পাশ করেছে শূণ্য দশমিক ৬১ ভাগ”
চাকরীর বয়স ৩৫ করা হলে আরও কি সমস্যা হতে পারে সে বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি কেবল পাশের হিসাবটা দিলাম। এখন যদি ৩৫ পর্যন্ত যান তাহলে অবস্থাটা কি দাঁড়াবে আমাকে একটু বুঝিয়ে বলেন। কারণ তখন তো বিয়েশাদী হবে, বৌ সামলাতে হবে, ছেলে-মেয়ে সামলাতে হবে, ঘর সংসার সমলাতে হবে আবার পরীক্ষা দিতে হবে। তখন তো আরও করুণ অবস্থা হয়ে যাবে।”
চাকরির বয়স ৩৫ করার দাবিতে যারা আন্দোলন করছে তাদের পেছনে ‘অন্যকেউ অনুপ্রেরণা দিতে পারে’ বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
“কাজ করবার তো একটা সময় থাকে, একটা এনার্জি থাকে। দাবি তোলার জন্যি যদি তোলা হয় তাহলে আমার কিছু বলার নাই। কারণ এ দাবিটা তোলার জন্য বা আন্দোলনের জন্য নিশ্চই কোন জায়গা থেকে অনুপ্রেরণা পাচ্ছে। কিন্তু এর পরিনতিটা কি হবে?”
চাকরিতে প্রবেশের বয়স বেশী হলে তার ফলে কাজের গতিও শ্লথ হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
“৩৫ বছর পরীক্ষা দিলে এরপর পরীক্ষার রেজাল্ট তারপর ট্রেনিং, এসবে আরও দুই বছর লাগে। চাকরিতে ২৫ বছর না হলে কিন্তু ফুল পেনশন পায় না। আচ্ছা পেনশন না হয় না পেল, কিন্তু একটা সরকার এভাবে কাদের দিয়ে চালাবে? আমরা সবসময় বলি যারা যুবক, যারা মেধাবী, যাদের কর্মক্ষমতা ভালো, তাদের দিয়েই আমার দেশের উন্নয়নের কাজটা করতে হবে। এটাতো খুব স্বাভাবিক ব্যাপার, বয়সটা বাড়লে কাজের গতিটাও একটু শ্লথ হয়।”
এই দাবির বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরার পর প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকেই এটি নির্ধারণ করার অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, “আমি শুধু হিসেবটা দিলাম, তারপর দেশবাসী বিচার করুক, আপনারা বিচার করেন।”