তারা হজ্বে যেতেন পকেট কাটতে
দেশে তারা পেশাদার চুরি, ছিনতাইকারী। তবে হজ্বের সময় এলেই দুই মাসের জন্য সৌদি আরবে পাড়ি জমান তারা। উদ্দেশ্য পবিত্র হজ্ব পালন নয়। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা হাজীদের ডলার, পাউন্ড হাতিয়ে নেয়ায় ছিল তাদের টার্গেট।
২০০৮ সালে ২৪ লাখ টাকা সমমূল্যের বিদেশি মুদ্রাসহ সৌদি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন চক্রের মূলহোতা মাসুদুল হক ওরফে আপেল। তিন মাস জেল খেটে দেশে ফিরে তৈরি করেন নতুন পাসপোর্ট। এভাবেই হজ্বের সময় এলেই সৌদি যেতেন সংঘবদ্ধ চক্রের ১২ সদস্য।
শনিবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা থেকে চক্রের ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) (উত্তর)। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন ডিবি।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মহরম আলী দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, চক্রটি রাজধানীতে বিশেষ করে বিমানবন্দরে আসা যাত্রীদের আত্মীয়-স্বজনদের টার্গেট করে চুরি – ছিনতাই ও পকেট মারতো। আর হজ্বের সময় আসলেই হাজীর ছদ্মবেশে সৌদি আরব গিয়ে পকেট মারতো। দুই মাসে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে দেশে ফিরতো তারা।
এডিসি আরও বলেন, ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরই তারা দুই মাসের জন্য সৌদি আরবে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে। এ বছরও তারা সৌদি আরবে যাওয়ার চেষ্টা করছিলো বলেও জানান তিনি।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, চক্রের মূলহোতা আপেল এক সময় বিমানবন্দর এলাকায় ১০/১২ বছর কুলির কাজ করেছে। এ কাজ করতে গিয়েই এক সময় চুরি-ছিনতাই ও পকেটমার চক্রের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। তারপর জড়িয়ে পড়ে এ অপরাধে। কয়েক বছরের মধ্যে নিজেই গড়ে তুলে পকেট মার চক্র। মাসিক বেতনে সোর্স নিয়োগ করে বিমানবন্দরে আসা আত্মীয়-স্বজনদের টার্গেট করতো তারা। নানা কৌশলে তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে টাকা ও মূলবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নিতো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, আপেলের নেতৃত্বে ১২ জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র রাজধানীতে সক্রিয় রয়েছে। চক্রের প্রত্যেক সদস্যের রয়েছে পাসপোর্ট। তারা দেশে ১০ মাস চুরি-ছিনতাই করলেও হজ্বের সময় এলেই আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ করে সৌদি চলে যান। হাজীদের পকেট কেটে প্রত্যেকে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে দেশে ফিরে আসে।
সংশ্লিষ্ট ডিবির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, দেশে সারাবছর চুরি –ছিনতাই করে যা কামাতো, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা সৌদি গিয়ে দুই মাসে কামাতো চক্রের সদস্যরা। সৌদি আরবে গিয়ে পকেট কাটার অপকর্মটি শুরু করে আপেল। তার নেতৃত্বে প্রতিবছর ১০ থেকে ১২ জন সৌদি যেতেন এই অপকর্ম করতে।
কর্মকতারা জানান, শনিবার বিমানন্দর থানার গোল চত্ত্বর এলাকার ফুটওভার ব্রীজ এলাকা থেকে চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করে ডিবি। এসময় পকেট কাটার ব্লেড ও চেতনাশক বিভিন্ন ওষুদ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বিমানবনদর থানায় একটি মামলা করেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, সুমন ভুঁইয়া ওরফে সোমা (৩৬), মাসুদুল হক ওরফে আপেল (৪২), রুহুল কুদ্দুস (৪৮), লাবু মিয়া (৩২), জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহিদ (২৮), দুলাল মোল্লা (৫০)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের বাকী ৬ জনের নাম পাওয়া গেছে। চক্রের পলাতক সদস্যরা হলো, সজিব (৩০), ওমর (৩২), শহিদুল্লাহ (৩০), তাজু (৩৫), তুলু (৩৬) ও জামাল। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে ডিবি।