পবিত্র হজ শনিবার
হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে কাল শনিবার (১০ আগস্ট) থেকে। পবিত্র মসজিদুল হারাম (কাবা শরীফ) থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে মিনায় এখন অবস্থান করছেন হজযাত্রীরা।
সারা পৃথিবীর লাখ লাখ মুসলমান গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যার পর নিজ নিজ আবাস এবং মসজিদুল হারাম থেকে ইহরাম বেঁধে মক্কা থেকে মিনার উদ্দেশে যাত্রা করেন। এর মাধ্যমে সূচনা হয়েছে মুসলমানদের সর্ববৃহৎ বিশ্বসমাবেশ ও অন্যতম ফরজ ইবাদত পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা। মিনায় যাত্রার মধ্য দিয়ে হজ পালনের সূচনা হয়, যা শেষ হবে ১২ জিলহজ শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করে।
ইসলামের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভের একটি হচ্ছে পবিত্র হজ। এটি বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমানের তাদের জীবনে অন্ততপক্ষে একবার অবশ্যই হজ পালন করতে হবে।
ধারাবাহিকভাবে ধর্মীয় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালনের মধ্যদিয়ে হজ পালন করতে হয়। সৌদি আরবের পশ্চিমাঞ্চলীয় ইসলামের পবিত্র নগরী মক্কা ও এর আশেপাশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে হজ পালন শেষ করতে পাঁচদিন সময় লাগে।
সেলাইবিহীন দুই টুকরা সাদা কাপড় পরিহিত লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে- ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারিকা লাকা। (আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, আপনার কোনো শরীক নেই, সকল প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু আপনারই, সব সাম্রাজ্যও আপনার, আপনার কোনো শরীক নেই)।
আজ শুক্রবার (৯ আগস্ট) হাজিরা মিনায় অবস্থান করবেন। আগামীকাল শনিবার ফজরের নামাজ আদায় করে মিনা থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের ময়দানে যাবেন এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করবেন। এরপর সেখান থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে মুজদালিফায় গিয়ে রাতযাপন ও পাথর সংগ্রহ করবেন। ভোরে ফজরের নামাজ আদায় করে মুজদালিফা থেকে মিনায় ফিরবেন।
তারা শয়তানকে উদ্দেশ্য করে পাথর নিক্ষেপ করবেন, কোরবানি দেবেন, মক্কায় গিয়ে কাবা শরীফ তাওয়াফ করবেন। তাওয়াফ, সাঈ শেষে আবার মিনায় ফিরে ১১ ও ১২ জিলহজ (সৌদি আরবের তারিখ অনুযায়ী) পর্যন্ত অবস্থান করবেন।
ইসলামের বিধান মোতাবেক, ১০ জিলহজ মিনায় প্রত্যাবর্তনের পর হাজিদের পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। শয়তানকে (জামারা) পাথর নিক্ষেপ, আল্লাহর উদ্দেশে পশু কোরবানি (অনেকেই মিনায় না পারলে মক্কায় ফিরে গিয়ে পশু কোরবানি দেন), মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাঁটা এবং তাওয়াফে জিয়ারত। এরপর ১১ ও ১২ জিলহজ অবস্থান করে প্রতিদিন তিনটি শয়তানকে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপ করবেন হাজিরা। সবশেষে কাবা শরিফকে বিদায়ী তাওয়াফের মধ্য দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।
সৌদি আরবের নিরাপত্তা বাহিনীর মুখপাত্র বাসাম আতিয়া বলেন, হজযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘রাষ্ট্রের সকল সশস্ত্র বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা ‘মহান আল্লাহ’র অতিথিদের’ সেবা করতে পেরে গর্বিত।
হজ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হাতিম বিন হাসান কাদি বলেন, এ বছর হজযাত্রীদের ‘কোন এজেন্ট ছাড়াই ১৮ লাখের বেশি ভিসা অনলাইনে সরবরাহ করা হয়েছে। আমাদের জন্য এটি একটি বড় সফলতা।’
৪০ বছর বয়সী মিশরের হজযাত্রী মোহাম্মাদ জাফর বলেন, ‘ইসলামের এই পবিত্র স্তম্ভ পালনের মধ্যদিয়ে আমরা আমাদের জীবনের সকল পাপ মোচনের চেষ্টা করি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এই সমাবেশ সত্যিই বিস্ময়কর।’
তিনি আরো বলেন, এটি ‘একটি অবর্ণনীয় অনুভূতি।’
এই প্রথমবারের মতো পবিত্র হজ পালনে আসা ৫০ বছর বয়সী আলজেরীয় এক নাগরিক বলেন, ‘এটি একটি অবর্ণনীয় অনুভূতি। কেবলমাত্র আপনি এটা পালন করলে এই অনুভূতিটা বুঝতে পারবেন।’
তার নারী সঙ্গী বলেন, ‘এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ ও মুহূর্ত।’