বগুড়া: মৌসুমী ফসলের চারাতেই চাষীদের আয় ২৫ কোটি টাকা
বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলার শাহনগর ও আশেপাশের কয়েকটি গ্রামে চাষীরা ধানের পরিবর্তে বাণিজ্যিকভাবে শীতকালীন ও অন্যান্য মৌসুমী ফসলের চারা উৎপাদন করছেন।
চাষীরা বলছেন, ধানে পরপর কয়েক বছর লোকসান গুণতে হয়েছে তাদের। ওদের মধ্যেই কজন চাষী প্রায় দেড় যুগ আগে এক হেক্টর জমিতে মরিচ, টমেটো, বাঁধাকপি ও ফুলকপিসহ মৌসুমী অন্যান্য ফসলের চারা উৎপাদন করতে শুরু করেছিলেন। এসব সবজির ভালো বাজার তৈরি হওয়ায় একশ হেক্টর জমিতে অন্তত দুশো চাষী যুক্ত হয়েছেন। তারা শীতকালীন ও অন্যান্য মৌসুমী ফসলের চারা উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠাচ্ছেন।
শাহনগর ও আশেপাশের কয়েকটি গ্রামে উৎপাদিত ফসলের চারা বিক্রি হয় বছরে গড়ে ২৫ কোটি টাকার। তথ্যটি দিলেন শাহনগর বীজ-চারা উৎপাদনকারী সমিতির সহ-সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন। দু’বছর আগে তিনি ভারতীয় তিনজন ব্যবসায়ীর কাছে ন’শ টাকা হাজার হিসেবে মরিচের ৬ হাজার চারা বিক্রি করেন।
“আমার বিশ্বাস, সরকারি সহযোগিতা পেলে আমরা পাশের দেশে ফসলের চারা রফতানি করতে পারব,” মোফাজ্জলের মত। তিনি নিজের এক হেক্টর জমির পুরোটাতেই ধান চাষ করতেন আগে। পরপর কয়েক বছর লোকসান হয়েছে তারও। তাই গত কয়েক বছর ধরে ধানের পরিবর্তে সবটুকু জমিতেই নানা ধরনের ফসলের চারা উৎপাদন করছেন।
শাহনগর গ্রামের লাল মিয়া প্রামাণিক তার দশমিক ৫০ হেক্টর জমিতে আগে বোরোসহ অন্যান্য মৌসুমী ফসল চাষ করতেন। লাভ পাচ্ছেন না তিনিও। তাই এখন তার বেশিরভাগ জমিতে, মানে প্রায় দশমিক ৩৫ হেক্টর জমিতে মৌসমী ফসলের চারা বুনছেন। তার ছেলে মজনু মিয়া প্রামাণিক বাবার জমিতে ফি বছর ৩০ লাখ মৌসুমী ফসলের চারা উৎপাদন করেন।
মজনু জানালেন, প্রতিটি চারা বিক্রি হয় এক টাকা দরে। তবে, মাঝে মাঝে কিছুটা কম দামেও চারা বিক্রি করতে হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফুয়ারা খাতুন জানান, চারা উৎপাদনকারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসম্মত চারা উৎপাদনের জন্য ৬৫জন চাষীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তাছাড়া ৩৫টি জেলার বিভিন্ন বাজারে যেতে শুরু করেছে এসব চারা। অন্যান্য জেলায়ও বাজার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
চাষীরা বলছেন, সরকারি সহযোগিতা পেলে এ গ্রামে উৎপাদিত চারা দেশের মোট চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করতে পারবে।
তাদের ধারণা, যেভাবে চারার ব্যবসা সম্প্রসারিত হচ্ছে তাতে শিগগির এ উপজেলার চাষীরা কেবল চারা বিক্রিতেই বছরে গড়ে ৫০ কোটি টাকা আয় করতে পারবেন।