বগুড়ায় বিমানবন্দর পরিদর্শনে বিমানবাহিনী প্রধান, কবে উড়বে বিমান?
বগুড়া বিমানবন্দর বাণিজ্যিকভাবে চালু করার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বগুড়া বিমানবন্দরের রানওয়ে পরিদর্শন করেছেন বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানসহ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিমানবন্দরটিতে ছোট বিমান ওঠানামার ক্ষেত্রে রানওয়ে প্রস্তুত ছাড়া তেমন কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
রোববার (১২ জানুয়ারি) সকালে হেলিকপ্টারযোগে বগুড়া বিমানবন্দরে অবতরণ করেন বাহিনীপ্রধান। পরে বিমানবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে রানওয়ে পরিদর্শন করেন তিনি।
বাণিজ্যিক বিমানবন্দর হিসেবে চালুর জন্য যাত্রা শুরু করলেও গত প্রায় দুই যুগ ধরে ফ্লাইং ইন্সট্রাকটর স্কুল হিসেবে বিমানবাহিনীতে ব্যবহার হচ্ছে এই বিমানবন্দর। এর রানওয়ে ৪ হাজার ৫০০ ফুট, যা শুধু ছোট আকারের বিমান ওঠানামার জন্য উপযুক্ত। বাণিজ্যিকভাবে বিমান চলাচলের জন্য অন্তত ৬ হাজার ফুট রানওয়ে দরকার।
পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকে বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান বলেন, 'এটি একটি এয়ার ফিল্ড।শুধু রানওয়ের দৈর্ঘ্যটি ছোট। আমরা ইচ্ছা করলে এখনও ছোট বিমান নামাতে পারি। ইমিডিয়েটলি আমাদের যেটি প্রয়োজন, এটাকে রিকার্পেটিং করা। এ কাজে আমাদের সহযোগিতা করবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। এটার রানওয়ে যেটা আছে, সেটা ব্যবহারযোগ্য করে ফেলব। ব্যবহারযোগ্য করার জন্য বেবিচক প্রস্তুত আছে। এখানে আমার চেয়ারম্যান আছেন; তিনি বলেছেন, খুব দ্রুত এটা চালু করতে পারবেন তারা।'
তিনি বলেন, 'রানওয়ের দ্যৈর্ঘ যেটা আছে,৪ হাজার ৫০০ ফুটের একটু বেশি, সেটা বাড়ানো সম্ভব না। তবে যা আছে, পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারব। জরুরি সময় যেকোনো ছোট বিমান অবতরণ করতে পারবে। একটু বড় বিমানের ক্ষেত্রে রানওয়ে বড় করতে হবে। সেটা সরকারি বিধি অনুযায়ী হবে। আমরা যদি অনুমোদন পাই, সরকারের কাছে অবশ্যই পারস্যু করব।'
এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান বলেন, 'বগুড়ার বিমানবন্দরটি চালু করতে ইতিমধ্যে একটি পরিকল্পনা করেছি। সেটি চার ধাপে করা হয়েছে। বর্তমানে যেটি আছে, এর সেকেন্ড ধাপে গেলে মোটামুটি ছোট বিমান আসতে পারবে। সেটায় ৬ হাজার ফুট রানওয়ে লাগবে। তবে বড় বিমান আনতে ৮ হাজার ফুট দৈর্ঘ্যের রানওয়ে লাগবে। আরও বড় বিমান আনতে ১০ হাজার ফুট রানওয়ে লাগবে। ওইটা পরের ধাপ। কিন্তু ৬ হাজার ফুটের রানওয়ে করতে আমি যদি সরকারের অনুমোদন ও ফান্ড পাই, তবে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে এটি চালু করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।'
এছাড়া কৃষি পণ্যসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক কাজে বিমানবন্দরটি ব্যবহারের জন্য সরকারের বিভিন্ন ধরনের গবেষণার প্রয়োজন আছে। এগুলোর সমন্বয়ে এই বিমানবন্দরটি বানিজ্যিক রূপ পাবে বলেও জানান বিমানবাহিনী প্রধান।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বগুড়ায় বিমানবন্দর স্থাপনে প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯৮৭ সালে। কিন্তু নানা জটিলতায় সেই উদ্যোগে ভাটা পড়ে। এরপর ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারের শেষদিকে এখানে বিমানবন্দর স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। ওই সময় ২২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার।
এরপর ১৯৯৫ সালে সদর উপজেলার এরুলিয়া এলাকায় বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ১১০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ১৯৯৬ সালে সেখানে প্রকল্পের আওতায় রানওয়ে, কার্যালয় ভবন ও কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করা হয়। ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০০০ সালে।
ওই সময় থেকে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান ওঠানামা করে এখানে। পর্যায়ক্রমে এখানে বেসামরিক বিমান চলাচলের ব্যবস্থা করার কথা ছিল। কিন্তু পরে আর সেটি হয়নি।