বিমান ছিনতাইচেষ্টা: নায়িকা শিমলাকে জিজ্ঞাসাবাদ
২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ ময়ূরপঙ্খী ছিনতাইয়ের চেষ্টা করতে গিয়ে নিহত হন পলাশ আহমেদ। তার সাবেক স্ত্রী চিত্রনায়িকা শিমলাকে বৃহস্পতিবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।
সকালে প্রায় ঘণ্টা তিনেক তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া।
তদন্তকারী কর্মকর্তা শিমলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে জানান। তবে সেখানে শিমলা কী বলেছেন বা কোনো তথ্য দিয়েছেন কিনা তা নিয়ে কথা বলেননি এই কর্মকর্তা।
জানা গেছে, শিমলা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে বসবাস করছেন। সম্প্রতি ভারত থেকে ফিরে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটে হাজির হন তিনি।
প্রসঙ্গত, ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকালে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-১৪৭ নম্বর ফ্লাইটটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন পলাশ। পরে পাইলট বিমানটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করলে, যৌথ বাহিনীর অভিযানে জিম্মি ঘটনার অবসান হয়। এরপর উড়োজাহাজ থেকে যাত্রী-ক্রুসহ সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়।
কমান্ডো অভিযান নিয়ে ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ২৫-২৬ বছর বয়সী অস্ত্রধারী তরুণকে আটক করা হয়। পরে তিনি মারা যান।
সেদিন কী ঘটেছিল
বাংলাদেশ বিমানের নতুন উড়োজাহাজ ময়ূরপঙ্খী ১৪২ জন যাত্রী ও ৫ জন ক্রু নিয়ে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা দেয় সেদিন বিকাল সাড়ে চারটার দিকে। চট্টগ্রাম হয়ে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের উড়োজাহাজটি বিজি-১৪৭ ফ্লাইট হিসেবে দুবাই যাচ্ছিল।
আকাশে ওড়ার পরপরই উড়োজাহাজটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন অস্ত্রধারী এক ব্যক্তি।
একজন ক্রু জানান, সাড়ে চারটায় কিছু সময় পর ময়ূরপঙ্খী আকাশে প্রায় ১৫ হাজার ফুট ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। তখন উড়োজাহাজের ভেতরে যাত্রীদের আসনে থাকা এক ব্যক্তি উঠে ককপিটের দিকে আসেন। এ সময় ওই ব্যক্তি এক ক্রুর কাছে যান। তিনি ওই ক্রুকে ধাক্কা দিয়ে পিস্তল ও বোমাসদৃশ বস্তু বের করে বলেন, “আমি বিমানটি ছিনতাই করব। আমার কাছে পিস্তল ও বোমা আছে। ককপিট না খুললে আমি বিমান উড়িয়ে দেব।”
এর মধ্যে অন্য কেবিন ক্রুরা ককপিটে থাকা পাইলট ও সহকারী পাইলটকে উড়োজাহাজে অস্ত্রধারী আছে মর্মে সাংকেতিক বার্তা পাঠান। ঠিক এ সময় উড়োজাহাজটি চট্টগ্রাম ও ঢাকার মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থান করছিল।
বার্তা পেয়ে পাইলট মোহাম্মদ শফি ও সহকারী পাইলট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ককপিটের দরজা বন্ধ করে দেন এবং কৌশলে জরুরি অবতরণের জন্য চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে বার্তা পাঠান।
ওদিকে ককপিটের দরজা না খোলায় অস্ত্রধারী ব্যক্তিটি চিৎকার করছিলেন। এক পর্যায়ে ওই অস্ত্রধারী উড়োজাহাজের ভেতরে ‘বিস্ফোরণের’ মতো ঘটান। ততক্ষণে উড়োজাহাজটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
অবতরণের পর কৌশলে উড়োজাহাজের ডানার পাশের চারটি ইমারজেন্সি গেট দিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে নিয়ে আসা হয়।
ময়ূরপঙ্খী উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি ঘিরে ফেলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, আর্মড পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উড়োজাহাজের ভেতরে তল্লাশি চালিয়ে ছিনতাই চেষ্টাকারী পলাশ আহমেদকে বের করে আনেন।
১৬২ আসনের ময়ূরপঙ্খী উড়োজাহাজে ইকোনমি ক্লাসে ১৩৩ জন ও বিজনেস ক্লাসে ৯ জন যাত্রী ছিলেন। এ ছাড়া ছিলেন পাঁচজন ক্রু। এদের দুজন নারী। ককপিটে পাইলট ছিলেন দুজন।
উড়োজাহাজটি ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিমানের বহরে যুক্ত করা হয়।