মিন্নির জামিন প্রশ্নে রায় বৃহস্পতিবার
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডের মামলার তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে জামিন দেওয়া হবে কিনা সে বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রায় দেবেন হাইকোর্ট।
জামিন প্রশ্নে জারি করা রুলের ওপর বুধবার শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিুজর রহমানের সমন্বয়ে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।
মিন্নির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না ও মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন বাপ্পী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শাহানা পারভীন। অ্যামিকাস কিউরি (আদালত বন্ধু) হিসেবে সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী বক্তব্য দেন।
আইনজীবী জেড আই খান পান্না আদালতে বলেন, “মিন্নির তিন মাস আগে বিয়ে হয়। তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। সে একজন নারী।”
তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ বা পুলিশ বলছে মিন্নি পরিকল্পনাকারী। তাদের এই বক্তব্য সঠিক যদি ধরেও নিই, তবে সেটা বিচারে প্রমাণিত হবে। তখন তার সাজা হবে কি হবে না তা নিয়ে বলার কিছু নেই। পুলিশ বলছে, তদন্ত শেষ পর্যায়ে। তাই জামিন চাচ্ছি। জামিন দিলে তদন্ত বাধাগ্রস্থ করা কোনো সুযোগ নেই।”
এই আইনজীবী নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির টেলিফোনে কথোপকথনের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগে বিষয়ে বলেন, “পত্রিকায় এসেছে, নয়ন বন্ডের সঙ্গে পুলিশের ৭৭ বার কথা হয়েছে। একজন এসআই আসাদের সঙ্গে একশ ১ মিনিট ২৪ সেকেন্ড কথা হয়েছে নয়ন বন্ডের। নয়ন বন্ড তো পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের সৃষ্টি। অথচ এখন সেই দোষ আমাদের ওপর চাপানো হচ্ছে।”
তিনি বলেন, মামলার এজাহারভুক্ত সব আসামিকে এখনও গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। অথচ মিন্নিকে নিয়ে তাদের যত তোড়জোড়।
এ আইনজীবী শুনানিকালে রিফাতকে কোপানোর ভিডিও ফুটেজ আদালতে দাখিল করে বলেন, এই ভিডিও ফুটেজ পুলিশ ১১টি খন্ডে ভাগ করেছে।
জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, “এটা স্পর্শকাতর মামলা। তার স্বামীকে কুপিয়ে আহত করার পর সে(মিন্নি) নয়ন বন্ডের সঙ্গে মোবাইলে ৫ বার কথা বলেছে। ঘটনার আগে ২৪ ঘন্টার মধ্যে নয়ন বন্ডের সঙ্গে আটবার কথা বলেছে। এটা কি প্রমাণ করে না যে সে জড়িত নয়?”
তিনি বলেন, “সে-ই ষড়যন্ত্রকারী। জামিন দিলে সে প্রভাবিত করতে পারেন।”
আদালত উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরীর মতামত জানতে চান।
জবাবে এ আইনজীবী বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা বললেন, তদন্ত শেষ পর্যায়ে। টিভিতে দেখেছি, মিন্নির বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত করার অভিযোগ নেই।
তিনি বলেন, “মেয়েটির বয়স কম। বলা হচ্ছে ১৯ বছর। ভালভাবে পরীক্ষা করলে হয়তো দেখা যাবে ১৮ বছরের কম। তাছাড়া মেয়েটি তার স্বামীকে হারিয়েছে। তাই এ পর্যায়ে তাকে জামিন দিলে তদন্ত বাধাগ্রস্থ হবে বলে মনে করি না। তাকে জামিন দেওয়ার স্বপেক্ষে যথেষ্ট যুক্তি আছে।”
তিনি বলেন, সে যদি হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতও থাকে, তাহলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
শুনানিতে আদালত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক হুমায়ুন কবিরের বক্তব্য জানতে চান।
জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তদন্ত শেষ পর্যায়ে। আজ (বুধবার) আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু হাইকোর্টে আসার কারণে তা দেওয়া যায়নি।
আদালত তার কাছে জানতে চান, নয়ন বন্ড নামের আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না?
জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, “তাকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান পরিচালনা করা হয়। সন্ত্রাসীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। তাই তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। পুলিশের ওপর আক্রমণ করলে, বন্দুক যুদ্ধে সে মারা যায়।”
এসময় আদালতের দুই বিচারপতি মামলার সিডি (কেইস ডকেট) খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেন। এরপর তা রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে দেখতে বলেন।
মামলার সিডি দেখার পর আদালত বলেন, “এটা কি দেখে মনে হয় যে মিন্নি দোষ স্বীকার করেছে? আমরাতো দেখছি যে সব এড়িয়ে গেছে।”
জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, প্রাথমিকভাবে দোষ স্বীকার করেছে বলেই প্রতীয়মান হয়।
আদালত বলেন, “ঘটনার সঙ্গে তার (মিন্নি) সম্পৃক্ততা থাকতেও পারে, নাও পারে। কিন্তু তার বিষয়ে এসপি সাহেবের সংবাদ সম্মেলনে যা বলা হলো তার সঙ্গে সিডির মিল দেখছি না।”
জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, এসপি সাহেব নিজে থেকে বলেননি। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছে। এর জবাব দিয়েছেন তিনি।
আদালত বলেন, “আপনার দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন। মিন্নি ঘটনায় দোষ স্বীকার করেছে কিনা? এসপি সাহেব বলছেন, করেছে। মিন্নি স্বীকার করেছে বলে তার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।”
জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন।
আদালত বলেন, “যতবড় জায়গা, যত বড় দায়িত্ব। তাকে ততটা সচেতন থাকতে হয়।”
এর আগে হাইকোর্ট গত ২০ আগষ্ট এক আদেশে মামলার সিডিসহ তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন এবং এসপিকে সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বরগুনার পুলিশ সুপার গত ১৮ জুলাই করা সংবাদ সম্মেলনের ব্যাখ্যা দেন। ঠিক কি ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা জানা যায়নি। আদালতের দুই বিচারপতি ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তা দেখেছেন। মিন্নির আইনজীবী সেটা দেখতে চাইলে তাকে তা দেখতে দেওয়া হয়নি।