মিন্নির রিমান্ড বাতিলের আবেদন নাকচ করলো হাইকোর্ট
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি কে দেয়া পাঁচ দিনের রিমান্ড বাতিলের জন্য হাইকোর্টে আবেদন জানালে তা নাকচ করে দিয়েছে একটি বেঞ্চ।
রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেপ্তার, রিমান্ড, জিজ্ঞাসাবাদে নেওয়ার বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদ সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ফারুক হোসেন আদলতের নজরে আনলে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ জানায়, তদন্তের বিষয়ে তারা কোন হস্তক্ষেপ করবে না।
বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, “পুলিশ তদন্ত করছে। এটাতে আমরা ইন্টারফেয়ার করতে পারি না।”
আইনজীবী বলেন, “তদন্ত হবে। কিন্তু সে (মিন্নি) তো সাক্ষী। তাকে রিমাণ্ডে নেওয়া হয়েছে।”
বিচারক তখন বলেন, “সে তো এখন গ্রেপ্তার। পুলিশ বলছে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। এখন আপনার কিছু করার থাকলে ফৌজদারি নিয়ম মেনে করুন। প্রপার চ্যানেলে আসুন। আমরা তদন্তে ইন্টারফেয়ার করতে পারি না।”
এর আগে গত মঙ্গলবার সকালে মামলার প্রধান স্বাক্ষী নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে তদন্তের জন্য জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে পুলিশ নিয়ে গেলেও দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে হত্যাকান্ডের ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতার ‘প্রমাণ’ পাওয়ার কথা দাবি করে মিন্নিকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
বুধবার তাকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করলে বিচারক অনুমতি দেন।
গত ২৬ জুন স্ত্রীকে নিয়ে কলেজ থেকে ফেরার পথে প্রকাশ্য দিবালোকেই রিফাত শরীফ নামে বরগুনার এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী।
হত্যাকান্ডের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাতে দেখা যায় রিফাতের স্ত্রী বারবার ঠেকানোর চেষ্টা করলেও সন্ত্রাসীরা তাকে রামদা দিয়ে কোপাতে থাকে। এসময় পাশে অনেককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলেও রিফাতের স্ত্রী ছাড়া কেউই সন্ত্রাসীদের নিবৃত করার চেষ্টা করেননি। রক্তাক্ত অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তিনি মারা যান।
এর একদিন পর বাদী হয়ে বরগুনা সদর থানায় ১২ জনকে আসামী করে মামলা করেন রিফাত শরীফের বাবা।
এরমধ্যে ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপের কয়েকটি স্ক্রিনশট ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে তাতে দেখা যায়, হত্যার বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত এবং হত্যার মূল নকশা করেন মামলার প্রধান আসামী সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড ।
রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় দেশব্যপী সমালোচনার ঝড়ের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুততম সময়ের মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেন। নির্মম এই হত্যাকান্ডকে ‘জনগণের ব্যর্থতা’ বলে মন্তব্যও আসে হাইকোর্ট থেকে।
ঘটনার পর অভিযুক্ত কয়েক আসামীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও পালিয়ে যান ঘটনার প্রধান আসামী সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড। এরপর ২ জুলাই সকালে পুলিশের বরাত দিয়ে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নয়নের নিহত হবার খবর আসে গণমাধ্যমে।
রিফাত শরীফের মৃত্যুর পর তার বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে যে মামলা করেছিলেন তাতে প্রধান স্বাক্ষী ছিলেন রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।
তবে ১৩ই জুলাই রিফাত হত্যার ঘটনায় মিন্নির সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে রিফাতের বাবা সংবাদ সম্মেলন করলে মামলা নতুন দিকে মোড় নেয়।
দুলাল শরীফ বলেছিলেন, “নয়নের সঙ্গে বিয়ের ঘটনা মিন্নি ও তার পরিবার ‘সুকৌশলে’ গোপন করে গেছে। ওই বিয়ে বহাল থাকা অবস্থায় শরিয়া বহির্ভূতভাবে মিন্নি তার ছেলেকে বিয়ে করেছেন। রিফাতের সঙ্গে বিয়ের পরও মিন্নি নয়নের বাসায় আসা-যাওয়া ও যোগাযোগ রক্ষা করতেন।”
শ্বশুরের এ বক্তব্যকে ‘ষড়যন্ত্রকারীদের প্ররোচণায় পড়ে বানোয়াট ও মনগড়া বক্তব্য’ বলে দাবি করেছিলেন মিন্নি।
এরপর গত মঙ্গলবার সকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডেকে এনে হত্যাকান্ডের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার ‘প্রমাণ’ পাওয়ার দাবি করে রাত নয়টার দিকে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।