শুরু থেকেই হত্যাকান্ডের পরিকল্পনার অংশ মিন্নি : বরগুনা পুলিশ সুপার
দেশজুড়ে আলোচিত বরগুনার যুবক রিফাত শরীফকে হত্যার পরিকল্পনা থেকেই তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি জড়িত ছিলেন বলে দাবি করেছেন বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন।
মামলার তিন নম্বর আসামী রিশান ফরাজীকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন বরগুনা জেলা পুলিশের এই শীর্ষ কর্তা।
তিনি বলেন, “মিন্নি শুরু থেকেই যারা হত্যাকারী ছিল তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে এবং সে এই হত্যাকান্ডের পরিকল্পনার অংশ। এই হত্যাকান্ড সংগঠিত হওয়ার পূর্বেও সে এই হত্যাকান্ড নিয়ে পরিকল্পনা জন্য যা যা দরকার, মিটিং করেছে হত্যাকারীদের সাথে।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে মিডিয়ার সামনে এতো খোলামেলা কথা বলা উচিৎ না। তবে একটা কথা বলবো, শুধু টিকটক হৃদয়ই না, একাধিক ব্যক্তি আমাদের কাছে স্বীকার করেছে যে মিন্নি এই পরিকল্পনার সাথে জড়িত। মিন্নি স্বীকার করেছে বলেই আমরা এই বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বিজ্ঞ আদালতের কাছে রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছিলাম।”
মামলার এক নম্বর আসামী সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড স্থানীয় সাংসদ শম্ভু দেবনাথের ছেলে সুনাম দেবনাথের ঘনিষ্ঠজন বলে দাবি স্থানীয়দের। যদিও সে দাবি নাকচ করে দিয়েছিলেন সুনাম। মামলার দুই নম্বর ও তিন নম্বর আসামী রিফাত ফরাজী ও তার ভাই রিশান ফরাজী বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে। এই দুই আসামীর পরিবারের সাথে অতোটা যোগাযোগ নেই বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন দেলোয়ার।
মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে কোন চাপ আছে কি না সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, তাদের ওপর কোন ‘রাজনৈতিক’ বা ‘অন্যকোন’ চাপ নেই।
এর আগে গত মঙ্গলবার সকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডেকে এনে হত্যাকান্ডের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার ‘প্রমাণ’ পাওয়ার দাবি করে রাত নয়টার দিকে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গত ২৬ জুন স্ত্রীকে নিয়ে কলেজ থেকে ফেরার পথে প্রকাশ্য দিবালোকেই রিফাত শরীফ নামে বরগুনার এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী।
হত্যাকান্ডের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাতে দেখা যায় রিফাতের স্ত্রী বারবার ঠেকানোর চেষ্টা করলেও সন্ত্রাসীরা তাকে রামদা দিয়ে কোপাতে থাকে। এসময় পাশে অনেককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলেও রিফাতের স্ত্রী ছাড়া কেউই সন্ত্রাসীদের নিবৃত করার চেষ্টা করেননি। রক্তাক্ত অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তিনি মারা যান।
এর একদিন পর বাদী হয়ে বরগুনা সদর থানায় ১২ জনকে আসামী করে মামলা করেন রিফাত শরীফের বাবা।
এরমধ্যে ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপের কয়েকটি স্ক্রিনশট ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে তাতে দেখা যায়, হত্যার বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত এবং হত্যার মূল নকশা করেন মামলার প্রধান আসামী সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড ।
রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় দেশব্যপী সমালোচনার ঝড়ের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুততম সময়ের মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেন। নির্মম এই হত্যাকান্ডকে ‘জনগণের ব্যর্থতা’ বলে মন্তব্যও আসে হাইকোর্ট থেকে।
ঘটনার পর অভিযুক্ত কয়েক আসামীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও পালিয়ে যান ঘটনার প্রধান আসামী সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড। এরপর ২ জুলাই সকালে পুলিশের বরাত দিয়ে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নয়নের নিহত হবার খবর আসে গণমাধ্যমে।
রিফাত শরীফের মৃত্যুর পর তার বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে যে মামলা করেছিলেন তাতে প্রধান স্বাক্ষী ছিলেন রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।
তবে ১৩ই জুলাই রিফাত হত্যার ঘটনায় মিন্নির সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে রিফাতের বাবা সংবাদ সম্মেলন করলে মামলা নতুন দিকে মোড় নেয়।
দুলাল শরীফ বলেছিলেন, “নয়নের সঙ্গে বিয়ের ঘটনা মিন্নি ও তার পরিবার ‘সুকৌশলে’ গোপন করে গেছে। ওই বিয়ে বহাল থাকা অবস্থায় শরিয়া বহির্ভূতভাবে মিন্নি তার ছেলেকে বিয়ে করেছেন। রিফাতের সঙ্গে বিয়ের পরও মিন্নি নয়নের বাসায় আসা-যাওয়া ও যোগাযোগ রক্ষা করতেন।”
শ্বশুরের এ বক্তব্যকে ‘ষড়যন্ত্রকারীদের প্ররোচণায় পড়ে বানোয়াট ও মনগড়া বক্তব্য’ বলে দাবি করেছিলেন মিন্নি।
এরপর গত মঙ্গলবার সকালে থানায় ডেকে এনে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত নয়টায় মিন্নিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।