স্থায়ী জামিন পেলেন মিন্নি, কারামুক্তিতে বাধা নেই
বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে দেওয়া হাইকোর্টের স্থায়ী জামিন বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। এর ফলে মিন্নির কারামুক্তিতে আর কোনো রইল না।
রাষ্ট্রপক্ষের জামিন স্থগিতের আবেদনের শুনানিতে আজ সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ‘নো অর্ডার’ দিয়েছেন।
এর ফলে মিন্নির কারামুক্তিতে ‘বাধা নেই’ বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
আদালতে মিন্নির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেএড আই খান পান্না। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সারোওয়ার কাজল।
এর আগে, ২৯ আগস্ট ‘মিন্নিকে কেন জামিন দেওয়া হবে না’ মর্মে জারি রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি ও মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ দুটি শর্তে মিন্নির অন্তর্বর্তী স্থায়ী জামিন মঞ্জুর করেন।
শর্ত দুটি ছিল এ রকম-- জামিনে থাকা অবস্থায় মিন্নি তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের জিম্মায় থাকবেন এবং তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না।
শর্ত দুটির ব্যত্যয় ঘটলে মিন্নির জামিন বাতিল হবে বলে রায়ে উল্লেখ করেন হাইকোর্ট।
২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। যার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে দেশে তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকে। পরে মিন্নির শ্বশুর তার ছেলেকে হত্যায় পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে ঘটনা নতুন দিকে মোড় নেয়।
১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
পরদিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে পাঁচদিনের রিমান্ডে পাঠান। রিমান্ডের তৃতীয় দিন শেষে মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হলে সেখানে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে পুলিশ জানায়।
তার আগের দিনই পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মারুফ হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘মিন্নি হত্যাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা এবং হত্যা পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই হত্যা-পরিকল্পনার সঙ্গে মিন্নির যুক্ততার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।’
মিন্নি পরে জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে। তার বাবা বারবার অভিযোগ করেছেন যে, নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে’ মিন্নিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ। এর পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের হাত রয়েছে বলেও তার দাবি।
বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিন্নির জামিন আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর গত ৫ আগস্ট হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।