শাহানা হানিফই প্রথম
নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে অভিবাসন বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছেন শাহানা হানিফ। শহরটির ইতিহাসে তিনিই প্রথম মুসলমান নারী এবং প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান। দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি বলেছেন, 'কঠোর পরিশ্রমী বাংলাদেশি দম্পতির সন্তান হিসেবে নিজেকে নিয়ে গৌরবান্বিত ও সম্মানিত বোধ করছি। লাখ লাখ অভিবাসী এই নিউইয়র্ক সিটিকে নিজের ভুবন হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এ অবস্থায় অভিবাসন বিষয়ক কমিটির চেয়ার হওয়ায় সকলের সমস্যার কথা অকৃপণভাবে শুনবো এবং তার যথাযথ সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণে কার্পণ্য করবো না। থাকবো অভিবাসীগণের সম্মান ও মর্যাদা সুরক্ষায়ও সোচ্চার।'
তিনি আরো বলেছেন, "সিটি মেয়র অফিসের ইমিগ্রেশন সম্পর্কিত কর্মকর্তাগণও যেন আন্তরিকতার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেন সেদিকেও দৃষ্টি রাখবো।"
উল্লেখ্য শাহানা কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-৩৯ থেকে গত নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির টিকিটে বিজয়ী হয়েছেন। তার আগে তাকে ছয়জন প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করতে হয়েছে যাদের মধ্যে সমাজকর্মী ব্র্যান্ডন ওয়েস্টও ছিলেন। শাহানার দেহে সতের বছর বয়সে লুপাস নামের দুরারোগ্য ব্যাধি ধরা পড়ে। কিন্তু কখনোই হাল ছাড়েননি শাহানা। ২০১৯ সালেই তিনি ডিস্ট্রিক্ট-৩৯ এ লড়াই করার ঘোষণা দেন। সে ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের নির্বাচনে বিজয়ীও হন। উল্লেখ্য নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে এর আগে আর কোনো বাংলাদেশি-আমেরিকান জয়ী হতে পারেনি।
ব্রুকলিনে শাহানার জন্ম ১৯৯১ সালে। ব্রুকলিন কলেজ থেকে তিনি বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। গেল ৫ ফেব্রুয়ারি ছিল তার ত্রিশতম জন্মদিন। সেদিন তিনি লেখেন, "গত বছরের দিকে তাকালে আমি খুশিতে আপ্লুত হয়ে যাই। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে উঠি যারা আমাকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছিলেন। ত্রিশতম জন্মদিনে আমি আপনাদের নিকট ৩০ ডলার করে অনুদান চাইছি আমাদের জেলার শন কেসে অ্যানিম্যাল রেসকিউয়ের জন্য।"
সিস্টারস্টুডিওজডটকমের তারা কেনিকে তিনি বলছিলেন, "ব্রুকলিনের কেনসিংটনের লিটল পাকিস্তান আর লিটল বাংলাদেশের কাছেই আমি জন্মেছি যেখানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। আমি কাছের এক মসজিদে কুরআন পড়তে পড়তে বড় হয়েছি। আমি দেখেছি পুরুষ আর নারীর মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। পুরুষ সহজেই অনেক কিছু পায়, নারীর সেসব পেতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়। লুপাসের সঙ্গে লড়তে যেয়ে আমি অনেকদিন হাসপাতালে ছিলাম, তখন আমি নিজের সঙ্গে কথা বলার অনেক সুযোগ পেয়েছি। তারপর আমি যখন একজনের প্রেমে পড়লাম তখন আমি আকাঙ্ক্ষা বিষয়ে উপলব্ধি করতে পারলাম।
দেখুন আমরা এমন সমাজ গঠন করেছি যেটি পার্থক্য করতে ভালোবাসে। যার মাথায় চুল আছে আর যার নেই তাদের মধ্যেও আমরা বিভাজন টেনে দিই। মোটা আর চিকন মানুষেও আমরা পার্থক্য গড়ি। সুন্দরী না হলেও কিন্তু ভুগতে হয় মেয়েদের। আর বাদামী ও মুসলিম নারী হওয়ায় আমাকে তো বিব্রত হতেই হয়। ইসলামোফোবিয়া এখনকার রাস্তাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, বদলাচ্ছে সবকিছু। আমার কমিউনিটি যেমন মূলধারার আমেরিকানরাও।
হা, একুশ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর আমি একবার বাড়ি গিয়েছিলাম মানে বাংলাদেশে। আমি হঠাৎই যেন উপলব্ধি করলাম পূর্বপুরুষদের সম্পর্ক আমি কতই না কম জানি। আমার বাবা সেখানে আশির দশকের শুরুর দিকেও ছিলেন। আমি যেহেতু ব্রুকলিনের অভিবাসীদের জন্য কাজ করতে চাই তাই তাদের শেকড়ে যাওয়া আমার জন্য জরুরী ছিল। আমি বাংলাদেশে গিয়ে বাংলা লিখতে ও পড়তে-শিখতে চেয়েছি। আমি এখন ভালো বাংলা বলতে পারি। আমি ওখানে গার্মেন্টস কর্মী, ইউনিয়ন লিডারস এবং শিক্ষাবিদদের সঙ্গে মিশেছি, কথা বলেছি। আমেরিকার লোকে ভাবে, বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে নারী অধিকার নেই, কিন্তু আমি গিয়ে দেখলাম যতটা ভাবা হয় বাস্তবে আসলে ততটা নয় বরং অনেকক্ষেত্রেই বলব ওখানকার নারীরা এগিয়ে আছে। ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটি থেকেও সেখানে কর্মী হায়ার করা হচ্ছে। খুব ভিতরে ভিতরে একটা রিচ মুভমেন্ট হচ্ছে সেখানে থার্ড জেন্ডারদের নিয়ে। এখন আমি আমার পিতৃভূমি নিয়ে গর্বিত।"