গিনেস বুকে চোখ নেত্রকোনার ষাঁড় ‘মেসি’র!
শখের বশে এক বছর আগে একটি খর্বাকৃতির ষাঁড় কিনেছিলেন আজিজুর রহমান। আর্জেন্টিনার সমর্থক আজিজুর তার প্রিয় ফুটবল তারকার নামে এটির নাম রেখেছিলেন 'মেসি'। এই মেসি একদিন এত জনপ্রিয় হয়ে উঠবে, ঘুর্ণাক্ষরেও তখন ভাবেননি। কিন্তু ফুটবলার মেসির মতো এই ষাঁড়ও আজ দারুণ আকর্ষণীয়!
গরুটি দেখতে প্রতিদিন আজিজুরের বাড়িতে ভিড় করছেন হাজারও মানুষ।
জানা গেছে, এই মেসির বয়স এখন চার হলেও সে তুলনায় বেড়ে ওঠেনি। মাত্র ৩৭ কেজি ওজনের গরুটির গায়ের রং ধূসর কালো। উচ্চতা মাত্র ২৭ ইঞ্চি। লম্বায় মাত্র ২৪ ইঞ্চি। শিং আছে, কিন্তু দুটোই ভোঁতা।
তবে আকার-আকৃতিতে যাই হোক, মেসি নামে এই খর্বাকৃতির ষাঁড়ের দাম উঠেছে চার লাখ টাকা। কিন্তু ১০ লাখ টাকার কমে বেচতে নারাজ আজিজুর।
পাশাপাশি, চার বছর বয়সী সবচেয়ে ছোট ষাঁড় হিসেবে এটির নাম তুলতে চান তিনি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বুকে।
আজিজুরের দাবি, চার বছর বয়সী ষাঁড় হিসেবে বাংলাদেশে তো বটেই, সারা বিশ্বে এটিই সবচেয়ে ছোট গরু।
মেসি'র মালিক নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কমলপুর গ্রামের আজিজুর রহমান পেশায় একজন সরকারি কর্মকর্তা। একই জেলার খালিয়াজুরী উপজেলায় সমবায় কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। একদিন কর্মস্থল থেকে বাড়িতে যাওয়ার পথে মদন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর এলাকায় ষাঁড়টিকে দেখতে পান। খর্বাকৃতির দেখে এটিকে লালনপালনের শখ জাগে তার। পরে মালিকের সঙ্গে দরদাম করে ৪০ হাজার টাকায় কিনে নেন।
বাড়িতে এনে দেখেন গরুটি প্রচণ্ড ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন। তাই ক্ষিপ্রগতির প্রিয় ফুটবল তারকা মেসির নামের সঙ্গে মিলিয়ে ওর নাম রাখেন।
গত মে মাসে কেন্দুয়া উপজেলার প্রাণিসম্পদ মেলার একটি স্টলে মেসিকে তোলা হলে তা দর্শকদের প্রধান আকর্ষণে পরিণত হয়। লোকমুখে দ্রুত চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে ওর খবর। এরপর থেকে প্রতিদিন হাজারও মানুষ ওকে দেখার জন্য ভিড় করছেন আজিজুরের বাড়িতে। আর এটি খুব ভালো লাগে বলে জানান আজিজুর।
সোমবার সকালে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মেসিকে উঠানের একটি আমগাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। এক নজরে ওকে দেখতে ইতোমধ্যে বাড়িটিতে চলে এসেছেন দূর-দূরান্তের ১০-১৫ জন। তাদেরই একজন, রোয়াইলবাড়ির সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, 'মেসিকে দেখতে মেলায় গিয়েছিলাম। কিন্তু তখন মেলা শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই আজকে মালিকের বাড়িতে এসেছি।'
সাইফুদ্দিন তার আট বছরের ছেলে রনিকেও সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। খুব কাছে গিয়ে ষাঁড়টির গায়ে হাত বুলাচ্ছিল শিশু রনি। কিন্তু মেসি একটুও ক্ষেপেনি। আজিজুর বলেন, 'মেসি মানুষের আদর-ভালোবাসা বোঝে। তবে কেউ ডিস্টার্ব বা আঘাত করলে ছাড় দেয় না। তখন গুতো দেয়।'
মেসিকে দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা মঈনুল ইসলাম বলেন, 'আকারে ছোট হলেও সে খুব দৌড়তে পারে। ছাড়া পেলে সহজে ধরা দেয় না। ধরতে কমপক্ষে দুই-তিনজন লাগে। গায়ে খুব শক্তিও আছে তার। প্রায় সময় তারচেয়ে বড় বড় গরুর সঙ্গে লড়াই লেগে যায়। তখন সহজে হার মানতে চায় না।'
আজিজুর রহমান জানান, আকারে ছোট হওয়ায় মেসি খাবার তুলনামূলক কম খায়। প্রতিদিন তাকে কিছু ঘাস কেটে দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি দেওয়া হয় খৈল, ভূষি ও ছানা বুট ইত্যাদি। নিয়মিত তাকে সাবান অথবা স্যাম্পু দিয়ে গোসল করানো হয়। মঈনুল ছাড়াও আজিজুরের ছেলে তাইমুন (৯) এবং ভাতিজা তাহসিনও (৭) খুব যত্ন নেয় গরুটির।
আজিজুর বলেন, 'মেসিকে কেনার জন্য লোকের যেন অভাব নেই। অনেকেই কিনতে আসেন। কেউ কেউ ভাবেন, ছোট গরু হওয়ায় দাম কম হবে। তাই দামের আন্দাজ করতে পারেন না। কয়েকজন তিন-চার লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বলেছেন। আমি ১০ লাখ টাকায় বেচতে চাই।'
তিনি আরও বলেন, 'চার বছর বয়সী ষাঁড় হিসেবে এটিই দেশের সবচেয়ে ছোট। বোধকরি অন্য দেশেও নেই। তাই এটিকে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বুকে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে যোগাযোগের প্রক্রিয়া শুরু করেছি।'
কেন্দুয়া উপজেলার রাজনগর গ্রামের খামার মালিক মাহবুব আলম বলেন, 'আমি অনেক আগে থেকেই গরুর খামার করি। আমার খামারে বিভিন্ন জাতের প্রায় ৬০-৬৫টি গরু আছে। মেসি নামে ওই গরুকে দেখে আমারও কেনার খুব শখ হয়েছিল। চার লাখ টাকা পর্যন্ত বলেছি। কিন্তু মালিক আরও বেশি চান।'
কেন্দুয়া উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা খোরশেদ দেলোয়ার লেন, 'দেশি জাতের এই গরু সম্পূর্ণ সুস্থ। তবে খর্বাকৃতির হওয়ায় আর বড় হওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। বয়স অনুযায়ী এটি কোরবানিরও উপযুক্ত। এছাড়া প্রজনন ক্ষমতাসম্পন্নও।'
তিনি আরও জানান, মেসি ওর মা গাভীর তিন নম্বর বাছুর ছিল। ওর মা গাভীটির কোনো ত্রুটি নেই।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মনোরঞ্জন ধর বলেন, 'দেশে এই বয়সের এ রকম ছোট আর কোনো ষাঁড় আছে কি না, জানি না।'
জানা গেছে, এর আগে সাভারের আশুলিয়ার চারিগ্রামে শিকড় অ্যাগ্রো লিমিটেড নামের একটি খামারেও আরেকটি খর্বাকৃতির ষাঁড়ের সন্ধান মিলেছে। ওই গরুর নাম 'রাণী'। উচ্চতায় ২০ ইঞ্চি, লম্বায় ২৭ ইঞ্চি। আর ওজন ২৬ কেজি। এক বছর আগে নওগাঁ থেকে ভুট্টি জাতের গরুটি কিনে এনেছিলেন খামারটির মালিক। কিন্তু ওই গরুটির বয়স দুই বছর। অন্যদিকে নেত্রকোনার মেসির বয়স চার বছর। অর্থাৎ আশুলিয়ার 'রাণী' নেত্রকোনার 'মেসি'র চেয়ে দুই বছরের ছোট।
এদিকে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরুটি রয়েছে ভারতের কেরালা রাজ্যে। চার বছর বয়সী ওই গরুটির রং লাল। উচ্চতায় ২৪ ইঞ্চি, আর ওজন ৪০ কেজি। গরুটির নাম 'মানিকিয়েম'। এর মালিক অক্ষয় এনভি নামে এক ব্যক্তি।