চট্টগ্রামে সেরা দেশি খাবার পাবেন যেখানে
চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় দেশি খাবারের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে বাঙালির নানা সংস্কৃতি। দেশি খাবারের নানা মুখরোচক রেসিপির কারণে ভোজনরসিকদের কাছে এসব রেস্তোরাঁ আলদা জায়গা করে নিয়ে নিয়েছে। অবয়ব, খাবারের ম্যানু নির্বাচনে বৈচিত্র্যের কারণে একেকটি রেস্তোরাঁর তৈরি হয়েছে আলাদা ব্র্যান্ড।
অল্প সময়ে জনপ্রিয় ব্র্যান্ড কুটুমবাড়ি
চট্টগ্রামের একে খান মোড়ে ২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করে কুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁ। আশরাফুল আহসান রাকিব, রুবেল মোঃ ওয়াজেদুল ইসলাম ও মনির হোসেনের উদ্যোগে 'কম লাভে বেশি বিক্রি' নীতিতে চলা এই রেস্তোরাঁ ৭ বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রাম নগরীর অলংকার মোড়, ওয়াসা মোড় ও চকবাজারে প্রসারিত হয়েছে আরও তিনটি শাখা।
কুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁয় রয়েছে ১০০ ধরনের দেশি খাবারের আইটেম। খাসি ব্রেক রোস্ট দিয়ে তৈরি নবাব বিরানি এবং চিকেন কালিয়া চট্টগ্রামে একমাত্র কুটুমবাড়িতেই পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতীত ঐতিহ্যের খাবার জর্দা ভাত, কুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁর ফিরনির আলাদা কদর আছে গ্রাহকদের মাঝে। গ্রাহকদের সুবিধায় ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে এই রেস্তোরাঁ।
এছাড়া সকালে খাসির পায়া, গরুর নেহরি, সুপ, হায়দ্রাবাদ বিরানি, ইরানি মোরগ পোলাও, চিকেন বিরানি, কাচ্চি বিরানি, বিভিন্ন ধরনের ভর্তার জন্য প্রসিদ্ধ কুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁ। অনান্য সাধারণ রেস্তোরাঁর তুলনায় এখানে খাবারের দামও খুব বেশি নয়। এছাড়া ডেকোরেশন ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে রেস্তোরাঁটি।
এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল আহসান রাকিব বলেন, 'শুধুমাত্র ফুড কোয়ালিটির কারণেই অল্প সময়ে কুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁ চট্টগ্রামের নতুন ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কোনো খাবার গ্রাহকদের কাছে পরিবেশনের আগেই আমাদের নিজস্ব টিম খাবারের মান পরীক্ষা করে। যদি কখনো খাবারের মান পরিবেশন যোগ্য না হয়, সেটি পরিবেশন করা হয় না। কুটুমবাড়ির বড় বৈশিষ্ট হচ্ছে টাটকা খাবার।'
চলতি বছরের নভেম্বরে পর্যটন শহর কক্সবাজারে শুরু হয়েছে এই ব্র্যান্ডের নতুন শাখা। পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আরও ৫টি শাখার পাশাপাশি দেশের সকল বিভাগীয় শহরে কুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁর শাখা খোলা হবে।
ইতিহাস ঐতিহ্যের মিশেলে 'বীর চট্টলা'
'দেশি স্বাদে দেশি খাবার' এই স্লোগানে প্রতিষ্ঠা পাওয়া বীর চট্টলা রেস্টুরেন্টে বাংলা খাবার আইটেমের মধ্যে আছে ২৭ ধরনের খাবার। এগুলো হচ্ছে ভুনা খিচুড়ি, সাদা ভাত, ডাল, ডিম ডাল, বিফ কালিয়া, মুরগি রসা ভুনা, মুরগি কালো ভুনা, হাঁস রসা ভুনা, দেশি রুই মাছ ভুনা, ইলিশ ভাজা, লইট্রা ফ্রাই, লাক্ষা মাছের দো পেয়াজা, কোরাল মাছের দো পেয়াজা, চিংড়ির দো পেয়াজা, মুড়িঘন্ট, মাছ ভর্তা, আলু ভর্তা, ডিম ভর্তা, চিংড়ি ভর্তা, বেগুন ভর্তা ,টমেটো ভর্তা, ঢেড়স ভর্তা, তিতা করলা ভাজা, শাক প্ল্যাটার, কুমড়ো শাক ভাজা, কলমি শাক ভাজা ও মৌসুমী শাক ভাজা।
অন্যান্য সাধারণ বাংলা খাবারের তুলনায় এখানে দাম তুলনামূলক একই হওয়ায় এই রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ ও ডিনারের সময় ক্রেতারা ভিড় করেন।
বাংলা খাবারের পাশাপাশি বীর চট্টলায় রয়েছে বিয়ে বাড়ির খানা। বিয়ে বাড়িতে পরিবেশন হওয়া ১৫ ধরনের খাবার পরিবেশন করে এই রেস্টুরেন্ট। এছাড়া বিভিন্ন জুস-সহ ১০ ধরনের পানীয় আছে বীর চট্টলার খাবারের তালিকায়। রেস্টুরেন্টের প্রবেশ মুখেই আছে পানের বাট্টা। এখানে ২০ ধরনের পান পাওয়া যায়। এসব পান বিক্রি হয় ১৫ টাকা থেকে ১১৫ টাকায়।
এই রেস্টুরেন্টের ৪টি রুম সাজানো হয়েছে আলাদাভাবে। গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া নানা ঐতিহ্য, শ্লোক, কবিতা, সংস্কৃতির নিদর্শন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রতিটি কক্ষে। পুরোনা দিনের টেপ রেকর্ডার, পিয়ানো, লাইব্রেরি, সংগীত অঙ্গনের নানা অনুসঙ্গ শোভা পাচ্ছে রেস্টুরেন্টের দেয়ালে। বাংলা খাবারের সঙ্গে বাংলা সংস্কৃতির এসব অনুসঙ্গ ক্রেতাদের বিমোহিত করে।
রেস্টুরেন্ট বারান্দায় রয়েছে চা আড্ডার আলাদা ব্যবস্থা। চায়ের সঙ্গে রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তৈরি চট্টগ্রামে ঐতিহ্যবাহী বেলা বিস্কুট পরিবেশন করা হয়। বিকেলের পর ওই স্থানে জমে শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনের বিশিষ্টজনদের আড্ডা।
বীর চট্টলা রেস্টুরেন্টের ইনচার্জ টিপু হোসাইন বলেন, '২০১৭ সালে চট্টগ্রাম নগরীর এসএস খালেদ রোড এলাকায় এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুরু থেকেই খাবারের কোয়ালিটি ও হাইজিন বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রেস্টুরেন্টে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়েছে।
ডাল সবজির জন্য বিখ্যাত সেই 'জামান হোটেল'
চট্টগ্রাম নগরীর আলকরণ মোড়ে ১৯৭৬ সালে যাত্রা শুরু জামান হোটেলের। মোহাম্মদ জামান, মালেকুজ্জামান, নুরুজ্জামান নামে ৩ ভাইয়ের পরিচালনায় পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও ঢাকায় এই হোটেলের ২০টি শাখা প্রসারিত হয়েছে।
শুরুতে চা-পরোটার জন্য চট্টগ্রামজুড়ে এই হোটেলের ব্যাপক কদর ছিল। পরবর্তীকালে দেশি খাবারের জন্য আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এটি। দেশি খাবারের পাশাপাশি জামান হোটেলের মিক্সড সবজি ও মসুর ডালের রয়েছে ব্যাপক কদর।
হোটেলটির তিন উদ্যোক্তার কেউই এখন আর বেঁচে নেই। তাদের সন্তানরা জামান হোটেলের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। এখনো রুচিসম্মত দেশি খাবারের প্রসঙ্গ উঠলেই জামান হোটেলের নাম আসে সবার আগে।
জামান হোটেলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ জামানের ছেলে কায়সার জামান বলেন, 'চট্টগ্রামে খাবার হোটেলের ব্র্যান্ড সৃষ্টি হয়েছে জামান হোটেলের হাত ধরে। বিরানি, সাদাভাত, চিকেন-সহ দেশি সব খাবার পরিবেশন করা হয় এই হোটেলে। গ্রাহকদের সন্তুষ্টির বিষয়টি সবসময় গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়।'
ভর্তার জন্য প্রসিদ্ধ মেম্বার হোটেল ও হোটেল নিজাম
চট্টগ্রামে এসে মেম্বার হোটেল ও হোটেল নিজামের নানা পদের ভর্তার স্বাদ নেননি, এমন ভোজনরসিকের সংখ্যা খুবই কম। পাহাড়তলি কলেজ রোডের পাশে মেম্বার হোটেল এবং চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় হোটেল নিজাম ভর্তার জন্য বিখ্যাত।
মেম্বার হোটেলে দেশি শাক সবজি, দেশি সকল মাছ-সহ পরিবেশন করা হয় বেগুন, টমোটো, রসুন, আলু, বাদাম, সরিষা, কলা, শুটকি, চিংড়ি শুটকি-সহ প্রায় ৩০ পদের ভর্তা। প্রতি পদের ভর্তার দাম ২০ টাকা করে। অন্যান্য খাবারের দামও কম। ভর্তার পাশাপাশি এই হোটেলে কোয়েল, কবুতর ও হাঁসের মাংস ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে।
এছাড়া রেয়াজুদ্দিন বাজার এলাকায় পুরাতন রেলওয়ে স্টেশনের সামনের নিজাম হোটেলও ভর্তা এবং দেশি খাবারের জন্য প্রসিদ্ধ। কবুতর, হাঁস, বিভিন্ন পাখির মাংস, দেশি সব ধরনের মাছ ছাড়াও মুখরোচক দেশি খাবারের সমাবেশ আছে এই হোটেলে।