দারুণ সব ডেজার্ট অনলাইনে কিনতে চাইলে
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক চার্লস স্পেন্সের নেতৃত্বাধীন এক গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, যা দেখতে ভাল তার স্বাদও নাকি ভাল!
বেকিং এমন এক শিল্প যা একই সাথে আনন্দদায়ক আবার নান্দনিক। বিশেষ করে, আপনি যখন ডেজার্ট বা মিষ্টান্ন তৈরী করছেন, তখন সেখানে নান্দনিকতা ফুটিয়ে তোলার অনেক সুযোগ পাওয়া যায়।
রঙ, শৈলী, উপকরণ, স্বাদ - নিজের তৈরি ডেজার্ট সাজানোর জন্য অনুষঙ্গের অভাব নেই চারপাশে।
'আগে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারি'- হয়তো এ নীতিতে বিশ্বাস করেই আমাদের দেশের বেকাররাও তাদের ফেসবুক পেইজগুলো নানা রঙের ও ডিজাইনের ডেজার্টের ছবি দিয়ে সাজিয়ে তুলছেন। এসব বেকিং পেজগুলোর বেশিরভাগেরই আবার হোম ডেলিভারি সুবিধা রয়েছে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড তাই আজ আপনাদের এমন কিছু অনলাইন পেজের সাথে পরিচিত করে তুলবে যারা অনলাইনে ঘরে তৈরি ডেজার্ট বিক্রয় করে থাকে। এসব ডেজার্ট খেতে যেমন সেস্বাদু তেমনি এদের পরিবেশনেও রয়েছে শিল্পের ছোঁয়া।
সাফওয়া'স ফুড কর্ণার
মা হওয়ার আগ পর্যন্ত এই পেজের স্বত্বাধিকারী শারমিন আফতাবি জেরিন একজন কর্মজীবি নারী ছিলেন। সন্তান এবং পরিবারকে আরেকটু সময় দেওয়ার জন্য, চাকরি ছেড়ে 'হোম বেকারে' রূপান্তরিত হয়ে যান।
জেরিনের মতে ছোটবেলা থেকেই রঙ এবং ছবি আঁকা তাকে আকর্ষণ করত যার ছাপ তার তৈরীকৃত খাবারের আইটেমগুলিতেও মেলে।
সাফওয়া'স ফুড কর্ণারে বিভিন্ন ধরণের খাবার রয়েছে এবং প্রতি সপ্তাহেই এখানে নতুন নতুন আইটেম যোগ করা হয় তবে এখানকার সবচাইতে দৃষ্টিনন্দন আইটেম বোধহয় এর ডেজার্ট আইটেমগুলো।
এখানকার চকলেট ট্রাফলগুলো শুধু উজ্জ্বল রঙের জন্যই নয়, স্বাদেও আপনার মনোযোগ পুরোপুরি কেড়ে নেবে।
এগুলো এতই ছোট আর মায়াকাড়া দেখতে যে আপনার প্রথমে এদের খেতেই ইচ্ছে করবে না কিন্তু একবার খাওয়ার পর আপনি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারবেন না।
কাপকেকগুলোও দারুণভাবে সজ্জিত। এদের রঙ, নকশা প্রস্তুতকারকের শৈল্পিক বোধের প্রমাণ দিতে বাধ্য।
ওপরে বাটারক্রিম ফ্রস্টিং আর নিচে চকলেট বা ভ্যানিলা কেক বেইজে তৈরি করা কাপকেকগুলোতে মিষ্টির একেবারে নিখুঁত ভারসাম্য পাওয়া যায়।
এই পেজ থেকে আমাদের চেখে দেখা সর্বশেষ আইটেমটি ম্যাকারনস।
ফুলেল সূচিকর্মের নকশা আঁকা, প্যাস্টেল রঙা ম্যাকারনসগুলোকে না খেয়ে আপনার বরং ফ্রেমে বাঁধাই করে রাখতে ইচ্ছে হবে!
বাইরে মচমচে আর ভিতরে নরম; মুখে দিলে খানিকটা চুইংগামের মত মনে হতে পারে, যেন একেবারে নিখুঁত ম্যাকারন।
এখানে চকলেটের দাম পড়বে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকার ভেতর, ৬টি বাটারক্রিম কাপকেপের এক সেটের দাম ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকার ভেতরে এবং আট জোড়া ম্যাকারনের জন্য আপনাকে ব্যয় করতে হবে কেবল ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকার মত।
ট্রিটস বাই তারিজ
এই পেজের স্বত্বাধিকারী সাজিয়া হোসেইন রীমা মিথ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক।
রীমা এবং তার স্নাতক পড়ুয়া কন্যা রিফাহ তাশফিয়া ইসলাম আগে থেকেই বেক করতে পছন্দ করতেন। করোনা লকডাউনের অবসরে তারা ভাবলেন, পছন্দের কাজটিকেই নাহয় আরেকটু গুরুত্বের সাথে নেয়া যাক!
রিফা যেহেতু আকেঁনও ভাল, ফলে তারা তার এই শিল্পপ্রতিভাকেই ফ্লোরাল কাপকেক এবং এয়ারব্রাশড কেকের মত বেকড পণ্যগুলোতে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করলেন।
পুষ্পশোভিত কাপকেকগুলোর স্বাদ অসাধারণ; মুখে দিতেই যেন মিলিয়ে যায়। একেকটি কাপকেক যেন একটি শিল্প, নগরের সবচাইতে সেরা স্বাদের কাপকেক বললেও বোধহয় ভুল হবে না।
চকলেট এবং ভ্যানিলা স্বাদযুক্ত কাপকেকগুলোর ওপরে নরম এবং ক্রিমযুক্ত বাটারক্রিম এতটাই মোহনীয়ভাবে মেশানো হয়েছে যে যারা মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন না তারাও এর স্বাদে মুগ্ধ হবেন।
কেক বেইজ এবং বাটারক্রিমের মাঝে মিষ্টতার সঠিক ভারসাম্যই কাপকেকের এই নিখুঁত স্বাদের রহস্য।
আমরা সচরাচর যেসব ডেজার্ট খেয়ে থাকি তা থেকে একেবারেই ভিন্নরকম দুটো ডেজার্ট হলো 'কেকসিক্যালস' এবং 'জ্যামিতিক হার্ট কেক'।
আইসক্রিম ললি এবং হৃদয়াকৃতির এসব ডেজার্টের ভেতরে রয়েছে নরম এবং ক্রিমযুক্ত ফিলিং আবার বাইরে চকলেটের প্রলেপে মোড়ানো মচমচে আবরণ।
আমাদের খাওয়া সবগুলো ডেজার্ট আইটেমের ভেতর এটাই সম্ভবত সবচেয়ে সুস্বাদু ছিল।
ফুল এবং রঙিন মুক্তোর নকশায় আঁকা চকচকে এই ডেজার্টটিকে মনে হবে যেন কোন রাজকীয় সম্পদ।
সুগার কুকিজগুলোর ওপরে রাজোচিত নকশা (আইসিং) আঁকা ছিল। হালকা মুচমুচে ছিল,কিন্তু ভেতরে নরম। কুকিজের প্রতিটি কামড়ে আপনি নিশ্চিত মাখন এবং ভ্যানিলার সুস্বাদু সংমিশ্রণের সুগন্ধ পাবেন ।
ফ্লাওয়ার কাপকেকস প্রতিটির দাম পড়বে ১৫০ টাকা, ছয়টি কেকসিক্যালস এবং জ্যামিতিক হার্ট কেকের এক বক্সের দাম ৬০০ টাকা এবং ১০টি সুগার কুকিজের একটি পাউচ ২০০ টাকা করে পড়বে এই পেজে।
সামা'স কিচেন
সামা'স কিচেনের স্বত্বাধিকারী তাসনুভা শেখ একটি বহুজাতিক সংস্থার এইচআর (মানবসম্পদ) বিভাগে চাকরি করতেন। ২০১৪ সাল থেকে নিতান্তই প্যাশনের জন্য তিনি এই পেজটি চালাচ্ছেন।
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন থেকে বেকিংয়ের ওপর তাসনুভা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই চিত্রকলা এবং শিল্প পছন্দ করতেন, যা তার বেকিংয়ের মধ্যেই প্রতিফলিত হয়।
বিভিন্ন ধরণের মিষ্টি আইটেম তৈরি করে থাকলেও তার তৈরি সেরা স্বাদের আইটেমটি হলো কেক।
তার কেকগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকলে কেউ বুঝতেই পারবেন না যে এগুলো কি আদতে কেক নাকি কোন শিল্পীর হাতে আঁকা চিত্রকর্ম!
ক্রিমের সূক্ষ্ম আস্তরণ যুক্ত একেকটি কেক নরম এবং স্পঞ্জযুক্ত।
তার পেজে মিলবে থিমভিত্তিক, মজাদার কাপকেক।
কেকের দাম দুই থেকে চার হাজার টাকার মধ্যে। তবে কাস্টমাইজড কেকের ক্ষেত্রে দাম ওঠানামা করতে পারে। এখানে জন্মদিন এবং বিয়ের কেকের জন্য অর্ডার নেয়া হয়।
কর্পোরেট জগতের চাকরি ছেড়ে লকডাউনের সময় তাসনুভা পুরোদস্তুর বেকার হয়ে ওঠেন। গত বছরের মার্চ মাসে মিরপুর ডিওএইচএস শপিং কমপ্লেক্সে তাসনুভা একই নামে তার প্রথম আউটলেট খোলেন।
বারিধারা ডিওএইচএসে অবস্থিত অনন্যা শপিং কমপ্লেক্সে এ মাসেই তিনি আরেকটি শাখা চালু করেছেন; এটি ডালাস ক্যাফে এন্ড মাল্টি-কুইজিন রেস্তোঁরাটির সাথে সংযুক্ত।
বিয়ে কিংবা জন্মদিন উদযাপনের পরিকল্পনা থাকলে এই দুর্দান্ত দেখতে, মজাদার কেকের পেজটিতে ঢুঁ মারতে ভুলবেন না যেন।
শুধুই এক টুকরো কেক নয়, আপনি যদি সুলভ মূল্যে রীতিমত এক টুকরা শিল্প অতিথিদের সামনে পরিবেশন করতে পারেন, তবে সে সুযোগ হারাবেন কেন তাইনা!