পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রেল সুড়ঙ্গের নেটওয়ার্ক
সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতমালার হাজার ফুট নিচ দিয়ে নির্মিত হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রেল সুড়ঙ্গের নেটওয়ার্ক গটহার্ড বেস টানেল (জিবিটি)। ৩৫ মাইল লম্বা জিবিটি প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয় দুটি রেলসুড়ঙ্গ। সম্প্রতি দ্বিতীয় সুরঙ্গে উচ্চগতি ও সক্ষমতার রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে।
এক হাজার ১৩০ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত গটহার্ড টানেল প্রকল্পের সবকিছুই ইতোপূর্বের সব রেকর্ড ভাঙ্গে।
সবচেয়ে গভীরতম স্থানে জিবিটি’র টুইন টানেল আল্পসের পর্বতমালার গড় উচ্চতার চাইতে ৮ হাজার ফুট নিচে। প্রায় ১৭ বছর ধরে জিবিটি’র টানেল দুটির নির্মাণকাজ চলে। নির্মাণকাজে অংশ নেন আড়াই হাজার শ্রমিক।
এরা টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) এবং ডিনামাইটের সাহায্যে প্রায় ৩ কোটি টন পাথর অপসারণ করেন। এরপর বিছিয়ে দেন প্রায় আড়াইশ মাইল দৈর্ঘ্যের রেলপথ। ট্রেন চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ, যোগাযোগ সংযোগ ও সংকেত নিয়ন্ত্রণের লাইন স্থাপন করা হয় আরও হাজার মাইল জুড়ে।
জিবিটির সুড়ঙ্গ দু’টি প্রতি এক হাজার ৬৬ ফুট পরপর পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এরসঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণ কাজে ব্যবহৃত এক্সেস টানেল এবং শাফটগুলো মিলিয়ে এর মোট দৈর্ঘ্য আসলে ৯৫ মাইল।
এদের খননকাজ অবশ্য ২০১১ সালেই শেষ হয়। এরপর ৫ বছর ধরে সুড়ঙ্গ দুটিকে ট্রেন চলাচল যোগাযোগ উপযোগী করে তোলার কাজ চলছিল। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রথম টানেলটিকে ব্যবহার উপযোগী ঘোষণা করা হয়।
এদিকে রেলসুড়ঙ্গ নির্মাণে ডিনামাইট বিস্ফোরণের সাহায্যে পাথর অপসারণ করা হয়। পাশাপাশি টানেল খননের জন্য যে টিবিএমগুলো ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলোও ছিল দানবাকৃতির। এসব যন্ত্রের খননমুখের আয়তন ছিল ৩২ফুট, আর খনন করা পাথর সরানোর কাজে নিয়োজিত ছিল কয়েক মাইল লম্বা কনভেয়ার বেল্ট।
পাথরের বড় একটি অংশ সুরঙ্গের কংক্রিটের দেয়াল নির্মাণে ব্যবহার করা হয়। এরপরেও বিপুল পরিমাণ পাথর উদ্বৃত্ত থেকে গেছে। বাড়তি এসব পাথর দিয়ে একটি ট্রেন বোঝাই করা হলে তার ওয়াগনগুলোর দৈর্ঘ্য দাঁড়াতো চার হাজার ৪শ মাইল বা জুরিখ থেকে শিকাগোর দূরত্বের সমান।
টানেল দুটির মাধ্যমে উত্তর ইউরোপের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তিখ্যাত দেশগুলোর সঙ্গে উত্তর ইতালির সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। এর সঙ্গে নতুন উচ্চগতির রেলপথটি চালু হওয়া মাত্রই জুরিখ থেকে মিলানের ট্রেনযাত্রায় আড়াই ঘন্টা সময় বাঁচবে।
আর যাত্রাপথের দূরত্ব কমায় যাত্রী সংখ্যা বাড়বে ৩০ শতাংশ। পাশাপাশি বার্ষিক পরিবহন সক্ষমতা ৫ কোটি টনে উন্নীত হবে।