বগুড়ায় অসহায় মানুষের পাশে দুই বন্ধু
বগুড়া পৌর এলাকার ২১ ওয়ার্ডে প্রায় ১৪ হাজার দু:স্থ মানুষকে প্রতিদিন একবেলা খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান আকন্দ। বন্ধুর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তার সঙ্গে যোগ দেন আরেক ব্যবসায়ী নাহারুল ইসলাম। অসহায় শিশুদের ঈদে নতুন কাপড় দিতে তার পরিবারের সদস্যদের জন্য কেনা প্রাইভেট কারটি বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে কর্মহীন মানুষদের সহায়তা করতে দুই বন্ধুর এসব উদ্যোগ।
আয় না থাকার কারণে অনেকের ঘরেই ঠিকঠাক রান্না হচ্ছে না এমন ১৩ হাজার ৮০০ মানুষকে প্রতিদিন একবেলার খাবার পৌছে দিচ্ছেন ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান আকন্দ। তিনি একা নন। তার পাশে দাঁড়িয়েছেন বগুড়ার অন্য ব্যবসায়ীরাও।
তিনি বলেন, "ইতিমধ্যে ৬ টন চাল আমার কাছে দিয়ে গেছেন ব্যবসায়ীরা, তাদের পরিচয় গোপন রাখার অনুরোধ আছে বলতে তাই আমি তাদের নাম বলছি না। তবে, তারা যে আমার সাথে আছে, এটা আমাকে বলতেই হবে। আরো কয়েকজন সহযোগিতা করতে চেয়েছেন। এখনও হয়তো দিতে পারেননি, কয়েকদিনেই দিয়ে দেবেন।"
তিনি জানান, বাস মালিক সমিতির নিজস্ব জায়গায় প্রতিদিন রান্না হয় ৪৭ সসপ্যান খিচুড়ি। সেগুলো ৯০টি আলাদা পাত্রে ভ্যানে করে পাঠানো হয় বিভিন্ন ওয়ার্ডে। একজন করে স্বেচ্ছাসেবক তালিকা ধরে পৌছেন দেন খাবার। প্রতিদিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাটেন প্রায় ১০০ জন, যাদের মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের স্বেচ্ছাসেবকও রয়েছেন। মহাস্থানগড় হাট থেকে প্রতিদিন ট্রাক ভর্তি সবজি আসে রান্না ঘরে। এসব কাটার জন্য আছে আলাদা মানুষ। রান্নার পর প্যাকেট করে পৌছে দেয়া হয় বাড়ি বাড়ি।
"দেশের এই দুঃসময়ে আমি সরকারের পাশে, মানুষের পাশে থাকতে পেরেছি এটাই আমার শান্তি", বলেন আব্দুল মান্নান আকন্দ।
তিনি বলেন, "কয়েকদিন আগে তিনি ১২শ মানুষকে চাল-ডাল দিয়েছিলাম। দেখলাম, কেউ একাধিকবার পাচ্ছে, কেউ পাচ্ছেই না। তাই চিন্তা করলাম, আমি যদি রান্না করে বাড়ি বাড়ি পৌছে দিতে পারি তবে বেশি উপকার হবে আর রমজান উপলক্ষ্যে চেষ্টা করছি কিছু বাড়িতে মাছ পৌছে দেয়ার, যেন খাবারের মান একটু ভাল হয়।"
অন্যদিকে গাড়ি বিক্রি করে গরীব শিশুদের ঈদের কাপড় কিনে দেওয়ার উদ্যোগের বিষয়ে ব্যবসায়ী নাহারুল ইসলাম বলেন, "খেয়াল করে দেখবেন, যাকাতের জন্য পুরুষদের লুঙ্গি পাঞ্জাবী, মহিলাদের শাড়ি দেয় মানুষ কিন্তু বাচ্চাদের নতুন কিছু দেয়া হয় কমই, তাই আমি ঠিক করেছি, বাচ্চাদের জামা কিনে দেব। গাড়ি পরে আরো কিনতে পারবো। কিন্তু এখন মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা বেশি জরুরি মনে হলো আমার কাছে।"
স্বেচ্ছাসেবকরাও খুশি মনেই খেটে যাচ্ছেন সারাদিন। প্রয়োজনীয় উপকরণ কেনা থেকে শুরু করে রান্না এবং খাবার পৌছে দেয়া পর্যন্ত সব কিছুতেই সবাই খাটছেন নিঃস্বার্থভাবে।
খাবার বিতরণের দায়িত্বে থাকা মোঃ মাসুদ শেখ জানান "এটা আমার কাছে খুবই আনন্দের বিষয়। কাজটা করে আমি মানসিকভাবে শান্তি পাচ্ছি। সবাই এত পরিশ্রম করছে, এটা দেখে ভাল লাগে।"