বাংলাদেশি ৪ হাজার নাবিক স্টাফদের জীবন কাটছে সমুদ্রেই
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের কারণে বন্ধ রয়েছে আকাশ পথ। কিন্তু সমুদ্র পরিবহন সচল থাকলেও করোনার কারণে বিভিন্ন দেশে জাহাজ নিয়ে আটক পড়ে রয়েছে নাবিক ও স্টাফরা।
তাদের অনেকের আবার শেষ হয়েছে চুক্তিও। তবু করোনার কারণে তারা না পারছেন স্থল সীমায় যেতে আবার না পারছেন দেশে ফিরতে। ফলে সমুদ্রেই জীবন কাটছে তাদের।
সরকারি শিপিং অফিসের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় চার হাজার নাবিক ও স্টাফ বিভিন্ন দেশে আটকা পড়ে আছেন। আকাশ পথ সচল না হলে আরও অনিশ্চয়তা বাড়বে তাদের পরিবারে।
দীর্ঘদিন ধরে সোমালিয়ার বন্দরে জাহাজেই আটকা পড়ে আছেন ৫ বাংলাদেশি। এদের একজন চট্টগ্রামের। করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন ধরে তারা না পারছেন সোমালিয়ায় ঢুকতে, আবার না পারছেন আকাশ পথে বাংলাদেশে ফিরে আসতে। দুবাইভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের সেই জাহাজে মোট কর্মীর সংখ্যা ২৩ জন। এতে ১৮ জনই ভারতীয় নাগরিক এবং পাঁচজন বাংলাদেশি।
তাদের মধ্যে সেকেন্ড অফিসার আতিকুল ইসলামের সঙ্গে জাহাজটির চুক্তি ছিল পাঁচ মাসের, কিন্তু করোনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাকে ৯ মাস ধরে থাকতে হচ্ছে ওই জাহাজে। পাম্পম্যানের দায়িত্বে থাকা আনজাম হোসেন আট মাসের চুক্তিতে জাহাজে উঠলেও এখন তার ৯ মাস চলছে জাহাজের ভেতরেই। বোসানের দায়িত্বে থাকা নাইমুল ইসলাম ও ওয়ালার সোহেল রানাও আছেন প্রায় ৯ মাস ধরে। জাহাজে অ্যাবল সিম্যানের দায়িত্বে কাজ করছেন আলী আকবর।
আলী আকবর জানান, আমাদের জাহাজটি কেমিক্যাল ট্যাংকার। আমরা ভারতের চেন্নাই বন্দর থেকে ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জাহাজে উঠি। জাহাজ নিয়ে চলে যাই ওমান। এরপর ইয়েমেন, সৌদি আরব, দুবাই, ভারতে একাধিকবার আসা-যাওয়া হয়েছে। এখন আমরা আছি সোমালিয়া শহরের পাশের একটি বন্দরে। এখান থেকে এই মাসের ১২-১৩ তারিখে দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেবো। কিন্তু এবার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও দেশে ফিরতে পারছি না। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকায় আমাদের জাহাজেই আটকে থাকতে হচ্ছে। এখন সরকার নাবিকদের জন্য বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করলে দেশে যেতে পারবো আমরা।
সরকারি সমুদ্র পরিবহন অফিসের তথ্যানুযায়ী, নাবিক, মাস্টার ক্রোসহ প্রায় ৪ হাজার বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশের বন্দরে আটকা পড়ে আছে। তাদের কারো কাজের চুক্তি শেষ। আবার কারো চুক্তি চলমান রয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) ৬টি জাহাজের ১৫৬ জন নাবিক, অফিসার ও স্টাফরাও বিভিন্ন দেশের আটকা পড়ে আছে। আকাশ পথ সচল না হওয়া পর্যন্ত তাদের জাহাজ থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছে বিএসসি কর্তৃপক্ষ।
সরকারি সমুদ্র পরিবহন অফিসের শিপিং মাস্টার মো. জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, করোনার কারণে অনগোয়িং বিভিন্ন ভ্যাসেলের নাকিবও ক্রোরা বিভিন্ন দেশে আটকা পড়ে আছে। আকাশ যোগাযোগ বন্ধ থাকার কারণে জাহাজে কিংবা বিভিন্ন দেশের বন্দরে অবস্থান করতে হচ্ছে তাদের। তবে আমরাও তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে ওইসব নাবিকদের।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার ক্যাপ্টেন জামাল হোসেন তালুকদার বলেন, আকাশ পথ চালু হলে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু আকাশ বন্ধ থাকায় তাদের ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না। আমরা তাদের জাহাজে থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগও করছি। এছাড়াও তারা পরিবারের সাথেও যোগাযোগ করতে পারছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসসির এক নাবিক বলেন, আমাদের অনেক সহকর্মী যাদের চুক্তি শেষ তারাই ভোগান্তিতে আছেন বেশি। সাধারণত চুক্তি শেষ হলে, সেই বন্দর থেকে ওই দেশের বিমান বন্দর থেকে আকাশ পথে দেশে ফেরেন তারা। কিন্তু বিশ্বব্যাপী আকাশ পথ বন্ধ থাকায় বিভিন্ন দেশে আটকা পড়ে আছেন। আবার করোনার কারণেও ওই দেশের স্থলেও যেতে পারছেন না তারা। ফলে অনেকের জীবন কাটছে ওই জাহাজে।
এ প্রসঙ্গে নৌ বাণিজ্য অধিদফতরের প্রিন্সিপাল অফিসার মো. গিয়াস উদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশি যে নাবিক বাংলাদেশ আসছে তাদেরকে আমরা জাহাজ থেকে সাইন আউট করতে দিচ্ছি। কিন্তু বিদেশী নাবিকদের তা করতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে আগে তারা সাইন আউট করে এয়ারে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেও এখন তা পারছে না। তাছাড়া আকাশ পথ চালু থাকলেও তাদেরকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে কভিডের ফলাফল দিতে হবে।