বিটকয়েনের স্রষ্টা সাকোশি নাকামোতোকে নিয়ে যত ভ্রান্তি
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/02/27/screenshot_7.jpg)
ডিজিটাল ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম কয়েনবেজের পাবলিক ফাইলিংয়ের পর আবারও আলোচনায় এসেছেন বিটকয়েনের রহস্যময় প্রতিষ্ঠাতা সাতোশি নাকামোতো। তবে সংস্থাটির মতে, বিটকয়েনের প্রতিষ্ঠাতার আসল পরিচয় ফাঁস হলে বরং তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ডিজিটাল এ মুদ্রার মানের ওপর।
২০০৯ সালে তৈরি এ মুদ্রাটি বিগত বছরগুলোতে বেশ চড়াই উতরাই পার করে এসেছে, এর মান ৪০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৫০ হাজার ডলারের মাইলফলকও ছুঁয়েছে।
বিটকয়েনকে বাজার মূল্য হিসাবে বিশ্বের শীর্ষ ক্রিপ্টোকারেন্সি হিসাবে বিবেচনা করা হলেও এর আবির্ভাবকে ঘিরে এখনও প্রচুর রহস্য রয়ে গেছে। বিটকয়েনের ধারণার প্রবর্তক কে? এটি কি একাধিক ব্যক্তির তৈরি? সাতোশি নাকামোতোই বা কে? এমনই অনেক প্রশ্নের জবাব মেলেনি এখনও।
২০০৮ সালের আগস্টে ডোমেন নাম বিটকয়েন.অরগ অনলাইনে নিবন্ধিত হয়েছিল। দুই মাস পরই 'বিটকয়েন:আ পিয়ার-টু-পিয়ার ইলেকট্রনিক ক্যাশ সিস্টেম' শীর্ষক একটি প্রতিবেদন ক্রিপ্টোগ্রাফি মেইলিং লিস্টে ছড়িয়ে পড়ে। এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমেই প্রথমবারের মতো রহস্যজনক ব্যক্তিত্ব সাতোশি নাকামোতোর অনলাইনে আবির্ভাব হয়, সেইসাথে স্থায়ীভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি নামের সাথেই তার নাম জড়িয়ে পড়ে।
বিটকয়েন একটি সফটওয়্যার প্রোগ্রাম, লটারি ভিত্তিক সিস্টেমে বিটকয়েন 'মাইন' করে বিটকয়েন জমা করা হয়। আগামী ২০ বছরের মধ্যে ২ কোটি ১০ লাখ বিটকয়েন মাইন করা হতে পারে। এখন পর্যন্ত মাইন করা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৮৪ লাখ।
হোল ফিনে, বিটকয়েনের প্রথম দিকের উত্সাহীদের মধ্যে একজন, পেশায় তিনি একজন কনসোল গেম ডেভেলপার এবং সাইফারপাঙ্ক মুভমেন্টের প্রারম্ভিক সদস্য। ক্রিপ্টোকারেন্সি মেইলিং তালিকার মাধ্যমে বিটকয়েনের জন্য নাকামোতোর প্রস্তাব খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2021/02/27/screenshot_8.jpg)
২০১৩ সালের একটি ব্লগ পোস্টে ফিনে বলেছিলেন, একটি বিকেন্দ্রীভূত অনলাইন মুদ্রার ধারণা দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন। নাকামোতোর সাথে তার কথোপকথনের বিষয়ে ফিনে বলেছিলেন, "আমি ভেবেছিলাম যে আমি জাপানি বংশধর এক যুবকের সাথে কথা বলছিলাম। তিনি অত্যন্ত স্মার্ট এবং একইসাথে আন্তরিক ছিলেন।"
তবে তিনি বিটকয়েনের প্রতিষ্ঠাতা এসংক্রান্ত সব দাবি অস্বীকার করেছেন তিনি।
২০১৪ সালে নিউরো-ডিজেনারেটিভ রোগ এএলএসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। বিটকয়েন ফোরামে তার এক পোস্টে তিনি বলেছিলেন, সাতোশি নাকামোতোর আসল পরিচয় এখনও তার কাছেও রহস্যই রয়ে গেছে।
২০১০ সালে বেশ কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠিত মুদ্রার পরিবর্তে লেনদেনের ক্ষেত্রে বিটকয়েন গ্রহণ শুরু করেন।
ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়ে কিনে নেওয়া প্রথম জিনিসগুলোর মধ্যে একটি ছিল পিজ্জা। সেসময় ওই পিজ্জা কেনার জন্য যতো খরচ হয়েছিল তার বর্তমান বাজার দর বর্তমানে ১০০ মিলিয়ন ডলার। বর্তমানে অন্যান্য সংস্থাগুলোও বিটকয়েনে বিনিয়োগ শুরু করেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে টেসলা ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিটকয়েন কিনে নেয় এবং প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকদের এই ডিজিটাল মুদ্রায় বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য কেনার সুযোগ দেওয়া হয়।
তবে বিটকয়েন সহজাতভাবে ট্রেসলেস, এর এই বৈশিষ্ট্যের জন্য এটি ইন্টারনেটে কালো বাজারে মাদকের ব্যবসায়ের জন্যও আদর্শ। এটি ডিজিটাল নগদের সমতুল্য।
বিটকয়েন থাকলে যে কেউ পরিচয় প্রকাশ না করেই সিল্ক রোডে গিয়ে গাঁজার বীজ, এলএসডি এবং কোকেন কিনতে পারত। তবে সুবিধাটি পুরোপুরি একতরফা ছিল না। তারা অবৈধ বাণিজ্য পরিচালনা করলেও কোনো এক উপায়ে এই মাদক পাচার সাইটটি বিটকয়েনকে তাদের ব্যবসায়ের মাধ্যম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2021/02/27/screenshot_10.jpg)
গুগলে সাতোশি নাকামোতো লিখে সার্চ দিলে ফলাফলে একজন বয়স্ক এশিয়ান ব্যক্তির ছবি দেখা যায়। এই ব্যক্তি হলেন ডোরিয়ান এস নাকামোতো, জন্মসূত্রেই এই নাম পেয়েছেন তিনি। প্রায় ৭০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি তার মায়ের সাথে লস অ্যাঞ্জেলেসে থাকেন। শত শত বার মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে বিটকয়েনের সে স্রষ্টা তিনি নন।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2021/02/27/screenshot_11.jpg)
২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ান উদ্যোক্তা ক্রেইগ রাইট নিজেকে বিটকয়েনের স্রষ্টা দাবি করেছিলেন। প্রমাণ হিসাবে বিতর্কিত কোড দেখিয়েছিলেন তিনি। বিটকয়েনের এক ডেভেলপার গ্যাভিন অ্যান্ড্রেসন রাইটের দাবিকে জোর দিয়ে বলেছিলেন তিনি ৯৮ শতাংশ নিশ্চিত এই রাইটই নাকামোতো ছদ্মনাম ব্যবহারকারী সেই ব্যক্তি।
তবে অন্যান্যরা তত্ক্ষণাৎ তার দাবি উড়িয়ে দেন। এর মধ্যেই রাইট তার পোস্ট মুছে ফেলে ক্ষমা চান।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2021/02/27/screenshot_12.jpg)
হাইপার-সিক্রেটিভ ক্রিপ্টোকারেন্সি বিশেষজ্ঞ নিক সাজাবোকেও বেশ কয়েকবার বিটকয়েনের স্রষ্টার তকমা দেওয়া হয়। তিনি বিটকয়েনের ডেভেলপের একজন পথিকৃৎ ছিলেন, শুধু তাই নয়, তিনি ৯০ এর দশকের শেষদিকে বিট সোনার নামে একটি নিজস্ব ক্রিপ্টোকারেন্সিও তৈরি করেছিলেন।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2021/02/27/screenshot_13.jpg)
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে সাজাবোকে বিটকয়েনের স্রষ্টা আখ্যা দেওয়া হয়। বিটকয়েন এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তির ইতিহাস সম্পর্কে প্রকাশ্যে কথা বলা এই ব্যক্তি প্রথম থেকেই ক্রিপ্টোকারেন্সির সাথে জড়িত ছিলেন। তবে এক টুইট বার্তায় তিনি এই দাবিগুলিকে উড়িয়ে দেন।
প্রশ্ন হলো, কেন কোনো ব্যক্তি এধরনের একটি মুদ্রা তৈরি করে তার পরিচয় গোপন করবেন? কেন এর কোন কৃতিত্বই নেবেন না?
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে নাকামোতো লিখেছিলেন, "প্রচলিত মুদ্রা চালু রাখার জন্য যে বিশ্বাসের প্রয়োজন পড়ে তাই এর মূল সমস্যা। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়, তবে কেন্দ্রীয় ব্যংকের বিশ্বাস ভঙ্গের ইতিহাস তো বেশ পুরনো। আমাদের গোপনীয়তা সম্পর্কিত ব্যাপারে তাদের ওপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়,"
বিটকয়েন ফোরামগুলোর অনুমান, নাকামোতো একজন উদারপন্থী ব্যক্তি যিনি দুর্নীতিগ্রস্থ ধনী ব্যক্তি এবং রাজনীতিবিদদের ঘৃণা করেন।
অন্যান্য বিটকয়েন উত্সাহীদের মতে, বিটকয়েনের উত্থানের সময় দেখলেই বোঝা যায় দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যাংকিং খাত থেকে উত্তরণের জন্যই এর প্রবর্তন।
সাকাশি নাকামোতোর ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে কী জানা গেছে?
তিনি অসম্ভব প্রতিভাবান
২০১১ সালের নিউইয়র্কের এক প্রবন্ধে বলে হয়েছিল, শীর্ষস্থানীয় একজন ইন্টারনেট সুরক্ষা গবেষক বিটকয়েনের কোডের ব্যাপারে বলেছেন: "কোডিং এতো পুঙ্খানুপুঙ্খ হওয়া, এতোটা পার্ফেক্ট হওয়া কেবল বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিভাবান কোডারের পক্ষেই এভাবে সব রকম ভুল এড়িয়ে কোডিং করা সম্ভব,"
সাবলীল ইংরেজি বলতে পারেন
নাকামোতো বিটকয়েন সম্পর্কে বেশ বিস্তারিতভাবে লিখেছেন, দুবছর ধরে এই বিষয়ে প্রায় ৮০ হাজার শব্দ রচনা করেছেন তিনি। তার লেখা ও কাজ একদমই সহজাত।
ব্রিটিশ হতে পারেন
বানান এবং তাদের কথোপকথনের ব্যবহার থেকে চিন্তা করলে তাকে ব্রিটিশ বলেই মনে হয়। তার পোস্টগুলোর সময় দেখেও ধারণা করা যায় পোস্টগুলো যুক্তরাজ্য থেকেই করা হয়।
বিটকয়েনের স্রষ্টা একাধিক ব্যক্তি হতে পারেন
বিটকয়েনের কোডিং দেখে অনেকেই অবাক বনে গেছেন, অনেকেরই মতে এটি শুধু একজনের কাজ নয়। বিটকয়েনের সিকিউরিটি গবেষক ড্যান কামিনস্কি বলেছিলেন, নাকামোতো হয়তো একদল প্রতিভাবানেরই নাম!
- সূত্র: ইনসাইডার