যাদের কাছে মৃত্যু ভয়ও উপেক্ষিত
সারা বিশ্বে এখন করোনাভাইরাস আতঙ্ক। প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা রয়েছেন মানুষের পাশে। যারা সরাসরি করোনায় আক্রান্তের সংস্পর্শে এসে নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসা সেবা প্রদানের দায়িত্ব পালন করছেন। করোনা সন্দেহভাজন রোগী বা উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে তাদেরও নমুনা সংগ্রহ করছেন মৃত্যু ভয়কে উপেক্ষা করেই।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালসহ জেলার সাতটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করতে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। করোনার উপসর্গ দেখা দিলেই বা কেউ মারা গেলে ছুটে চলেছেন নমুনা সংগ্রহ করতে। পরিবারের কথা না ভেবেই মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন এসব স্বাস্থ্যকর্মীরা।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে প্যাথলজি বিভাগের ল্যাব টেকনোলজিস্ট রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দায়িত্ব পালন করছেন করোনা উপসর্গ ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহের। পরিবার করোনা আতঙ্কে থাকলেও দায়িত্ব পালনে অসম্মতি জানায়নি তার পরিবার।
তিনি জানান, সদর হাসপাতালে তিনজন নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করছি। ভয়ে থাকি, তারপরও দায়িত্ব পালন করতে হবে। পরিবারও আতঙ্কিত, তবে অসম্মতি জানায়নি দায়িত্ব পালনে। এখন পর্যন্ত ২০-২৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছি। নমুনা সংগ্রহের পর গোসল করি। এরপর বাসায় ফিরেও পূনরায় সাবান দিয়ে গোসল করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হই। ভয়ে থাকলেও পিছু ফিরলে হবে না।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা নমুনা সংগ্রহের জন্য গঠন করা হয়েছে পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম। এতে রয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আবুল কাসেম, মহিবুর রহমান, স্বাস্থ্য সহকারী মেহেদী হাসান, ফারুক হাসান ও অফিস সহায়ক সাইফুল্লা হাবীব।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী ফারুক হাসান বলেন, সদর উপজেলার মধ্যে কোথাও করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলেই বা কারো মৃত্যু ঘটলেই ডাক পড়ে আমাদের। এখন পর্যন্ত ৩৬টি নমুনা সংগ্রহ করেছি। তার মধ্যে ২৪টি নমুনা সংগ্রহে আমি ছিলাম। এর মধ্যে দুই জন করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তি।
তিনি বলেন, সরকারি চাকরি করি, তাছাড়া মানুষের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতাও রয়েছে। এ দূর্যোগের সময় মানুষের জন্য আমাদের কাজ করে যেতে হবে। প্রথম দিকে পিপিই দেওয়া হয়নি। তখন একটু ভয় লাগতো। তবে বর্তমানে পিপিই সরবরাহ করায় এখন আর ভয় লাগে না। নিজেদের সতর্কতা অবলম্বন করেই নমুনা সংগ্রহ করে যাচ্ছি। স্ত্রী শিক্ষিত, তার সম্মতিও নিয়েছি।
এভাবেই জেলার সাতটি উপজেলায় স্বাস্থ্যকর্মীরা একযোগে মাঠে নমুনা সংগ্রহের কাজ করছেন। সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের করোনা বিষয়ক মুখপাত্র ডা. জয়ন্ত কুমার জানান, বুধবার পর্যন্ত সাতক্ষীরা থেকে ৪৩৩টি নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পাওয়া গেছে ২৬৬টি। এর মধ্যে দুইজনের শরীরে করোনা পজেটিভ।
সাতক্ষীরার করোনা নমুনা সংগ্রহকারী এসব সৈনিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন সাফায়াত বলেন, মৃত্যু ভয়কে উপেক্ষা করেই ঝুঁকি নিয়ে এসব স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করার কাজ করছেন। সাতটি উপজেলায় একটি করে করোনা নমুনা সংগ্রহকারী টিম গঠন করা হয়েছে। তাদের মাঝে পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে। তারা অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে কাজটি করছেন। এটি অত্যন্ত প্রশংনীয় ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ।
তিনি বলেন, সরকার আলাদাভাবে করোনা নমুনা সংগ্রহকারীদের নামের তালিকা নিয়েছে। সাতটি উপজেলা ও জেলা সদর হাসপাতাল থেকে নমুনা সংগ্রহকারীদের তালিকা আমি পাঠিয়েছি। সরকারের তাদের বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া উচিত।