যে ট্রেন পাড়ি দেয় হাজার সেতু
ধীরগতির ছোট্ট ন্যারোগেজ রেলপথে ভ্রমণে আলাদা এক রোমাঞ্চ কাজ করে। এমন যাত্রায় দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর চাইতে যাত্রাপথের দু’পাশে সৌন্দর্য অনুভবের দিকেই পড়ে থাকে যাত্রীর মন। মনের পর্দায় ভেসে ওঠে অতীতের সুখস্মৃতি।
ঠিক এমন যাত্রার আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ পেতে পারেন ভারতের হিমাচল প্রদেশের রাজধানী শিমলাতে। কল্কা টু শিমলা রুটে চলাচলকারি টয় ট্রেনে চড়েই এই আনন্দ পাবেন আপনি । প্রচলিত ট্রেনের চাইতে ইঞ্জিনের ছোট্ট আকার এবং মন্থরগতির কারণেই ‘টয় ট্রেন’ নামকরণ।
কল্কা-শিমলা ন্যারোগেজ লাইনে টয় ট্রেন চলে মনোরম পাহাড়ি উপত্যকা আর বাঁকের পথ ধরে। সূর্যের আলোয় উদ্ভাসিত উপত্যকা, গভীর পাহাড়ি খাঁদ, ঝর্ণা বা দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়ের চূড়া ঘুমিয়ে না পড়লে কোনো যাত্রীর নজর এড়িয়ে যাবে না এসব অনাবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
পাহাড়ের গায়ে পোস্টকার্ডের ছবির মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উপনৈবেশিক আমলের স্থাপনা, ছোট্ট ছোট্ট গ্রাম, গহীন অরণ্য সৌন্দর্যের মাত্রা শুধু বাড়ায়। খবর সিএনএনের।
ভারত ঘুরে দেশটির সব সুন্দর স্থান দেখতে চান, এমন পর্যটকদের কাছে তাই টয় ট্রেনে ভ্রমণের আবেদন অতুলনীয়। শিমলার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দুই হাজার ৭৫ মিটার, আর শিমলা থেকে ছাড়ার পর ট্রেন যাত্রা আপনাকে কল্কা অঞ্চলে আরও ৬৫৮ মিটার উঁচুতে নিয়ে যাবে। পাঁচ ঘণ্টার এই যাত্রাপথে ধীরগতিতে চাকার ছন্দ তুলে পাড়ি দেবে মাত্র ৬০ মাইল। কিন্তু এটুকু পথেই পেয়ে যাবেন ১০৩টি রেল সুড়ঙ্গ, ৯১৭টি বাঁক আর ৯৮৮টি রেলসেতু।
তাই শুধু প্রাকৃতিক নিসর্গের বিবেচনায় নয়, কল্কা-শিমলা রেলপথ ইংরেজদের রেল প্রকৌশল বিদ্যারও এক অন্যন্য উদাহরণ। সবদিক বিবেচনা করেই ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কো একে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেয়। ইউনেস্কো ঘোষণায় বলা হয়, হিমালয় পর্বতে রেলপথ নির্মাণ করার কষ্টসাধ্য কাজকে সম্ভব করার কারণেই এটি সমগ্র মানবজাতির প্রকৌশল বিজ্ঞানের জন্য এক বড় অর্জন।
ট্রেনটি তার প্রথম যাত্রা শুরু করে উপনৈবেশিক শাসনামল থেকে, ভারতে এই সময়টা ‘ব্রিটিশ রাজ’ নামেই পরিচিত। ব্রিটিশ রাজ বা তৎকালীন প্রশাসনের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী ছিল শিমলা। আর সায়েব-সুবোদের পাহাড়ি পথে ভ্রমণে অনাবিল আনন্দ দিতেই চালু করা হয় এই ট্রেন।
ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ শাসন করেছে প্রায় দুইশ’ বছর। ব্রিটিশ ভাইসরয় জন লরেন্স ১৮৬৩ সালে শিমলায় গ্রীষ্মকালীন রাজধানী স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেন। ব্রিটিশরা আসার আগে শিমলা ছিল দুর্গম অরণ্য আর পাহাড়ে ঘেরা এক অঞ্চল, মাঝে মাঝে কিছু মন্দির আর দু’একটি গ্রাম ছাড়া জনবসতি ছিল অতি-বিরল। রাজধানী স্থানান্তরিত হওয়ার পরেই সুদক্ষ পরিকল্পনায় গড়ে তোলা হয় শিমলা শহর।