শুধু তাপমাত্রা মাপাই কাজ রামগতি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের
আধুনিক ভবন ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও গত ১৪ বছরেও পুরোদমে চালু হয়নি লক্ষ্মীপুরের রামগতির প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রদানের মধ্যেই আটকে আছে তাদের কার্যক্রম। কবে নাগাদ এটি পুরোদমে চালু হবে তাও নিশ্চিত করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয়রা বলছেন, বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে বানানো প্রতিষ্ঠানটি এভাবে ফেলে রাখা জনগণের অর্থ অপচয়ের নামান্তর।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৬ সালে উপজেলার আলেকজান্ডার পৌরসভার চর সেকান্তর গ্রামে দেড় একর জমির ওপর পর্যবেক্ষণাগারটি স্থাপন করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। নৌযান চলাচল ও আবহাওয়ার পূর্বাভাস, দুর্যোগের সতর্কীকরণ এবং স্থানীয় আবহাওয়ার বিভিন্ন তথ্য কেন্দ্র এবং স্থানীয়দের মাঝে সরবরাহের জন্য পর্যবেক্ষনাগারটি স্থাপন করা হয়। শুধু অবকাঠামো তৈরি করতে দুই দফায় খরচ হয়েছে দুই কোটি ৬২ লাখ টাকা। তবে কত টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতি সেখানে অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে তা সংশ্লিস্ট কেউ-ই জানাতে রাজি হননি।
রামগতি পৌরসভার বাসিন্দা হাসান ইবনে আবদুল কাইয়ুম বলেন, আবহাওয়া ভবনটি নির্মাণের পর থেকে এর কোনো কার্যক্রম সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ না করে ভবণ নির্মাণ করার যৌক্তিকতা কি?
স্থানীয় রামগতি পৌরসভার মেয়র মেজবাহ উদ্দিন মেজু জানান, রামগতিতে যে একটি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার আছে তা খোদ প্রশাসনও ঠিক মতো জানেন না। অফিসটি দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ রাখার কারণে ভবনটি একসময় মাদকসেবী আর চোর ডাকাতদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়। পরে ২০১৭ সালে নিরাপত্তার জন্য দুইজন আনসার সদস্য ও অফিসের জন্য দুইজন কর্মকর্তা কাগজে কলমে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্ত আনসার সদস্য ছাড়া কর্মকর্তারা অফিসে আসে না বলেই জানি।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মৃনাল কান্তি সাহা জানান, নির্মাণের পর থেকেই কোনো লোকজন দেখিনি। এর পরে আরও একটি আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আর এভাবে নয়-ছয়ে চলে গেছে ১৪ বছর।
অফিসটির একমাত্র কর্মকর্তা সিনিয়র আবহাওয়া অবজারভার সোহরাব হোসেন মোবাইল ফোনে জানান, তার নিয়োগ হয়েছে ২০১৭ সালে। তবে অফিসটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়নি। বর্তমানে এ অফিসের মাধ্যমে তিনি দৈনিক দুই বার সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রার রেকর্ড ঢাকায় পাঠাচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণাগার স্থাপন প্রকল্প পরিচালক ও আবহাওয়াবিদ মজিদুল ইসলাম জানান, ২০০৬-০৭ অর্থ বছরে "অভ্যন্তরীণ নৌ দুর্ঘটনা ও পুর্বাবাস সর্তকীকরণ কেন্দ্র স্থাপন" প্রকল্পের অধীন ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে পর্যবেক্ষণাগারটি নির্মাণ করা হয়েছে। তখন বিদ্যুৎ-সংযোগসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছিল।
আবার দ্বিতীয় ধাপে 'বাংলাদেশের ১৪টি নদী বন্দরে প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার শক্তিশালীকরণ প্রকল্প' এর অধীন ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে এক কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় তিনতলা বিশিষ্ট আরো একটি আবাসিক ভবন। জনবল নিয়োগ না হওয়ায় পর্যবেক্ষণাগারটি পুর্নাঙ্গ চালু করা সম্ভব হয়নি। অফিসের জন্য সাত জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ থাকলেও পাঁচটি পদই খালি।
তিনি জানান, প্রকল্পটি আগামী জুনের মধ্যে শেষ হবে। এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ হলে পুরোদমে চালু হবে এ অফিস। তবে কবে নাগাদ জনবল নিয়োগ হবে তা স্পষ্ট করে তিনি জানাতে পারেননি।
দুই দফায় দুই কোটি ৬২ লাখ টাকা খরচে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। কত টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতি সেখানে রয়েছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অফিসের উপ-পরিচালক আছাদুর রহমান জানান, প্রকল্প মেয়াদ শেষ হলে পর্যবেক্ষণাগারটি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের অধীন্যস্ত করা হবে। তখন চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস এর দেখাশোনার দায়িত্ব নেবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মেঘনা উপকূলীয় লক্ষ্মীপুর জেলায় ১৮ লাখ মানুষের বসবাস। জেলার পাঁচ উপজেলার মধ্যে লক্ষ্মীপুর সদর, রামগতি, কমলনগর ও রায়পুর সরাসরি মেঘনা উপকূলীয়। স্থানীয় মৎস্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, জেলায় প্রায় ৫০ হাজার জেলে নদীতে মাছ শিকার করে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ এ অঞ্চলের মানুষ নিত্যসঙ্গী। তাছাড়া ২০১৭ সালে লক্ষ্মীপুরে একটি নৌবন্দর স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে লক্ষ্মীপুরের জন্য রামগতি প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারটি চালু হওয়া খুবই জরুরি।