সিলেটেও মিলছে খেজুর রস
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/01/09/sylhet_1_2.jpg)
খেজুর রস আর গুড়ের জন্য দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর খ্যাতি থাকলেও সিলেটে খেজুরের চাষ তেমন হয় না। ফলে খেজুরের রসও এখানে দুর্লভ। তবে এবার সিলেটে মিলছে খেজুরের রস। আর এই রস খেতে ভোর থেকে আগ্রহীরা ভিড় করছেন খেজুর বাগানে।
সিলেট নগরী থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে কান্দিগাঁও ইউনিয়ন। ওই ইউনিয়নের জাঙ্গাইল এলাকায় ৬৩টি খেজুরের গাছ নিয়ে রয়েছে একটি বাগান। পরিচর্যার ফলে ওই গাছগুলোতে এবার মিলছে রস। এক কান দু-কান করে সেই খবর ছড়িয়ে পড়েছে পুরো সিলেটজুড়ে। ফলে টাটকা খেজুরের রস খেতে ভোর থেকে শতশত লোক জড়ো হচ্ছেন ওই বাগানের পাশে।
স্থানীয়রা জানান, খেজুর গাছগুলো কয়েকবছর আগেই রোপন করা হয়েছিল। গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে জাঙ্গাইল এলাকায় দারুল আয়তাম হালিমাতুস সাদিয়া (রা.) নামে একটি এতিমখানা স্থাপন করা হয়। এরপর এতিমখানার দায়িত্বরতরা খেজুর গাছগুলোর পরিচর্যা শুরু করেন। এজন্য সুনামগঞ্জের নারায়ণতলা এলাকা থেকে ইমান আলী নামের একজন গাছিকে মৌখিক চুক্তিতে ওই এলাকায় নিয়ে আসে এতিমখানা কর্তৃপক্ষ। তার পরিচর্যায়ই এবার রস এসেছে খেজুর গাছে। ওই রস খেতে গত এক সপ্তাহ ধরে ভোর থেকে ভিড় লাগছে বলে জানিয়েছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
গত শনিবার ভোরে জাঙ্গাইল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভোর হওয়ার আগেই শতাধিক লোক এতিমখানার পাশ্ববর্তী খেজুর বাগানে ভিড় করেছেন। প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, অটোরিকশায় করে দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন তারা।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/01/09/sylhet_1_1.jpg)
ভোর ৫টায় সদর উপজেলার বটেশ্বর থেকে কয়েকজন বন্ধু নিয়ে রস খেতে এসেছেন সৈয়দ সাইফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘‘খেজুর রসের কথা অনেক শুনেছি। কিন্তু কোনো দিন খাইনি। ফেসবুকে দেখলাম এখানে খেজুরের রস পাওয়া যায়। তাই আজ খেতে আসলাম।’’
সাইফুরের মতো এখানে আসা প্রায় সকলেই প্রথমবারের মত খেজুরের রসের স্বাদ গ্রহণ করেন এদিন। এদের মধ্যে রয়েছেন সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ফাহিম আহমদ।
তিনি বলেন, ‘‘খেজুর রস সম্পর্কে বইয়ে পড়েছি। অনেক গল্প শুনেছি। আজই প্রথম খেলাম। এটি খুবই চমৎকার অভিজ্ঞতা।’’
স্থানীয়রা জানান, এখানকার গাছগুলো থেকে প্রতিদিন ২০ থেকে ৪০ লিটার রস পাওয়া যায়। একটি গাছ থেকে দুই দিন পরপর রস সংগ্রহ করা হয়। মাটির হাঁড়ি ও প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। প্রতি গ্লাস খেজুরের রস ১০ টাকা ও প্রতি লিটার ৫০ টাকা করে বিক্রি করা হয়।
গাছি ঈমান আলী বলেন, এখানে ৬৩টি খেজুরগাছ রয়েছে। এরমধ্যে ৫৫টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হচ্ছে। বাকি গাছগুলো থেকে রস আসে না।
গত একমাস ধরে খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করছেন জানিয়ে ইমান আলী বলেন, প্রথম প্রথম এতিমখানার শিক্ষার্থীদের রস খাইয়ে বাকি রস দিয়ে গুড় তৈরি করতাম। তবে কয়েকদিন আগে স্থানীয় এক যুবক এসে এখানে রস খেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি শেয়ার করেন। এরপর থেকে রস খাওয়ার জন্য ভোর হতেই অসংখ্য মানুষ এসে ভিড় করছে। এখন সকাল ৬টার মধ্যে সব রস শেষ হয়ে যায়।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/01/09/sylhet_1_3.jpg)
দারুল আয়তাম হালিমাতুস সাদিয়া (রা.) এতিমখানার হিফস বিভাগের প্রধান হাফিজ জাকারিয়া আহমদ বলেন, এই এতিমখানা কার্যক্রম শুরু করার পরই এতিমখানার বাচ্চাদের জন্য গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় বানিয়ে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিই।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা নিপা ভাইরাস সম্পর্কেও অবগত আছি। তাই রস সংগ্রহের পাত্র যতোটা সম্ভব নেট দিয়ে ঢেকে রাখি এবং রাতে পাহারার ব্যবস্থা করি।’’
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান বলেন, সিলেট অঞ্চলের কৃষকদের খেজুর গাছ চাষের প্রবণতা কম। সাধারণত দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা বেশি খেজুরের চাষ করেন। পর্যাপ্ত রোদ, কম আর্দ্রতা, কম বৃষ্টিপাত এবং উষ্ণ আবহাওয়ায় এ ফল চাষের জন্য উপযোগী।
তিনি বলেন, সিলেট অঞ্চলের মাটি খেজুর গাছের জন্য উপযোগী। কিন্তু এই অঞ্চলের মাটি এসিডিক হওয়ায় গাছে রস হলেও ফল হওয়ার সম্ভাবনা কম।
রাকিবুল হাসান আরও বলেন, সিলেটে সরকারিভাবে খেজুর ও তাল গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।