৩ কোটি বছর আগে গ্রিনহাউজ গ্যাস হ্রাস পাওয়ায় বরফ যুগে প্রবেশ করে পৃথিবী: গবেষণা
হারিকেন, বন্যা থেকে শুরু করে মরুকরণ ও অগ্নুৎপাত, সবই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের লক্ষণ। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাওয়া এর পেছনে দায়ী। পরিবেশে এ গ্যাসের পরিমাণ যতো বাড়বে, বৈশ্বিক উষ্ণতাও ততো বাড়বে। তবে এর ঠিক বিপরীতটাও ঘটা সম্ভব, আরও পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে, এমনটা ঘটেছিল বহু বছর আগে এর প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা।
ন্যাচার জিওসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ৩ কোটি ৪০ লাখ বছর আগে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ অত্যধিক কমে যাওয়ায় পৃথিবী এক শীতল যুগে প্রবেশ করে। আইসহাউজ দশা নামেও পরিচিত এ অবস্থাটি।
এর আগ পর্যন্ত পৃথিবীর প্রতিটি অঞ্চলে, এমনকি বর্তমান অ্যান্টার্কটিকাতেও চিরহরিৎ বনের সমাহার ছিল। পৃথিবীতে তখন দীর্ঘস্থায়ী বরফের চাদরে আচ্ছাদিত কোনো এলাকা ছিল না। পোলেন ও পোলেন ফসিল গবেষক প্যালিনোলজিস্ট ভেরা কোরাসিদিস ও গবেষণাটির সহ-লেখক ও স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্টোরির পোস্ট ডক্টোরিয়াল ফেলো পিটার বাক এসব কথা জানান।
ইওসিন অলিগোসিন যুগের রূপান্তরের সে সময়ে মাত্র ৩ লাখ বছরের ব্যবধানে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ৫.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) কমে যায়।
এতো দ্রুত এ ধরনের ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনই নির্দেশ করে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণের বিশাল পরিবর্তন জলবায়ুর ওপর কিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
৩ কোটি ৪০ লাখ বছর আগ পর্যন্তও পৃথিবীর অবস্থা একেবারেই অন্যরকম ছিল, কোনো মহাদেশেই বরফে আচ্ছাদিত এলাকা ছিল না। তারপর হঠাত করে পৃথিবীর তাপমাত্রা কমতে শুরু করে।
"ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে বলতে গেলে, খুব তাড়াতাড়িই এ পরিবর্তন ঘটে। এর আগে বহু বছর অ্যান্টার্কটিকায় কোনো বরফের আচ্ছাদন ছিল না," বলেন ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের জৈব ভূ-রসায়নবিদ ও গবেষণাটির সহলেখক ডেভিড নাফস।
সামুদ্রিক পাললিক নমুনা থেকেই এসব তথ্যের প্রমাণ মিলেছে। তবে ঠিক কীভাবে এ বিশাল রূপান্তর ঘটেছিল সে ব্যাপারে এখনো খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি।
সে সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের রেকর্ড সংগ্রহ করার জন্য গবেষক দল কয়লায় সংরক্ষিত থাকা ইওসিন ও অলিগোসিন যুগ ও রূপান্তরের সময়কার ব্যাকটেরিয়ার লিপিড থেকে আণুবীক্ষণিক ফসিলের নমুনা বিশ্লেষণ করেন।
লিপিড এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ, প্রায় সব ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণিদেহেই এটি তৈরি হয়। তবে তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে জীবদেহে লিপিড তৈরির পদ্ধতিও পালটে যায়।
"উচ্চ তাপমাত্রার কোনো ব্যাকটেরিয়া জন্মালে, সে ব্যাকটেরিয়া এক ধরনের লিপিড তৈরি করবে। আবার ঠাণ্ডা তাপমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া জন্মালে, সে ব্যাকটেরিয়ার কোষে তৈরি লিপিড দেখতেও অন্য রকম হবে," বলেন নাফস।
"ফসিলে এ ধরনের পরিবর্তন শনাক্ত করেই আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষণ খুঁজতে পারি,"
সংরক্ষণের ক্ষমতার জন্য লিপিড ফসিল খোঁজার সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা কয়লা।
"শুধু স্থলভাগেই কয়লা পাওয়া যায়, সে কারণে এ থেকে ভিন্ন ধরনের ভূতাত্ত্বিক রেকর্ড পাওয়াও সম্ভব। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ায় সবচেয়ে পুরু ইওসিন-পলিগোসিন কয়লা পাওয়া যায়," বলেন কোরাসিদিস।
ইওসিন অলিগোসিন রূপান্তর কেনো ঘটেছিল টা নিয়ে ইতঃপূর্বে দ্বিধায় ছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিছু সময়ের জন্য তাদের ধারণা ছিল অ্যান্টার্কটিক সাগরের জলপ্রবাহে পরিবর্তনের কারণে এমনটা ঘটেছে। তবে ধীরে ধীরে ওই তত্ত্বও গ্রহণযোগ্যতা হারায়।
গবেষকদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ হ্রাসের কারণে ভূ-তাত্ত্বিক হিসেবে খুবই কম সময়- মাত্র ৩ লাখ বছরের মধ্যে ওই ঘটনা ঘটে।
তাদের এই গবেষণায় দেখা যায়, সব ধরনের পরিস্থিতিতেই কার্বন ডাই অক্সাইড জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। তাদের গবেষণায় ব্যবহৃত মডেল তৈরি করেছে ব্রিস্টল রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ ফর দ্য ডায়নামিক গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট।
"আমাদের গবেষণার ফলাফলের অন্যতম প্রধান বার্তা হলো, জলবায়ু পরিবর্তনে কার্বন ডাই অক্সাইডই মূল ভূমিকা রাখে," বলেন নাফস।
- সূত্র: স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন