৪০ পেরিয়েও থাকুন ছিপছিপে
অনেকের কাছে, বয়স চল্লিশ মানেই জীবনের শেষ। আবার অন্যদিকে কারো কারো কাছে, চল্লিশে পা যেন জীবনের নতুন মাইলফলক।
কেউ কেউ ভাবতে পারেন, এই বয়সে এসেও কী মেদহীন, ছিপছিপে স্বাস্থ্য ধরে রাখা সম্ভব! চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে, শতভাগ সম্ভব। এ সময় বরং নিজের দিকে আলাদা করে সময় বেশি দেওয়া প্রয়োজন।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেডমিলে দৌড়াতে হবে না, রাখতে হবে না নিজেকে নিজে অভুক্ত। জীবনযাপন প্রণালীতে ছোট ছোট পরিবর্তনেই পৌঁছাতে পারবেন সুস্বাস্থ্য অর্জনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।
পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ
শরীর ঝরঝরে রাখতে একদিকে যেমন ওজন কমাতে হবে, তেমনি পেশী গঠনেও মনোযোগী হতে হবে। আর এজন্যে আপনার খাদ্যে পর্যাপ্ত প্রোটিন আছে কি না তা নিশ্চিত করুন।
যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা ডায়েটিশিয়ান অ্যাবি সওয়ার দীর্ঘদিন যাবত 'এইজিং' বা বুড়িয়ে যাওয়া নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, "আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে পেশীর ভর কমতে থাকে। চল্লিশের পর থেকে প্রতি ১০ বছরে পেশী ভরের ৮% হারাতে থাকি আমরা, যা সত্তরের পর আরও ত্বরান্বিত হয়।"
এই পেশীক্ষয় মোকাবেলা করার জন্য পুষ্টিবিদ অ্যাবির পরামর্শ হলো, ডায়েটে উচ্চ মানের প্রোটিন অন্তর্ভুক্ত করা। ডিম, বাদাম, মাছ, কুমড়ার বীজ, দুধ, ডাল, ব্রকোলি ইত্যাদি হতে পারে প্রোটিনের ভাল উৎস।
ইম্যুউন সিস্টেমকে সুরক্ষিত রাখুন
বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডায়েটে পর্যাপ্ত ভিটামিন এবং খনিজ নিশ্চিত করাটা গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার দেহের ইম্যুউন সিস্টেমকে সহায়তা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে সাহায্য করবে। আবার দেহে ভিটামিনের যথাযথ উপস্থিতি আপনাকে ওয়ার্কআউট, ইয়োগা এবং অন্যান্য ব্যায়াম করার মতো 'বুস্ট' প্রদান করবে।
যারা এতদিন সময় পাননি, তারাও এবার হাঁটতে শুরু করুন। পাশাপাশি পরিবর্তন আনুন দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে।
সওয়ার বলছেন, "কমলা, সবুজ শাক, মরিচ, স্ট্রবেরি, স্যামন, টুনা, ফর্টিফাইড ইয়োগার্ট এবং দুধের মতো খাবারের মাধ্যমে ভিটামিন সি, ডি, বি-১২ এবং জিঙ্কের মতো প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজের যোগান নিশ্চিত করুন।"
পরিকল্পিত আহার
ব্যস্ত সময়সূচীর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমাদের সঠিক সময়ে খাওয়াই হয়ে ওঠে না। চল্লিশের পর এ প্রবণতা যেন আরও বাড়ে। এর ফলে এমনভাবে খাবারের পরিকল্পনা করা উচিত যেন ফাস্ট ফুড, চর্বিযুক্ত বা উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবারের বদলে হাতের কাছেই স্বাস্থ্যকর খাবার থাকে।
সুষম, ভারী খাবারের পরিবর্তে অনেকেই ক্যালরিবহুল নাশতায় খিদে মিটিয়ে থাকে। সওয়ার বলছেন, সেক্ষেত্রে খুব ভাল অপশন হতে পারে প্রোটিন শেক। এই খাবারটি চটজলদি বানানো যায়, ভিটামিন সি, ডি, বি -১২ এবং জিংকের মতো মিনারেল সমৃদ্ধ, আবার খেতেও সুস্বাদু।
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং
এ সময়ে ওজন কমাতে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে একটি সহায়ক উপায় হতে পারে 'ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং'। গোটা পৃথিবীতেই এই বিশেষ ডায়েটটি ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
এই ডায়েটে সপ্তাহে বা দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় না খেয়ে থাকতে হয়। ফলে প্রাকৃতিকভাবেই ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ কমে।
খাবারের ক্যালরি আমাদের শরীরে ফ্যাট হিসেবে জমতে শুরু করে। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের মাধ্যমে খাবারকে সম্পূর্ণরূপে হজম হতে সময় দেওয়া হয়। এতে দেহের মেটাবলিজমও স্বাভাবিক থাকে। শরীর ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে সারিয়ে তোলার সময় পায়। এককথায়, দেহের ইম্যুউন সিস্টেম নতুনভাবে তৈরী হয়।
তবে নতুন কোনো ডায়েটের পরিকল্পনা বা মেডিসিন গ্রহণের আগে ডায়েটিশিয়ান বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না যেন।
চল্লিশের পর দেহে নানা রোগ বাধার ঝুঁকি বেড়ে যায়। মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তাও যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ে। সম্ভব হলে কাজ থেকে বিরতি নিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়ে পড়ুন। জীবন আগের চাইতেও বেশি উপভোগ্য হয়ে উঠবে।
সূত্র- ইট দিস ডট কম