গারোদের ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু রান্না নিয়ে ঢাকায় ‘জাবা’
বেতের ট্রেতে করে নিয়ে আসা হয়েছে হরেকপদের ভাতমাছের তরকারি। একপাশে কলাপাতায় দড়ি দিয়ে মোড়ানো কাচকি মাছ, আরেকপাশে মাশরুম সবজির মিক্সড ভাজি, ওপরে ধনেপাতা ছিটানো। মাটির ছোটো পাত্রে রাখা চ্যাপা শুঁটকি আর টাকি মাছের ভর্তা, আছে মুরগীর মাংসের কষা ভুনা আর ডাল।
জিভে জল আনা হরেকরকম পদ দেখে কোনটা রেখে কোনটা আগে খাবো তা সত্যিই বোঝা দায়! তাই প্রথমেই নিয়ে নিলাম বিন্নি চালের সাদা ভাত। সাথে নিলাম এক চামচ চ্যাপা শুঁটকি ভর্তা আর মাশরুমের সবজি। আরেকপাশে চিকেন গপ্পার(মুরগির মাংসের কষা)এক চামচ, অন্যপাশে টাকি মাছের ভর্তা।
মাটির পাত্রে কলাপাতায় বিছানো এই লাল সাদা সবুজ পদের সমারোহ সত্যিই এনে দেয় এক পাহাড়ি আর কিছুটা গ্রামীণ আমেজ।
আর এই আমেজ পেতে হলে যেতে হবে ফার্মেগেটের আইবিএ হোস্টেলের পাশে গ্রিন সুপার ভিউ মার্কেটের তিন তলায় অবস্থিত 'জাবা রেস্তোরাঁ'য়।
এঞ্জেল চাকমা থাকেন রাজাবাজারেই। তিনি বলেন, 'এখানে এই নিয়ে তিনবার এলাম। প্রতিবারই ভিন্ন ভিন্ন আইটেম নিই। ভালোই লাগে। আর এখানকার খাবারের পরিবেশন এত সুন্দর যে, নতুন কেউ সাথে থাকলে আগে তাকে এখানে নিয়ে আসি।'
অফিসের সহকর্মীদের নিয়ে এসেছিলেন প্রিয়াংকা রেমা। তিনি বলেন, 'আমি এই প্রথম এলাম বন্ধুদের সঙ্গে। এর আগে হোম ডেলিভারি নিয়েছি। এখানকার খাবারে তেল মশলা কম থাকায় হেলদি হয় খাবারগুলো। তাছাড়া সুমন ভাই আমার পরিচিত হওয়ায় খাবারের মান নিয়েও ভাবিনা।'
ঢাকার মানুষদের সঙ্গে গারোদের খাবারকে পরিচিত করায় 'জাবা'-ই
ঢাকায় কিছু পাহাড়ি বা আদিবাসীদের খাবারের দোকান আছে। কিন্তু ঢাকার মানুষদের সঙ্গে গারোদের খাবারকে পরিচিত করিয়ে দেয় 'জাবা'-ই।
গারোদের ভাষায় 'জাবা' শব্দের অর্থ তরকারি। গারোদের ঐতিহ্যবাহী এবং হারিয়ে যাওয়া খাবারগুলো আবার পুনরায় ফিরিয়ে এনে মাত্র তিন বছরেই 'জাবা' হয়ে উঠেছে বিশ্বস্ত এক স্থান।
২০১৯ এর জানুয়ারিতে এই জাবা রেস্তোরাঁর পথচলা শুরু হয় সুমন নংমিনের হাত ধরে। এর আগে সুমন কাজ করতেন দি খ্রিস্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড ঢাকাতে (সংক্ষেপে ঢাকা ক্রেডিট)। সেখানে সাড়ে তিনবছর কাজ করার পর ২০১৯ এ শুরু করেন জাবা রেস্তোরাঁ।
নিজ জাতির প্রতি দায়িত্ব বোধ থেকে এই জাবার উৎপত্তি। সুমন বলেন 'এখন যোগাযোগ সুবিধার জন্য আমাদের অনেক বিষয় নিয়েই কাজ হচ্ছে। যেমন সঙ্গীত, সাহিত্যচর্চা, কস্টিউম, জুয়েলারি। তাই ভাবলাম, আমাদের খাবার নিয়ে তো আগে কোনো রেস্টুরেন্ট হয়নি। এটা নিয়ে করা যায়। তাছাড়া এখন মানুষ বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবার খুব পছন্দ করে।'
শুরুতে একটু ভয় থাকলেও, সুমনের বিশ্বাস ছিল মানুষ পছন্দ করবে। গতানুগতিক, চাইনিজ, মেক্সিকান, ফাস্টফুডের পাশে এরকম স্বাস্থ্যসম্মত তাজা এবং অন্যরকম রন্ধনশৈলী যদি ঠিকমতো পরিবেশন করা যায়, তবে তা মানুষের কাছে পৌঁছানো খুবই সহজ হবে।
তিনটি আদর্শ নিয়ে সুমন ২০১৯ সালে এই জাবার পথচলা শুর করেন। প্রথমত খাবারের মান হবে স্বাস্থ্যসম্মত, দ্বিতীয়ত আন্তরিক কাস্টমার সার্ভিস এবং তৃতীয়ত গারো সমাজের ঐতিহ্যবাহী এবং হারিয়ে যাওয়া রান্নাগুলো ফিরিয়ে আনা।
সংস্কৃতমনা মানুষ সুমন
ময়মনসিংহ জেলার ভালুকাপাড়া গ্রামেই তার জন্ম, শৈশব আর বেড়ে ওঠা। লেখাপড়াও সেখানেই। শুধু কলেজ ছিল নটরডেম কলেজ। এরপর ময়মনসিং আনন্দমোহন কলেজ থেকেই আবার ব্যবস্থাপনায় অনার্স মাস্টার্ করেছেন সুমন।
নিজ গোষ্ঠির মানুষদের নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন। ইচ্ছে, গারো সমাজের সংস্কৃতিকে শুধু নির্দিষ্ট অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ না রেখে ছড়িয়ে দেওয়া।
দেখে কোনোভাবেই চোখে পড়বে না
রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকার মধ্যে ফার্মগেট অন্যতম। সেখানে ভোর হওয়ার আগ থেকেই শুরু হয় মানুষের অফিসে যাওয়ার ছোটাছুটি, আবার সন্ধ্যায় পর ঢল নামে ঘরমুখো মানুষের। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং, কয়েকটি নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও একাধিক এলাকার সংযোগস্থলসহ বিভিন্ন কারণে ফার্মগেট খুবই পরিচিত এক শহর।
পুরো এলাকাটাই যান্ত্রিক আর কোলাহলপূর্ণ হওয়ায় তপ্ত রোদের থেকে মুক্তি পেতে একটু ঠান্ডা নিরিবিলি পরিবেশে বসে স্বস্তি ফেলার জায়গাও তেমন নেই এখানে।
সেরকম একটি জায়গায় 'জাবা' রেস্তোরাঁ সত্যিই এক প্রশান্তির জায়গা হয়ে উঠেছে গত তিন বছর ধরে। অফিস বা ইউনিভার্সিটির ফাঁকে এক ঘণ্টার জন্য 'জাবা'তে এসে দুপুরের খাবার খেলে পেটের যেমন ক্ষিদে মিটে, মনেও আনে প্রশান্তি।
কিন্তু কথায় বলে, আগে দর্শনবিচারী, পরে গুণবিচারী। কিন্তু মাঝে মাঝে ব্যতিক্রমী হতেই হয়। ফার্মগেটের আইবিএ হোস্টেলের পাশে গ্রিন সুপার ভিউ মার্কেটের তিনতলায় অবস্থিত 'জাবা রেস্তোরাঁ' ও সেরকমই ব্যতিক্রম। বাইরে থেকে এই খাবারের হোটেলটি কারও চোখে পড়ার মত নয়।
জাবার মালিক সুমন নংমিন বলেন, 'এরকম জায়গা হওয়ায় শুরুতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। তবে এখন পরিচিতি পেয়েছে। ফলে, যারা আসে তারা জাবার খোঁজেই আসে। রাস্তায় এর নাম দেখে হুট করে কেউ আসে না।'
মৌসুম অনুযায়ী চলে টাটকা এবং তাজা
সুমন চান, জাবা কোনো রেস্তোরাঁ নয়, বরং হয়ে উঠুক আপন এক পরিবেশ। তাছাড়া রান্না এবং বাজারের ব্যাপারেও সুমন বেশ সচেতন। খাবারের মেন্যু কার্ডে হরেক রকম খাবারের নাম দেওয়া থাকলেও প্রতিদিন প্রায় ১৫টির মতো খাবারের পদ রান্না হয়। যখন যে মৌসুম চলে, সে অনুযায়ী বাজার করা হয়।
ফ্রিজে রেখে কাস্টমারের চাহিদা পূরণের চেয়ে কাস্টমারকে টাটকা এবং তাজা সবকিছুই খাওয়াতেই বেশি পছন্দ করেন সুমন।
তাই বাজার করেন নিজ গ্রাম থেকে। সপ্তাহে দুইদিন ঢাকার বাইরে থেকে আসে বাজার। গারোদের খাবারের একদম আসল স্বাদটাই যেন ঢাকায় বসে কাস্টমার পায় সে চেষ্টা করেন।
রান্নাও করেন নিজেরা। সুমন নিজে, বোন রুমা নংমিন ও ভগ্নিপতি মিলেই বাসা থেকেই রান্না করে আনেন প্রতিদিন। রেস্টুরেন্টে অর্ডার অনুযায়ী গরম করে পরিবেশন বা পার্সেল করে দেওয়া হয় শুধু। তবে সুমন জানান, আন্তরিকতার ত্রুটি না থাকলেও চুলাগত কিছু তারতম্য থাকায় কিছুটা উনিশবিশ এসে যায় খাবারের স্বাদে।
শুধু গারো কুইজিনই পাওয়া যায়
এখানে সবচেয়ে বেশি চলে কলাপাতায় ছোটোমাছ, ফিশ উথেপা, চিকেন গপ্পা, হাঁস ব্যাম্বু শুট কষা, মাশ্রুম ভেজিটেবল ফ্রাই, চেপা শুটকি ভর্তা, টাকি মাছের ভর্তা এগুলোই। এছাড়া রয়েছে বিন্নি চাল। এই রান্নাগুলো কিন্তু একদমই তেল মশলা ছাড়া। যে কারণে ভর্তা থেকে শুরু করে তাদের তরকারিগুলো হয় একটু শুকনো হয়।
টাকি মাছের ভর্তার জন্য মাছ, মরিচ আর পেঁয়াজ আগে শিকে ভরে আগুনে পোড়ানো হয়। এরপর শিলনোড়ায় পিষে ভর্তা বানানো হয়। আবার কাস্টমার যদি চান তবে হাল্কা করে মাছটা ভেজে নয়ে এরপর ভর্তা বানানো হয়।
আবার লাউয়ের সঙ্গে মাছের মাথা রান্না করে যে ফিশ কারি রান্না হয়, সেটাও সম্পূর্ণ তেল মশলা ছাড়া একটু ঝাল ঝাল হয়। আবার বাসক পাতা দিয়ে কুচ্চে মাছ রান্না করা হয়। চিকিৎসকরাও নাকি এই মাছ খাবার পরামর্শ দেন।
গারোদের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার 'ফিশ উথেপা'। গারো ভাষায় উথেপা মানে ভাপ দেওয়া। ভাপে রান্না হয় গন্ধ কিছুটা রয়ে যায়। বাঙ্গালীদের চেয়ে গারোদের মধ্যে এ খাবারের চল বেশি।
জাবা'র ভেজিটেবল আইটেমও চলে অনেক। বিশেষ করে মাশরুম ভেজিটেবল ফ্রাইটা বেশি চলে। চাকমাদের মতো গারোরা সবজির পাচন রান্না করেনা। বরং মৌসুম অনুযায়ী পাহাড়ি সবজি আলাদা আলাদা রান্না করা হয়। যেমন, পেঁপের ফুল, হলুদের ফুল, কাক্কু পাতা ফ্রাই। কিংবা দু একটি সবজি একসঙ্গে মিশিয়ে রান্না।
আবার চালের গুড়ি দিয়ে রান্না চিকেন কারির স্বাদ কিছুটা হালিমের মতো। সুমন জানান, মাংসের চেয়ে চালের গুড়োর ঝোলই বেশি সুস্বাদু খেতে।
আরেকটি হলো ব্যাম্বু শুট। বর্ষাকালে যখন মাটি ভেদ করে উঠে আসে তখন বাঁশের সেই কচি অংশ তুলে এনে রান্না করা হয়। খেতেও নরম, স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী খুব।
এখানকার একটি বিশেষ আইটেম হলো বেল চা। যা অন্য কোথাও পাওয়া যায়না। বেল যখন কচি থাকে, তখন কুচি কুচি করে কেটে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। পরে জ্বাল দিয়ে চা রান্না হয়।
তবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা এখানে বড় শামুকের মাংসের। কিন্তু সবসময় পাওয়া যায়না এটি। সুমন বলেন, 'বড় শামুকের দামও অনেক এবং রান্নাও কষ্টসাধ্য। এক মণ শামুক ভাঙ্গার পর এক কেজির মতো মাংস পাওয়া যায়। এজন্য অনেক কষ্ট হয়ে যায়।'
তবে সুমন জানান, ঢাকায় আরও দুয়েকটি পাহাড়ি খাবারের হোটেল থাকলেও, শামুকের মাংস কেবল জাবাতেই পাওয়া যায়।
গারোদের খাবারের সঠিক স্বাদ দেওয়ার জন্য এখানে অনেক পদ রান্না হয় কয়লার আগুনে।
ঢাকার রেস্তোরাঁগুলোতে ইদানিং ওয়েলকাম ড্রিংক দেওয়া হয়। ব্যতিক্রম নেই এখানেও। তবে ওয়েলকাম ড্রিংকের কদর এখানে বেশি। খুব সুস্বাদু হয় বলে, কাস্টবার একবার খেয়ে তৃপ্ত হোন না। কয়েকবার খাওয়ার আবদার করে বসেন।
মৌসুমি ফল দিয়ে তৈরি যেকোনো ফলের স্কোয়াশ সত্যিই বাইরের খরতাপ থেকে মনকে আর মগজকে করবে শান্ত, স্থির।
সংস্কৃতিমনা, ভ্রমণপিপাসু বা শিল্পপ্রেমীদের আনাগোনা
বসার জন্য রয়েছে বাঁশ–বেত দিয়ে তৈরি মোড়া ও চেয়ার–টেবিল। অন্দরসজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে নানা তৈজসপত্র। দেয়ালে ঝোলানো ছবিতে ঘন শালবনের দৃশ্য। কোনো কোনো ছবিতে গারো গ্রামের মানুষের কর্মব্যস্ততার চিত্র স্পষ্ট। আরেক দেয়ালে টাঙ্গানো মহিষের শিংয়ের তৈরি মিউজিক ইন্সট্রুমেন্ট 'আদুরি'।
যদিও খুব ছোট্ট একটি জায়গা কিন্তু যারা ব্যক্তিক্রমী, গতানুগতিক ধারার বাইরে যেতে ভালোবাসেন তাদের জন্য একটি আস্থার জায়গার নাম 'জাবা'।
একে তো খাবারের দাম তুলনামূলক শহরের অন্যান্য আদিবাসী হোটেলগুলোর তুলনায় হাতের নাগালে। দ্বিতীয়ত খাবারের মান এবং আপ্যায়ন নিয়ে কোনো কার্পণ্যও নেই। সুতরাং কাস্টমার এখানে একবার খাওয়ার পর দ্বিতীয়বার যে আবার আসবেন তা বলা যায়।
ঢাকায় যেসব পাহাড়ি বা আদিবাসী খাবারের রেস্তোরাঁ আছে তারমধ্যে জাবা তেমন একটা পরিচিত না হলেও, স্বাদে, মানে, গুণে জাবা কাস্টমারের রসনা তৃপ্তিতে কোনো কমতি রাখেনি।
আগে জাবা ছিল ফার্মগেটের রাস্তার ওপাশে, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে একটু পশ্চিম দিকে ডান দিকের ১০তলা ভবনের চতুর্থ তলায়। বর্তমানে এটি আইবিএ হোস্টেলের পাশে গ্রিন সুপার ভিউ মার্কেটের তিন তলায় চলে এসেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্কৃতমনা ব্যক্তিরা, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও আসেন এখানে আড্ডা দিতে। তবে সব শ্রেনীর মানুষের পা এখানে পড়ে না।
তবে সুমন জানান, শীতে বেশি আসেন তার কাস্টমার। ঠান্ডা পরিবেশে ধোঁয়া ওঠা, গরম ভাপের রান্না শরীর আর মনকে দেয় তৃপ্তি।
দুপুর-রাতের খাবারের পাশাপাশি আছে নাশতাও
আছে নানা ধরনের পানীয়। বিভিন্ন ফলের রস, বেল–চা, তেঁতুল–চা বেশ জনপ্রিয়। আছে গারোদের বাহারি পিঠা। সন্ধ্যেবেলায় প্রায় আরণ্যক পরিবেশে, কাচঘেরা ঘরটিতে বাজতে থাকে গারোদের গান।
টাঙ্গাইলের মধুপুরে সবচেয়ে বেশি গারো জনগোষ্ঠীর সদস্যের বাস। এ ময়মনসিংহ ছাড়াও টাঙ্গাগাইল, সিলেট ও সুনামগঞ্জে গারোদের বসবাস আছে। গারোদের খাবারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, এতে তেল ও মসলার ব্যবহার খুব কম।
জাবায় যেসব খাবার বেশি চলে, সেগুলোর প্রায় সবই তেল ও মসলামুক্ত। কিন্তু সাধারণ বাঙ্গালীরা তেল মশলাহীন খাবার খেয়ে অভ্যস্ত বলে, নামেমাত্র তেল ব্যবহার করা হয় এখানে। কেউ যদি একদম গারোদের মতো খেতে চায়, তবে তাকে সেভাবেই রান্না করে দেওয়া হবে।
আছে হোম ডেলিভারির সুযোগ
ডাইন-ইন তো আছেই, খাবার অনলাইনে বা ফোনের মাধ্যমে অর্ডার আসে প্রচুর। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে আশেপাশের মণিপুরিপাড়া, ইন্দিরা রোড, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মোস্তফা রোড, স্কয়ার হাসপাতাল, জাহানারা গার্ডেন, ম্যাবস গলি, তেজতুরি বাজার, তেজকুনি পাড়া, নাখাল পাড়া, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, জাতীয় সংসদ ভবন, ঢাকা সেনানিবাস, বসুন্ধরা সিটি, রাজাবাজার পর্যন্ত খাবারের অর্ডার আসে।
দৈনিক পার্সেলের অর্ডার আসে ১৫- ২০ টি। তবে নিকেতন, বসুন্ধরা, গুলশান, রামপুরার মতো দূরবর্তী জায়গাগুলো থেকে অর্ডার এলেও পাঠাও বা ফুডপান্ডার ডেলিভারি চার্জের কারণে মাঝে মাঝে অর্ডার ক্যন্সেল হয়ে যায়।
শুধু অর্ডার নয়, আগে থেকে জানিয়ে দেওয়া যায় পছন্দের মেন্যু। তবে অবশ্যই মৌসুম অনুযায়ী খাবারের অর্ডার নেওয়া হয়।
যেহেতু পার্সেলের অর্ডারও আসে, তাই প্রতিদিন ২০ জনের থেকে ৪০ জনের জন্য রান্না হয় জাবার উনুনে। সংখ্যার দিক থেকে কাস্টমার সংখ্যা খুব বেশিও না। তবে একসাথে ২০-২৫ জন বসতে পারে এরকম ছোট্ট একটি কক্ষ হওয়ায়, কাস্টমারদের ভিড় লেগেই থাকে এখানে।
দুপুর একটা বাজলেই ভিড় বাড়তে শুরু করে, চারটার পর মোটামোটি খালি হয়ে যায়। আবার ৫-৬ টা থেকে ধীরে ধীরে কাস্টমার আসতে শুরু করে। রাত ১১টা অবধি চলতে থাকে আসা আর যাওয়া।
বিদেশিরাও আসে এখানে। স্কটল্যান্ডের একজন ভ্লগার এমা এসেছিলেন, এখানকার ওপর ভ্লগও করে গেছেন। তবে ২৫-৩০ বছর বয়সীদের আনাগনাই বেশি বলে দাবি সুমনের বোন রুমা কংমিনের।
ছোটোবেলায় এক স্টেশনারী দোকানদারকে দেখতেন, অন্যদের চেয়ে তুলনামূলক কম দাম রাখতে। যেকারণে ঐ দোকানে কাস্টমার আস্তো বেশি। সুমন মনে মনে এই ধারণাটিকেই পুঁজি করে আছেন। একে তো ভালো মানের খাওয়া, তার ওপর দামটাও যদি কম রাখা যায় তবে মানুষ আসবে বেশি।
ভবিষ্যতে ইচ্ছে আছে আরও শাখা বাড়ানোর
সুমন নংমিন, রুমা নংমিন এবং বাদল নংমিন তিন ভাই বোন। বোন রুমা এবং তার স্বামীও কাজ করে এখানে। রান্না থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্র্যান্ডিংয়ের সব কাজই এই চারজন মিলে থাকেন।
ভবিষ্যতে ইচ্ছে আছে আরও শাখা বাড়ানোর। তবে বিশ্বস্ত সহকর্মী পাওয়া কঠিন বলে মনে করেন তিনি। আরেক ভাই বাদল থাকেন শেরপুরে। সুমন স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে ফার্মগেটেই থাকেন বোনের সঙ্গে।
'জাবা রাঁচি'
তাছাড়া 'জাবা রাঁচি' নামে একটি অনলাইন পেজ আছে তাদের। গারো ভাষায় রাঁচি মানে হলুদ। বিভিন্ন অর্গানিক খাদ্যসামগ্রী নিয়ে কাজ করছে রাঁচি।
রাচিতে প্রথম পেঁপে পেয়ারা, কলা, আনারস, শিমুল আলু, পাহাড়ি ফল, এগুলো মধুপুর থেকে এনে বিক্রি করা হতো। হাওড়ের মাছও আনা হতো।
কিন্তু এগুলো পচনশীল হওয়ায় তুলনামুলকভাবে বেশিদিন রাখা যায় এমন খাদ্যদ্রব্য যেমন, পাহাড়ি মধু, ময়মনসিংহের চ্যাপা শুঁটকি, ঘি, আচার, দই বিক্রি করছে এখন রাঁচি। এছাড়া আছে জাবার ইউটিউব চ্যানেল। সেখানে গারোদের বিভিন্ন সংগীত তুলে ধরা হয়।